জনপ্রিয় রিয়েলিটি শো ‘বিগ বস’-এর উনিশতম মৌসুম বর্তমানে তার অর্ধেক পথ অতিক্রম করে জমে উঠেছে। প্রতিযোগিতার গতিপ্রকৃতি এবং প্রতিযোগীদের মধ্যে সম্পর্কের জটিলতা ক্রমশ স্পষ্ট হয়ে উঠছে। তবে এবারের আসরে, সঞ্চালক সালমান খান বেশ কয়েকবার তাঁর বেফাঁস মন্তব্যের কারণে দর্শকদের সমালোচনার মুখে পড়েছেন। সম্প্রতি, ‘বিগ বস’-এর প্রতিযোগী ফারহানা ভাটকে নিয়ে করা তাঁর একটি মন্তব্য নতুন করে বিতর্কের জন্ম দিয়েছে, যা নিয়ে সংবাদমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চলছে তীব্র আলোচনা। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম হিন্দুস্তান টাইমস এই খবর নিশ্চিত করেছে।
বিতর্কের সূত্রপাত: আশনূরের অভিযোগ এবং সালমানের ব্যঙ্গাত্মক মন্তব্য
বিতর্কের সূত্রপাত হয় ‘বিগ বস’-এর এক সাম্প্রতিক পর্বে, যেখানে আরেক প্রতিযোগী আশনূর কৌর, সঞ্চালক সালমানের কাছে ফারহানা ভাট সম্পর্কে অভিযোগ করেন। আশনূরের মূল অভিযোগ ছিল, “ফারহানা ঘরের মধ্যে নেতিবাচকতা ছড়াচ্ছে। বিগ বসের বাইরের জগতেও কি ফারহানা এমনটাই আচরণ করেন?” আশনূরের এই কথায় সায় জানিয়ে সালমান খান অত্যন্ত ব্যঙ্গাত্মকভাবে একটি মন্তব্য করেন, যা দ্রুত আলোচনার কেন্দ্রে চলে আসে। তিনি বলেন, “ফারহানার যখন বিয়ে হবে, তখন তার পরিবারের সদস্যরা যখন পাত্রী হিসেবে ওর খোঁজখবর নেবে, তখন কী বলবে? ‘ওহ, এই মেয়েটি তো গালিগালাজ দেয়! ঝগড়া করে। প্লেট ভাঙে, ঘরের বউ হিসেবে এ রকম মেয়েই দরকার! আমাদের ছেলের জন্য এ রকম শান্তশিষ্ট মেয়ে প্রয়োজন!’ যে ছেলের সঙ্গে ওর বিয়ে হবে, তার জীবন তো বরবাদ হয়ে যাবে।”
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তীব্র সমালোচনা
ভাইজান খ্যাত সালমানের এই মন্তব্য ছড়িয়ে পড়তেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিতর্কের ঝড় ওঠে। অসংখ্য নেটিজেন সালমানের তীব্র সমালোচনা করে তাঁকে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান জানান। অনেকেই তাঁর মন্তব্যকে নারীবিদ্বেষী আখ্যা দিয়েছেন এবং এটিকে একজন জনপ্রিয় তারকার জন্য অত্যন্ত আপত্তিকর বলে অভিহিত করেছেন।
একজন মন্তব্যকারী তাঁর ক্ষোভ প্রকাশ করে লেখেন, “সালমান খান স্বাধীনচেতা, দৃঢ় এবং বলিষ্ঠ স্বভাবের নারীদের একেবারেই সহ্য করতে পারেন না। হিনা খান থেকে শুরু করে গওহর খান, রুবিনা দিলাইক, প্রিয়াঙ্কা – তাঁর আক্রমণের শিকার হয়েছেন বহু শক্তিশালী নারী। এখন তিনি ফারহানাকে আক্রমণ করলেন।” এই মন্তব্যটি সালমানের পূর্ববর্তী বিতর্কিত মন্তব্যগুলোর একটি প্যাটার্ন তুলে ধরে।
বৈষম্যমূলক ভাবনা এবং দ্বৈত মানদণ্ড
অন্য একজন ব্যবহারকারী সালমানের মন্তব্যকে সরাসরি নারীবিদ্বেষী উল্লেখ করে বলেন, “এত বড় মাপের নারীবিদ্বেষী মানুষ আগে দেখিনি।” একাধিক মন্তব্যকারী সালমানের বৈষম্যমূলক ভাবনার দিকে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়েছেন। একজন বিশেষভাবে উল্লেখ করেন, “বিগ বসের ঘরের আরেক প্রতিযোগী অমলকে তো বলার সাহস নেই যে, ওকে কোন নারী বিয়ে করবে! ফারহানা একজন নারী বলেই তাঁকে নিয়ে যা খুশি তা বলা সালমানের কাছে সহজ মনে হয়েছে।” এই ধরনের মন্তব্য সালমানের কথিত দ্বৈত মানদণ্ড এবং পুরুষ প্রতিযোগীদের ক্ষেত্রে তাঁর ভিন্ন আচরণের ইঙ্গিত দেয়।
এই বিতর্কিত মন্তব্যের ঝড় বয়ে গেলেও, সালমান খানের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। তাঁর এই নীরবতা জনমনে আরও প্রশ্ন তৈরি করেছে এবং বিতর্কের আগুনে আরও ঘি ঢেলেছে। দেখার বিষয়, এই সমালোচনার মুখে সালমান খান শেষ পর্যন্ত কোনো মন্তব্য করেন কিনা, অথবা বিষয়টি কোন দিকে মোড় নেয়।
