রূপালি পর্দার আড়ালে অভিনেতাদের জীবন কেমন, তা নিয়ে দর্শকদের মনে কৌতূহল চিরন্তন। বিশেষ করে উৎসবের মৌসুমে, যখন দর্শকরা নতুন নতুন কাজ উপভোগের অপেক্ষায় থাকেন, তখন শিল্পীদের ব্যস্ততা বেড়ে যায় বহুগুণ। সম্প্রতি এক কথোপকথনে এমনই এক বাস্তবতার চিত্র তুলে ধরলেন জনপ্রিয় অভিনেতা জুনায়েদ বোগদাদী। চলমান শুটিঙয়ের তীব্র ব্যস্ততার মাঝেই তার সাথে যোগাযোগ করা হলে, তিনি জানান উৎসবকেন্দ্রিক কাজের চাপ কতটা অপ্রতিরোধ্য হতে পারে।
ব্যস্ততার ঘূর্ণিঝড়ে জুনায়েদ বোগদাদী: উৎসবের আগে দম ফেলারও ফুরসত নেই
কথোপকথনের শুরুতেই চারপাশে ভেসে আসা কোলাহলপূর্ণ শব্দের উৎস জানতে চাইলে, জুনায়েদ বোগদাদী তৎক্ষণাৎ উত্তর দেন, “আমি এখন শুটিংয়ে। চারপাশে কোলাহল, কাজের তুমুল ব্যস্ততা।” তার কণ্ঠস্বরে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছিল যে তিনি শত ব্যস্ততার মধ্যেও অত্যন্ত পেশাদারিত্বের সাথে কথা বলছেন। জানা গেল, সামনে আসছে ভালোবাসা দিবস এবং পবিত্র ঈদ – এই দুটি বিশেষ উপলক্ষকে কেন্দ্র করে টেলিভিশন নাটকের কাজ এখন তুঙ্গে। ফলস্বরূপ, তার মতো অভিনেতাদের ওপর কাজের চাপ অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে গেছে, এমন এক পরিস্থিতি যেখানে এক মুহূর্তের জন্য দম ফেলারও সময় পাওয়া কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে।
আলোচনার মাঝে আকস্মিকভাবেই তাকে থামতে হয়। তিনি হাসতে হাসতে স্বীকার করেন, “সত্যি বলতে কি, শুটিং থামিয়ে আপনার সাথে কথা বলছি। সূর্য ঢলে যাচ্ছে, দিনের আলো কমে আসছে। সেটের সবাই অধীর আগ্রহে আমার ফেরার অপেক্ষা করছে। আমার দৃশ্যটি শেষ হলেই পুনরায় শুটিং শুরু হবে। আমি এক্ষুনি দৃশ্যটি শেষ করে আপনাকে ফোন দিচ্ছি।” এই কথাগুলোই একজন অভিনেতার পেশাগত জীবনের তীব্র দায়বদ্ধতা ও সময়ানুবর্তিতার চিত্র স্পষ্ট করে তোলে।
প্রায় ৫০ মিনিট পর আবারও তার সাথে যোগাযোগ করা হয়। ততক্ষণে তার ব্যস্ততা যেন আরও তীব্র রূপ নিয়েছে। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, “বললাম না ভাই, কখনো কখনো দম ফেলার সময় থাকে না। পাঁচ মিনিটের জন্য ফোন বের করে কথা বলারও সুযোগ হয়ে উঠছিল না।” তিনি আরও যোগ করেন, শীতের দিনগুলোতে দিনের আলো এমনিতেই খুব কম থাকে। সূর্যালোক চোখের পলকে মিলিয়ে যায়, দিনে হয়তো মাত্র চার-পাঁচ ঘণ্টা কার্যকর আলো পাওয়া যায়। এই সীমিত সময়ের মধ্যে সর্বোচ্চ আউটপুট বের করার জন্য দ্রুত গতিতে কাজ করতে হয়। এ কারণেই প্রতিটি মুহূর্ত মূল্যবান, আর বিরতি পেলেই তিনি কথা বলার সুযোগটি লুফে নিচ্ছেন। প্রয়োজনে আবারও বিরতিতে কথা বলার প্রতিশ্রুতি দেন তিনি।
শীতের চ্যালেঞ্জ: কেন অভিনেতারা “সূর্য চলে যাচ্ছে” বলে হাহাকার করেন?
