More

    অভিনয়ে আর ডাক পান না অনির্বাণ! তাঁর সঙ্গে কী ঘটেছে

    অনির্বাণ ভট্টাচার্য – বাংলা চলচ্চিত্র ও ওয়েব প্ল্যাটফর্মের এক অসামান্য প্রতিভার নাম। মঞ্চের মায়া কাটিয়ে রুপালি পর্দায় তাঁর আগমন ঘটেছিল এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করে। ক্ষুরধার অভিনয়শৈলী, সাবলীল অভিব্যক্তি এবং প্রতিটি চরিত্রে নিজেকে নিপুণভাবে মানিয়ে নেওয়ার ক্ষমতা তাঁকে খুব অল্প সময়ের মধ্যেই দর্শকের প্রিয় অভিনেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। ‘শাহজাহান রিজেন্সি’ থেকে শুরু করে ‘গোলোন্দাজ’, ‘ভিঞ্চিদা’ থেকে ‘গুমনামী’ – একের পর এক ব্লকবাস্টার এবং সমালোচকদের দ্বারা প্রশংসিত চলচ্চিত্রে তাঁর অনবদ্য অভিনয় বারবার মুগ্ধ করেছে দর্শক ও সমালোচকদের। শুধু বাংলাতেই থেমে থাকেননি তিনি; বলিউডেও নিজের মেধার স্বাক্ষর রেখেছেন, তাও আবার বলিউডের অন্যতম শক্তিশালী অভিনেত্রী রানী মুখার্জির বিপরীতে কাজ করার সুযোগ পেয়ে।

    নির্দেশনার আসনে অনির্বাণ: অভিনেতার পর পরিচালকের মুন্সিয়ানা

    অভিনয়ের পাশাপাশি অনির্বাণ ভট্টাচার্য তাঁর সৃষ্টিশীলতার অন্য এক পরিচয় তুলে ধরেছেন পরিচালনার ক্ষেত্রে। তাঁর পরিচালিত ওয়েব সিরিজ ‘মন্দার’ এবং চলচ্চিত্র ‘বল্লভপুরের রূপকথা’ দর্শক ও সমালোচক মহলে ব্যাপক প্রশংসা কুড়িয়েছে। এই কাজগুলোর মাধ্যমে তিনি প্রমাণ করেছেন যে, তিনি শুধু একজন সফল অভিনেতা নন, বরং এক দূরদর্শী এবং সংবেদনশীল পরিচালকও বটে। তাঁর পরিচালিত প্রতিটি কাজে গল্পের বুনন, চরিত্রের গভীরতা এবং নির্মাণশৈলী এক নতুন মাত্রা যোগ করে, যা বাংলা কনটেন্টকে আরও সমৃদ্ধ করেছে।

    টলিপাড়ায় সংকট: ফেডারেশনের সঙ্গে বিরোধ ও কর্মহীনতার ছায়া

    দুঃখজনকভাবে, তাঁর এই বর্ণাঢ্য কর্মজীবনের মাঝপথে এক অপ্রত্যাশিত সংকট নেমে আসে। টলিউডের ফেডারেশনের সঙ্গে এক বিরোধের জেরে তিনি একরকম বর্জনের মুখে পড়েন। এর ফলস্বরূপ, তাঁর কাজের সুযোগ উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যেতে শুরু করে, যা তাঁর মতো একজন প্রতিভাধর শিল্পীর জন্য ছিল এক বিশাল ধাক্কা। এই আইনি লড়াই দীর্ঘস্থায়ী ছিল এবং ২০২৩ সালের অক্টোবর মাসে ফেডারেশনের সঙ্গে ১৩ জন পরিচালকের আইনি বিবাদের অবসান ঘটে। তবে, আইনি জটিলতা শেষ হলেও অনির্বাণ এখনও স্বাভাবিক কর্মজীবনে ফিরতে পারেননি।

    এই মুহূর্তে তাঁর হাতে কার্যত কোনো নতুন সিনেমার প্রস্তাব নেই। শুধু অভিনয় নয়, তিনি যদি পরিচালনার কাজ শুরু করতে চান, তবে কারিগরি কর্মীরা শুটিংয়ে অংশ নিতে বিমুখ হচ্ছেন। এই পরিস্থিতি একজন কর্মব্যস্ত, প্রতিশ্রুতিশীল এবং জনপ্রিয় শিল্পীর জন্য অত্যন্ত উদ্বেগজনক এবং দুর্ভাগ্যজনক। এমন একজন বহুমুখী প্রতিভার এভাবে কর্মহীন হয়ে পড়া টলিউডের শিল্পী মহলে এক গভীর প্রশ্ন তৈরি করেছে।

