More

    ভারতের সবচেয়ে বিপজ্জনক দল বিজেপি, বললেন অভিনেতা

    জনপ্রিয় অভিনেতা কৌশিক সেন, যিনি শুধুমাত্র একজন সুদক্ষ শিল্পী হিসেবেই নন, বরং তার তীক্ষ্ণ বুদ্ধি ও সমাজ-রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে নির্ভীক মন্তব্যের জন্যও সমাদৃত, সম্প্রতি এক গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষাৎকারে ভারতের বর্তমান রাজনৈতিক দৃশ্যপট এবং ভবিষ্যৎ নিয়ে নিজের সুচিন্তিত ও অকপট মতামত তুলে ধরেছেন। এই আলোচনা কেবল তার সাম্প্রতিক চলচ্চিত্র কেন্দ্রিক ছিল না, বরং তার গভীরতর দার্শনিক চিন্তাভাবনা এবং দেশের রাজনৈতিক চালচিত্রের উপর তার সূক্ষ্ম বিশ্লেষণকেও স্পর্শ করেছে।

    শিল্প ও জীবনের দর্শন: মঞ্চের প্রতি টান এবং স্বতন্ত্র ভাবনা

    সদ্য মুক্তিপ্রাপ্ত তার ছবি ‘স্বার্থপর’-এর প্রসঙ্গে কথা বলতে গিয়ে, যেখানে তিনি এক ধূসর এবং জটিল চরিত্রে অভিনয় করে দর্শকদের মন জয় করেছেন, কৌশিক সেন জানান যে তার শিল্পীসত্তার গভীরতম ইচ্ছা হলো একদিন শুধু মঞ্চ অভিনয় ও পরিচালনায় সম্পূর্ণ মনোযোগ দেওয়া। এই বক্তব্য তার দীর্ঘদিনের শিল্পসত্ত্বার প্রতি দায়বদ্ধতা এবং এক প্রকার শুদ্ধতার অন্বেষণকেই তুলে ধরে।

    সাক্ষাৎকারে তিনি তার ব্যক্তিগত দার্শনিক দৃষ্টিভঙ্গিও তুলে ধরেন। কৌশিক সেনের মতে, একজন মানুষের চিন্তাভাবনা যত পরিপক্ক ও সমৃদ্ধ হয়, তার ব্যক্তিগত জগৎ তত সংকুচিত হতে থাকে। স্বতন্ত্র ও অপ্রথাগত চিন্তাভাবনার কারণে হয়তো চারপাশের মানুষের ভিড় কমে যায়, তবে এতে তিনি বিন্দুমাত্র ক্ষতির সম্মুখীন হন না বলে মনে করেন। বিশেষ করে একজন মঞ্চ অভিনেতা হিসেবে তিনি নিজেকে কখনোই কোনো ‘কাচের ঘরে বন্দি’ মনে করেন না, বরং তার শিল্প তাকে আরও বেশি স্বাধীনতা দেয়। এই উক্তি তার মুক্তচিন্তা এবং আত্মনির্ভরশীলতার পরিচায়ক।

    রাজনৈতিক বিতর্ক থেকে সরে আসা: দলতন্ত্রের ঊর্ধ্বে সমস্যা

    রাজনীতি ও সমাজের বিভিন্ন স্পর্শকাতর বিষয়ে মতামত প্রকাশ প্রসঙ্গে কৌশিক সেন তার পূর্ববর্তী অবস্থান থেকে সরে আসার কারণ ব্যাখ্যা করেন। একসময় তিনি টেলিভিশন চ্যানেলের বিতর্কসভাগুলিতে নিয়মিত অংশগ্রহণ করলেও, বর্তমানে তিনি সে পথ পরিহার করেছেন। তিনি অকপটে জানান, এই বিতর্কগুলিতে মূল সমস্যাটি আড়ালে চলে গিয়ে কেবল রাজনৈতিক দলগুলির (যেমন তৃণমূল, বিজেপি, সিপিএম) বক্তব্যই প্রাধান্য পায়, যা তার কাছে অর্থহীন মনে হয়।