অভিনয়শিল্পীদের মুখে প্রায়শই শোনা যায় এই পরিচিত উক্তিটি – “সূর্য চলে যাচ্ছে, দম ফেলার সময় নেই।” কিন্তু শীতকালে এই তাড়াহুড়ো বা অস্থিরতা কেন আরও বেশি তীব্র হয়, সে প্রসঙ্গে জুনায়েদ বোগদাদী ব্যাখ্যা করেন। তিনি বলেন, “হ্যাঁ, শীতকালে এটা সবাইকেই গভীরভাবে অনুভব করতে হয়।” একটি নাটকে সাধারণত ২০ থেকে ২৪টি দৃশ্য থাকে, যার মধ্যে এক দিনে ১২-১৩টি দৃশ্যের শুটিং করা রীতিমতো কঠিন কাজ। এর ওপর বর্তমানে নাটকে আলাদা করে গানের দৃশ্যের জন্য শুটিং করতে হয়, যেখানে বিশেষভাবে সময় ও শ্রম বিনিয়োগ করতে হয়। এই গান শুটিঙয়ের জন্য আলাদা করে আলোর ব্যবস্থা করা, শিল্পীদের মেকআপের সময়, এবং নির্দিষ্ট লোকেশনে পৌঁছানোর মতো বিষয়গুলো যোগ হয়ে দুপুরের পর থেকেই সেটে এক ধরনের তীব্র চাপ সৃষ্টি হয়।
পরিকল্পনা বনাম বাস্তবতা: শুটিঙয়ের জটিল সমীকরণ
শুধুমাত্র সঠিক পরিকল্পনা এবং নির্ধারিত সময়ে শুটিং শুরু করলেই কি এই সমস্যার সমাধান করা সম্ভব নয়? এমন প্রশ্নের জবাবে জুনায়েদ বোগদাদী একটি গভীর সত্য উন্মোচন করেন। তিনি বলেন, “আগে শুটিং শুরু করে আগে শেষ করব, বিষয়টা কিন্তু কেবল এতটুকু নয়।” মূলত, চলচ্চিত্র বা নাটকের নির্মাণ প্রক্রিয়া কেবল একটি সুনির্দিষ্ট সময়সূচীর উপর নির্ভরশীল নয়। বরং এর সাথে জড়িয়ে থাকে বিভিন্ন কারিগরি দিক, সৃজনশীলতার চাহিদা, সহশিল্পীদের প্রাপ্যতা, অপ্রত্যাশিত প্রাকৃতিক পরিবর্তন এবং যন্ত্রাংশের সুষ্ঠু সমন্বয়। অনেক সময় একটি দৃশ্যের জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি, যেমন – আলো, সেট ডিজাইন বা শিল্পীদের মনস্তাত্ত্বিক প্রস্তুতি নিতেই অনেকটা সময় চলে যায়। এই জটিল প্রক্রিয়াগুলোর সূক্ষ্ম সমন্বয় সাধন করতে গিয়েই অনেক সময় কেবল “আগে শুরু করা” সমাধান হিসেবে যথেষ্ট হয় না। বিশেষ করে শীতের দিনে যখন প্রাকৃতিক আলো সীমিত, তখন প্রতিটি দৃশ্য ধারণের জন্য অধিকতর সূক্ষ্মতা ও গতিময়তার প্রয়োজন হয়, যা কেবলমাত্র সময়সীমা মেনে চলার চেয়েও অনেক বেশি কিছু দাবি করে।
