খুলনা-২ (সদর ও সোনাডাঙ্গা) আসনে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে কাজ শুরু করার জন্য দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের কাছ থেকে সরাসরি নির্দেশনা পাওয়ার দাবি করেছেন সাবেক সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম মঞ্জু। তার এই ঘোষণা খুলনা মহানগর বিএনপিতে নতুন করে চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে এবং রাজনৈতিক মহলে এর গুরুত্ব নিয়ে ব্যাপক আলোচনা চলছে। দীর্ঘ চার বছর পর সক্রিয় রাজনীতিতে ফেরা এই অভিজ্ঞ নেতার ওপর দলের হাইকমান্ডের এই আস্থা প্রদর্শন আসন্ন নির্বাচনের আগে দলের সাংগঠনিক শক্তি বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে বলে অনেকে মনে করছেন।
নেতৃত্বের নির্দেশ ও নির্বাচনী প্রস্তুতি
খুলনা মহানগর বিএনপির সাবেক সভাপতি নজরুল ইসলাম মঞ্জু সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে নিশ্চিত করেছেন যে, গত রবিবার (তারিখ উল্লেখ নেই, তবে এটি মূল কন্টেন্টে রবিবার বলা আছে) বিকেল সোয়া পাঁচটার দিকে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান লন্ডন থেকে সরাসরি তাকে টেলিফোনে এই গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা দেন। তারেক রহমান তাকে অবিলম্বে নির্বাচনী প্রস্তুতি শুরু করার এবং দলীয় কার্যক্রমে পুরোপুরি মনোযোগ দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। এই নির্দেশনার ফলে খুলনা-২ আসনে বিএনপির নির্বাচনী কার্যক্রম নতুন গতি পাবে এবং দলের মধ্যে একটি ঐক্যবদ্ধ কর্মপরিবেশ তৈরি হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
এই নির্দেশনার কয়েকদিন আগে, গত সোমবার ঢাকায় বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে দলের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সঙ্গে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের এক গুরুত্বপূর্ণ মতবিনিময় সভায় নজরুল ইসলাম অংশগ্রহণ করেন। দীর্ঘ চার বছরের নিষ্ক্রিয়তা শেষে এই বৈঠকের মাধ্যমেই তিনি পুনরায় দলীয় কার্যক্রমে সক্রিয়ভাবে যুক্ত হন, যা দলের তৃণমূল নেতাকর্মীদের মধ্যে নতুন উদ্দীপনা জাগিয়ে তোলে। তবে ঢাকা থেকে খুলনায় ফেরার পর তিনি জ্বরে আক্রান্ত হন এবং পরবর্তীতে চিকুনগুনিয়া শনাক্ত হয়। বর্তমানে নিজ বাড়িতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রয়েছেন তিনি, যা তার দ্রুত মাঠে নামার ক্ষেত্রে সাময়িক বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহ্বান
শারীরিক অসুস্থতার কথা ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকে জানানোর পর তারেক রহমান তাকে আশ্বস্ত করে বলেন, “সুস্থ হয়ে মাঠে নেমে পড়ুন, সবাইকে নিয়ে কাজ শুরু করুন। নির্বাচনে সবাইকে লাগবে। ভালো-মন্দ, পছন্দ-অপছন্দ থাকতে পারে, তারপরও সবাইকে সঙ্গে নিন।” এই নির্দেশনা থেকে স্পষ্ট যে, দল যেকোনো অভ্যন্তরীণ বিভেদ ভুলে গিয়ে একটি সুসংহত শক্তি হিসেবে নির্বাচনী লড়াইয়ে নামতে চাইছে। নজরুল ইসলাম মঞ্জু জানিয়েছেন, সুস্থ হয়ে উঠলে তিনি দ্রুতই দলের সকল স্তরের নেতাকর্মীদের সঙ্গে বৈঠক করবেন এবং ঐক্যবদ্ধভাবে নির্বাচনী কার্যক্রম শুরু করার একটি সুনির্দিষ্ট রূপরেখা তৈরি করবেন। এটি দলের ভেতরের সকল ছোটখাটো অসঙ্গতি মিটিয়ে একটি শক্তিশালী নির্বাচনী জোট তৈরি করার ইঙ্গিত বহন করে, যা বিএনপির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিবেচিত হচ্ছে।
সামাজিক মাধ্যমে বার্তা ও দিকনির্দেশনা
দলের এই গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে এবং নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে সুস্পষ্ট নির্দেশনা দিয়ে নজরুল ইসলাম মঞ্জু গত রবিবার বিকেলে তার ফেসবুক অ্যাকাউন্টে একাধিক পোস্ট দেন। প্রথম পোস্টে তিনি মহান আল্লাহ তায়ালার প্রতি শুকরিয়া জ্ঞাপন করেন এবং দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তিনি লেখেন, “মহান আল্লাহ তায়ালার প্রতি শুকরিয়া। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে খুলনা-২ আসনে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী হিসেবে দ্রুত সবাইকে নিয়ে কাজ শুরু করার জন্য দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের নির্দেশনার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই।”
আরেকটি পোস্টে তিনি দলীয় মনোনয়ন প্রাপ্তি নিয়ে অতি উল্লাস পরিহার করে ধৈর্য ও সংযম বজায় রাখার আহ্বান জানান। তিনি নেতাকর্মীদের প্রতি সম্মিলিতভাবে নির্বাচনী প্রস্তুতির ওপর জোর দিতে বলেন, যাতে দলের সাংগঠনিক শক্তি সুসংহত থাকে এবং নির্বাচনী লড়াইয়ে সফলতার ভিত্তি তৈরি হয়। তার এই পোস্টগুলো নেতাকর্মীদের মধ্যে ইতিবাচক বার্তা পৌঁছে দিয়েছে এবং খুলনা-২ আসনে বিএনপির নির্বাচনী কার্যক্রমের একটি নতুন দিক উন্মোচন করেছে, যেখানে ঐক্যের ওপর সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