    কৌশিক সেন জোর দিয়ে বলেন যে, বাস্তব সমস্যাগুলি দলীয় রাজনীতির সংকীর্ণ সীমারেখার অনেক ঊর্ধ্বে। তিনি আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটের কথাও উল্লেখ করেন— সারা বিশ্ব জুড়ে চলমান যুদ্ধ, বিশেষ করে গাজায় সংঘটিত বীভৎসতার মতো ঘটনাগুলির সামনে আমাদের ব্যক্তিগত মতামত বা বিতর্কসভায় দেওয়া বক্তব্য কতটা মূল্যহীন, সে প্রশ্ন তিনি তুলে ধরেন। তার মতে, এইসব বৃহৎ মানবতাবিরোধী ঘটনার ক্ষেত্রে দলীয় বিতর্ক একেবারেই অপ্রাসঙ্গিক।

    ক্ষমতাসীনদের সমালোচনা ও প্রতিবাদের ভাষা

    ক্ষমতাসীন দলগুলির প্রতি কৌশিক সেনের মন্তব্য ছিল অত্যন্ত সরাসরি। তিনি উল্লেখ করেন যে, দেশে বিজেপি এবং রাজ্যে তৃণমূল কংগ্রেস ক্ষমতায় রয়েছে। স্বভাবতই, তারা মনে করে যে দেশের এবং রাজ্যের সকল মানুষই তাদের দাসানুদাস। কিন্তু কৌশিক সেন এই ধারণার তীব্র বিরোধিতা করেন। তিনি একইসাথে বিরোধীদের ভূমিকারও সমালোচনা করে বলেন, অনেক সময়ে বিরোধীরাও ঠিক করে দেয় যে, মানুষের প্রতিবাদের ভাষা কেমন হবে বা কোন পথে হবে। এই একপেশে মনোভাবের পরিবর্তে তিনি জোর দেন যে, মানুষকে তার নিজস্ব ভাষায় এবং স্বাধীনভাবে কথা বলার সুযোগ দিতে হবে। সমাজের প্রতিটি স্তরের মানুষের আত্মপ্রকাশের স্বাধীনতা থাকা উচিত।

    আসন্ন নির্বাচন ও দলগুলির মূল্যায়ন: জনগণের বিবেচনাই শেষ কথা

    আগামী বছরের বিধানসভা নির্বাচনকে সামনে রেখে কৌশিক সেন দেশের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলির একটি তীক্ষ্ণ ও সমালোচনামূলক বিশ্লেষণ উপস্থাপন করেছেন। তার মতে, ভারতীয় জনতা পার্টি (BJP) হলো ‘সবচেয়ে বিপজ্জনক দল’। তিনি তৃণমূল কংগ্রেসকে ‘সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত’ বলে আখ্যায়িত করেন। অন্যদিকে, সিপিএম এবং কংগ্রেসের অবস্থানকে তিনি ‘বিভ্রান্তিতে থাকা’ দল হিসেবে বর্ণনা করেন। তার মতে, এই দুই দল ভোটের সময়ে জোট বাঁধলেও, তাদের মধ্যে সবসময় সংশয় ও দ্বিধা কাজ করে।

    শেষ পর্যন্ত কৌশিক সেন দৃঢ়ভাবে বলেন যে, দেশের ভবিষ্যৎ নির্মাণের ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ভার সম্পূর্ণরূপে সাধারণ মানুষের উপর। মানুষকেই সমস্ত দিক বিবেচনা করে তাদের প্রতিনিধি বেছে নিতে হবে— এটিই তার মূল বার্তা। তার এই বিশ্লেষণ বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে এক স্বতন্ত্র ও সাহসী কণ্ঠস্বরের প্রতিচ্ছবি।

    Recent Articles

    Related Stories

    Leave A Reply

    Please enter your comment!
    Please enter your name here