    শিল্পীর পক্ষে সরব সহকর্মীরা: শুভশ্রী ও সোহিনীর খোলা চিঠি

    শুভশ্রী গাঙ্গুলীর অকুণ্ঠ সমর্থন

    অনির্বাণ ভট্টাচার্যের এই কঠিন সময়ে তাঁর পাশে দাঁড়িয়েছেন তাঁর সহ-অভিনেত্রী শুভশ্রী গাঙ্গুলী। তিনি অত্যন্ত দৃঢ়তার সাথে তাঁর মতামত ব্যক্ত করেছেন। শুভশ্রী বলেছেন, “আমি মনে করি, একজন শিল্পীকে বেঁধে রাখা যায় না। অনির্বাণদার মতো প্রতিভাবান একজন অভিনেতা যদি বাংলায় কাজ না করেন, তাহলে অন্য ভাষায় কাজ করবেন; সেটা নিয়ে তো কোনো দ্বিমত নেই।” তিনি আরও যোগ করেন, “তাঁকে যে পাত্রেই রাখবে, সে তো অনির্বাণ। দুর্দান্ত একজন অভিনেতা। উনি যেখানেই যান, শ্রেষ্ঠ হয়ে থাকবেন।” বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে নিজের অসন্তোষ প্রকাশ করে শুভশ্রী বলেন, “যে ঘটনাগুলো ঘটছে, আমার মনে হয় না আমরা কেউই এ বিষয়কে সমর্থন করছি… আমরা সবাই চাই উনি আরও ভালো ভালো কাজ আমাদের উপহার দিন আর খুব তাড়াতাড়ি কাজে ফিরুন।” শুভশ্রীর এই মন্তব্য শিল্পীর স্বাধীনতা এবং মেধার প্রতি তাঁর গভীর শ্রদ্ধাবোধের প্রতিফলন।

    সোহিনী সরকারের উদ্বেগ ও প্রত্যাশা

    একইভাবে, অনির্বাণের প্রাক্তন প্রেমিকা এবং জনপ্রিয় অভিনেত্রী সোহিনী সরকারও এই বিষয়ে নীরব থাকেননি। তিনি স্পষ্ট ভাষায় তাঁর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। সোহিনী বলেন, “অনির্বাণের মতো অভিনেতা কাজ না পাওয়া খুব দুঃখজনক।” এই অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির দ্রুত সমাধানের আশা প্রকাশ করে তিনি আরও বলেন, “আমি আশা করি আলোচনার মাধ্যমে এই সমস্যার সমাধান হবে।” সোহিনীর এই মন্তব্য বর্তমান সংকটের গভীরতা এবং তা সমাধানের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেয়।

    অনির্বাণের ভবিষ্যৎ ও টলিউডের ভাবনা

    এক সময়ের অত্যন্ত ব্যস্ত শিল্পী অনির্বাণ ভট্টাচার্যের হাতে আজ কার্যত কোনো চলচ্চিত্র নেই, যা তাঁর অগণিত ভক্ত এবং সমগ্র চলচ্চিত্র মহলের জন্য এক দুঃসংবাদ। এই অপ্রত্যাশিত স্থবিরতা থেকে উত্তরণের জন্য তিনি নিজেও গভীরভাবে চিন্তা করছেন এবং ভবিষ্যৎ কর্মপন্থা নিয়ে পর্যালোচনা করছেন। টলিউডের শিল্পী ও কলাকুশলীরা যেমন তাঁর দ্রুত প্রত্যাবর্তনের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন, তেমনি এই ঘটনা সমগ্র শিল্প জগতের প্রতি এক কঠিন বার্তা পৌঁছে দিয়েছে। শিল্পীর স্বাধীনতা, মেধার মূল্যায়ন এবং কর্মপরিবেশের স্বচ্ছতা নিয়ে এই ঘটনা নতুন করে ভাবনা জাগাচ্ছে। আশা করা যায়, আলোচনার মাধ্যমে এই জটিল পরিস্থিতির একটি ইতিবাচক সমাধান হবে এবং বাংলা চলচ্চিত্র একজন শ্রেষ্ঠ অভিনেতাকে তার প্রাপ্য সম্মান ও কাজের সুযোগ ফিরিয়ে দিতে সক্ষম হবে।

    Recent Articles

    Related Stories

    Leave A Reply

    Please enter your comment!
    Please enter your name here