কৈশোরের গণ্ডি পেরিয়ে যারা রঙিন পর্দার হাতছানিতে সাড়া দেন, তাঁদের মধ্যে খুব কমজনই পারেন নিজেদের স্বপ্নের রেখাচিত্রটিকে বাস্তবে ফুটিয়ে তুলতে। এমন এক সফল যাত্রার সাক্ষী ঢালিউড। নব্বইয়ের দশকের শুরুতে, এক কিশোরী চোখে অপার স্বপ্ন আর বুকভরা আত্মবিশ্বাস নিয়ে পা রেখেছিলেন রূপালি জগতে। তিনি শুধু এসেছিলেনই না, রীতিমতো রাজত্ব করেছেন। তাঁর প্রতিটি পদক্ষেপে, প্রতিটি হাসিতে মুগ্ধ হয়েছেন অগণিত দর্শক। ১৯৯১ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত এহতেশাম পরিচালিত ‘চাঁদনী’ চলচ্চিত্রের মধ্য দিয়ে ঘটেছিল তাঁর বর্ণাঢ্য অভিষেক। আর এই প্রথম ছবিই তাঁকে রাতারাতি নিয়ে গিয়েছিল সাফল্যের শিখরে, সৃষ্টি করেছিল এক অভূতপূর্ব আলোড়ন।
তবে সময়ের পরিক্রমায়, সেই ঝলমলে আলোর জগৎ থেকে নিজেকে অনেকটা দূরে সরিয়ে নিয়েছেন এই তারকা। বর্তমানে তিনি ঢাকার উত্তরায় স্বামী ও সন্তানদের নিয়ে এক নিরিবিলি পারিবারিক জীবন যাপন করছেন। একসময় যিনি সমান তালে নাটক ও চলচ্চিত্রের আঙিনায় নিজের মেধার স্বাক্ষর রেখেছিলেন, আজ তিনি স্বেচ্ছায় আড়ালে। যদিও চলচ্চিত্র বা নাট্যজগতের কিছু ঘনিষ্ঠ, ঘরোয়া আয়োজনে মাঝেমধ্যে তাঁর ক্ষণিকের দেখা মেলে, যা ভক্তদের মনে পুরোনো দিনের স্মৃতি জাগিয়ে তোলে এবং তাঁদের মাঝে কৌতূহল সৃষ্টি করে।
জন্মদিন: স্মৃতির ভেলায় শৈশবের ছবি
সম্প্রতি, এই গুণী অভিনেত্রীর জন্মদিন পালিত হলো গত বুধবার। এই বিশেষ দিনটিকে আরও স্মরণীয় করে তুলতে, তাঁরই ছোট বোন, যিনি নিজেও একজন অভিনয়শিল্পী, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কিছু বিরল শৈশবের স্থিরচিত্র প্রকাশ করেছেন। এই ছবিগুলো মুহূর্তে ছড়িয়ে পড়ে এবং বহু মানুষকে বিস্মিত করে। প্রথম দর্শনে অনেকেই সেই ছোট্ট মেয়েটিকে চিনতে পারেননি। সামাজিক মাধ্যমে শুরু হয় জল্পনা। কেউ কেউ তাঁর চিরচেনা হাসির আভা দেখে চিনতে পেরেছেন, আবার কেউ কেউ বন্ধুদের ট্যাগিংয়ের মাধ্যমে নিশ্চিত হয়েছেন। নতুবা, এই শিশুসুলভ মুখচ্ছবিতে বর্তমানের জনপ্রিয় অভিনেত্রীর প্রতিচ্ছবি খুঁজে পাওয়া ছিল সত্যিই কঠিন এবং একরকম অসম্ভব।
শাবনাজ: রূপালি পর্দার প্রেম থেকে সংসার
এই স্মিত হাসির অধিকারী ছোট্ট মেয়েটি আর কেউ নন, তিনি ঢালিউডের একসময়ের আলো ঝলমলে তারকা শাবনাজ। রূপালি পর্দার ঝলকানিতেই তাঁর জীবন এক নতুন মোড় নেয়। চলচ্চিত্রে কাজ করার সুবাদে তিনি পরিচিত হন সেই সময়ের আরেক জনপ্রিয় নায়ক নাঈম-এর সঙ্গে। তাঁদের অনস্ক্রিন রসায়ন যেমন দর্শকদের মন জয় করেছিল, তেমনই ক্যামেরার পেছনেও ধীরে ধীরে গড়ে ওঠে এক গভীর প্রেমের সম্পর্ক। এই পবিত্র বন্ধন একসময় পরিণত হয় সুদৃঢ় বিবাহ বন্ধনে। তাঁদের এই প্রেমকাহিনি ঢালিউডের অন্যতম সফল ও আলোচিত প্রেম কাহিনীর উদাহরণ হয়ে আছে। সম্প্রতি পালিত জন্মদিনে শাবনাজের শৈশবের নিষ্পাপ হাসি আর আজকের পরিণত জীবনের গল্প যেন এক সুতোয় গাঁথা হয়ে ধরা দিয়েছে, যা দর্শকদের মধ্যে এক নস্টালজিক অনুভূতি জাগিয়েছে।
ব্যতিক্রমী ক্যারিয়ার ও অবিস্মরণীয় সব কাজ
শৈশবের সেই স্বপ্নালু চোখ নিয়েই শাবনাজ চলচ্চিত্রে প্রবেশ করেন এবং তাঁর প্রথম ছবি ‘চাঁদনী’ দিয়েই দর্শকদের হৃদয়ে স্থায়ী আসন গড়ে নেন। ১৯৯১ সাল থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত অত্যন্ত সফলভাবে তিনি টানা ২৬টি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। এই স্বল্প সময়ে এতগুলো সফল চলচ্চিত্র উপহার দেওয়া তাঁর প্রতিভারই পরিচায়ক। তাঁর অভিনীত উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্রগুলোর মধ্যে রয়েছে ‘দিল’, ‘জিদ’, ‘আনজুমান’, ‘লাভ’, ‘চোখে চোখে’, ‘টাকার অহংকার’, ‘ঘরে ঘরে যুদ্ধ’, ‘সোনিয়া’ এবং ‘অনুতপ্ত’। এই চলচ্চিত্রগুলোতে তিনি বিভিন্ন চরিত্রে অসাধারণ অভিনয়শৈলী প্রদর্শন করেছেন এবং নিজের অভিনয় দক্ষতা দিয়ে নিজেকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছেন। শুধু নাঈম-এর সঙ্গেই নয়, তাঁর সময়ে তিনি ইলিয়াস কাঞ্চন, বাপ্পারাজ, কিংবদন্তি সালমান শাহ এবং অমিত হাসান-এর মতো প্রথম সারির নায়কদের সঙ্গেও সফলভাবে জুটি বেঁধে কাজ করেছেন। তাঁর কাজগুলো আজও ঢালিউডের সোনালী দিনের সাক্ষী হয়ে আছে এবং বহু নবীন শিল্পীর জন্য অনুপ্রেরণা হয়ে কাজ করছে।
