More

    সালমান-মৌসুমী ও শাবনূর ইস্যুতে যা জানালেন মনসুর আলী

    ১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর, ঢাকাই সিনেমার আকাশ থেকে এক উজ্জ্বল নক্ষত্রের আকস্মিক পতন ঘটেছিল। রহস্যময় পরিস্থিতিতে অকালে বিদায় নেন তৎকালীন সময়ের সবচেয়ে জনপ্রিয় চিত্রনায়ক সালমান শাহ। সেসময় তার মৃত্যুকে প্রাথমিকভাবে ‘আত্মহত্যা’ বলে চালিয়ে দেওয়া হলেও, অভিনেতার পরিবার শুরু থেকেই এটিকে একটি সুপরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড হিসেবে দাবি করে আসছিল। দীর্ঘ আড়াই দশকেরও বেশি সময় ধরে চলা এই আইনি লড়াই ও রহস্যের জট অবশেষে নতুন মোড় নিয়েছে। আদালত সম্প্রতি এই মৃত্যুকে হত্যা মামলা হিসেবে বিচার প্রক্রিয়া চালিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন, যা সালমান শাহের অগণিত ভক্ত ও পরিবারকে নতুন আশার আলো দেখাচ্ছে।

    হত্যা মামলা এবং অভিযুক্তদের তালিকা

    আদালতের এই যুগান্তকারী নির্দেশের ফলে সালমান শাহের মৃত্যু এখন আনুষ্ঠানিকভাবে একটি হত্যা মামলা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। এই মামলার প্রধান অভিযুক্তদের তালিকায় রয়েছেন সালমান শাহের সাবেক স্ত্রী সামিরা হক, চলচ্চিত্র প্রযোজক ও ব্যবসায়ী আজিজ মোহাম্মদ ভাই, অভিনেতা ডনসহ মোট ১১ জন। তাদের বিরুদ্ধে এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ আনা হয়েছে, যার তদন্ত এখন নতুন করে শুরু হবে।

    পিবিআইয়ের প্রাথমিক রিপোর্ট এবং নীলা চৌধুরীর নারাজি

    এর আগে, এই চাঞ্চল্যকর মৃত্যুর তদন্তের দায়িত্বে ছিল পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। পিবিআই তাদের তদন্ত শেষে রিপোর্ট পেশ করে জানিয়েছিল যে, সালমান শাহ আত্মহত্যাই করেছিলেন, এটি কোনো হত্যাকাণ্ড ছিল না। তবে, সালমান শাহের মা, নীলা চৌধুরী, পিবিআইয়ের এই তদন্তের নিরপেক্ষতা নিয়ে তীব্র অসন্তোষ প্রকাশ করেন। তিনি অভিযোগ করেন যে, তদন্তে সঠিক তথ্য উঠে আসেনি। ফলস্বরূপ, ২০২১ সালে তিনি আদালতে ‘নারাজি’ আবেদন জমা দেন, যা এই মামলাকে নতুন করে আলোতে আনার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। নীলা চৌধুরীর অবিচল সংগ্রাম এবং আইনি লড়াইয়ের ফলেই আজ এই মামলার গতিপথ পরিবর্তিত হয়েছে।

    গুঞ্জন, প্রেম এবং সহযোগী মনসুর আলীর বক্তব্য

    সালমান শাহের ব্যক্তিগত জীবন নিয়েও দীর্ঘকাল ধরে নানা গুঞ্জন চলে আসছে। ঢালিউড অভিনেত্রী শাবনূরের সঙ্গে সালমান শাহের কথিত প্রেমের সম্পর্ক ছিল এবং এই সম্পর্কের কারণেই সালমান-মৌসুমী জুটির ভাঙন ধরেছিল—এমন একটি ধারণা জনমনে প্রচলিত ছিল। এই পুরনো গুঞ্জনের সত্যতা নিয়ে সম্প্রতি মুখ খুলেছেন সালমান শাহের দীর্ঘদিনের ব্যক্তিগত সহকারী মনসুর আলী। একটি গণমাধ্যমের সাক্ষাৎকারে তিনি এই বিষয়গুলো নিয়ে খোলাখুলি কথা বলেছেন, যা তার সময়ের অন্যতম আলোচিত তারকার ব্যক্তিগত জীবন সম্পর্কে নতুন কিছু ধারণা দিচ্ছে।

    মনসুর আলী তার সাক্ষাৎকারে সালমান শাহের চরিত্র ও কর্মপদ্ধতি সম্পর্কে বিশদ বর্ণনা দেন। তিনি বলেন, “সালমান শাহ ছিলেন অত্যন্ত ভদ্র, বিনয়ী, কঠোর পরিশ্রমী এবং পরিবারের প্রতি নিবেদিত একজন মানুষ। তার কাছে পরিবার ছিল সবকিছুর ঊর্ধ্বে।” শুটিং শেষ হওয়ার পর তিনি কখনো অপ্রয়োজনীয় আড্ডায় সময় নষ্ট করতেন না; বরং দ্রুত বাসায় ফিরে যাওয়ার জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়তেন। মনসুর আলী জোর দিয়ে বলেন, “আমি সাড়ে চার বছর ধরে সালমান ভাইয়ের সঙ্গে ছায়ার মতো লেগে ছিলাম। এই পুরো সময়টায় আমি তাকে নারীদের প্রতি অত্যন্ত শ্রদ্ধাশীল দেখেছি।”

    শাবনূরের সঙ্গে তার সম্পর্কের বিষয়ে তিনি দৃঢ়তার সঙ্গে উল্লেখ করেন, “শুধু শাবনূর কেন, তিনি কোনো নায়িকাকেই কখনো কুনজরে দেখতেন না বা তাদের সঙ্গে অহেতুক মাখামাখি করতেন না। শুটিংয়ের বাইরে কারও সঙ্গে বসে আড্ডা দেওয়ার প্রশ্নই উঠত না।” মনসুর আলী আরও বলেন যে, সালমান শাহ এবং শাবনূরের সম্পর্ক ছিল ভাইবোনের মতো পবিত্র। তিনি স্মরণ করিয়ে দেন, শাবনূরকে প্রথম দেখেই সালমান শাহ বলেছিলেন, “আমার তো কোনো বোন নেই, তুমি আমার ছোট বোনের মতো।” মনসুর আলীর এই বক্তব্য দীর্ঘদিনের প্রচলিত একটি গুঞ্জনকে অনেকটাই মিথ্যা প্রমাণ করে দিচ্ছে এবং সালমান শাহের পেশাদারী ও ব্যক্তিগত সততার উপর জোর দিচ্ছে। তার মতে, সালমান শাহের জীবনে এমন কোনো অনৈতিক সম্পর্ক ছিল না যা তার পারিবারিক বা সামাজিক অবস্থানের পরিপন্থী হতে পারে।

    Recent Articles

    Related Stories

    Leave A Reply

    Please enter your comment!
    Please enter your name here