আসন্ন দ্বাদশ বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ (বিপিএল) টি-টোয়েন্টির ফ্র্যাঞ্চাইজি নির্বাচনের প্রক্রিয়া এখন এক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও সংবেদনশীল পর্যায় অতিক্রম করছে। টুর্নামেন্টটির প্রতি দেশজুড়ে প্রবল আগ্রহ থাকলেও, ফ্র্যাঞ্চাইজি অধিগ্রহণে ইচ্ছুক কিছু প্রতিষ্ঠানের যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন এবং গুরুতর দুর্নীতির অভিযোগ পুরো প্রক্রিয়াকে এক নতুন চ্যালেঞ্জের মুখে ঠেলে দিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিলকে বেশ সতর্কতার সঙ্গে পদক্ষেপ নিতে হচ্ছে, যাতে ক্রিকেটের পবিত্রতা ও টুর্নামেন্টের ভাবমূর্তি অক্ষুণ্ণ থাকে।
ফ্র্যাঞ্চাইজি নির্বাচনের প্রাথমিক পর্যায় ও আবেদন বাতিলের প্রেক্ষাপট
দ্বাদশ বিপিএলের জন্য ফ্র্যাঞ্চাইজি অধিগ্রহণে মোট ১১টি প্রতিষ্ঠান তাদের প্রাথমিক আগ্রহ প্রকাশ করেছিল। এটি টুর্নামেন্টের প্রতি বাণিজ্যিক মহলের ব্যাপক আগ্রহের একটি প্রতিফলন। তবে বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিল কর্তৃক নির্ধারিত কঠোর মানদণ্ড এবং প্রয়োজনীয় শর্তাবলী পূরণে ব্যর্থ হওয়ায়, এই আগ্রহী প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে থেকে তিনটির আবেদন বাতিল করা হয়েছে। এই পদক্ষেপটি বিপিএল কর্তৃপক্ষের স্বচ্ছতা ও মান বজায় রাখার দৃঢ় অঙ্গীকারের অংশ হিসেবে দেখা হচ্ছে, যেখানে শুধুমাত্র যোগ্য এবং সক্ষম প্রতিষ্ঠানগুলোকেই টুর্নামেন্টের অংশীদার করার দিকে জোর দেওয়া হচ্ছে।
আইসিসির দুর্নীতি দমন বিভাগের ‘রেড ফ্ল্যাগ’ এবং উদ্বেগজনক পরিস্থিতি
প্রাথমিক স্ক্রিনিংয়ের পর অবশিষ্ট আটটি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে থেকেও সবকটি যে ফ্র্যাঞ্চাইজি পাবে, সেই সম্ভাবনা অত্যন্ত ক্ষীণ। এর মূল কারণ হলো আইসিসির দুর্নীতি দমন বিভাগ (ACU) কর্তৃক পরিচালিত গভীর যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়া। নিয়মানুযায়ী, বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিল ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলোর মালিকদের বিস্তারিত ব্যক্তিগত তথ্য আইসিসির দুর্নীতি দমন বিভাগের কাছে পাঠিয়েছিল, যাতে কোনো সন্দেহভাজন ব্যক্তি বা দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিরা এই মর্যাদাপূর্ণ টুর্নামেন্টের অংশ হতে না পারে।
উদ্বেগজনকভাবে, দুর্নীতি দমন বিভাগ তাদের প্রতিক্রিয়াতে জানিয়েছে যে, এক বা দু’টি প্রতিষ্ঠানের মালিক ‘রেড ফ্ল্যাগড’ বা সন্দেহভাজন কার্যকলাপের সঙ্গে জড়িত। ‘রেড ফ্ল্যাগ’ মানে হলো আইসিসির কাছে তাদের গতিবিধি বা অতীত রেকর্ডে এমন কিছু তথ্য আছে যা দুর্নীতি বা অনৈতিক কার্যকলাপের ইঙ্গিত দেয়। এটি বিপিএলের সততা, বিশ্বাসযোগ্যতা এবং বিশ্বব্যাপী ক্রিকেটের ভাবমূর্তির জন্য একটি বড় হুমকি। এমন গুরুতর অভিযোগের মুখে বিপিএল কর্তৃপক্ষ টুর্নামেন্টের নৈতিকতার প্রশ্নে কোনোভাবেই আপস করতে রাজি নয়।
অন্যান্য শর্ত পূরণে ঘাটতি এবং ফ্র্যাঞ্চাইজির সংখ্যা হ্রাসের সম্ভাবনা
দুর্নীতি সংক্রান্ত গুরুতর উদ্বেগের পাশাপাশি, অবশিষ্ট কিছু প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রেও অন্যান্য প্রয়োজনীয় শর্ত পূরণে ঘাটতি পরিলক্ষিত হয়েছে। আর্থিক সক্ষমতা, প্রশাসনিক কাঠামো, টুর্নামেন্ট পরিচালনার অভিজ্ঞতা অথবা বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিলের নির্ধারিত অন্যান্য প্রযুক্তিগত ও প্রশাসনিক মানদণ্ড পূরণে তাদের দুর্বলতা রয়েছে। এসব সামগ্রিক দিক বিবেচনা করে, বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিল মনে করছে যে, অবশিষ্ট আটটি প্রতিষ্ঠান থেকে শেষ পর্যন্ত চারটির বেশি প্রতিষ্ঠানকে ফ্র্যাঞ্চাইজি দেওয়া সম্ভব হবে না।
ফ্র্যাঞ্চাইজি সংখ্যা কমে যাওয়ার এই পরিস্থিতিতে, বিসিবি একটি বিকল্প সমাধান নিয়ে সক্রিয়ভাবে বিবেচনা করছে। যদি যোগ্য ফ্র্যাঞ্চাইজির সংখ্যা প্রত্যাশার চেয়ে কম হয়, তবে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) নিজেদের হাতে একটি ফ্র্যাঞ্চাইজি রেখে আসন্ন দ্বাদশ বিপিএলকে মোট পাঁচটি দল নিয়ে আয়োজন করতে পারে। এটি টুর্নামেন্টের ধারাবাহিকতা বজায় রাখা এবং একটি প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক পরিবেশ নিশ্চিত করার জন্য একটি সম্ভাব্য কৌশল।
এই সমস্ত জটিলতার বিষয়ে আগামীকাল চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে বলে গভর্নিং কাউন্সিল সূত্রে নিশ্চিত করা হয়েছে। সকলের দৃষ্টি এখন সেই বহু প্রতীক্ষিত সিদ্ধান্তের দিকে নিবদ্ধ।
গত বিপিএলের সন্দেহভাজন খেলোয়াড়দের বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা
এদিকে, গত বিপিএলে সন্দেহভাজন হিসেবে চিহ্নিত কিছু খেলোয়াড়ের তালিকা আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ না করা হলেও, বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিল একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিতে চলেছে। ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলোকে অনানুষ্ঠানিকভাবে নির্দেশনা দেওয়া হবে যেন তারা সেসব সন্দেহভাজন খেলোয়াড়কে আসন্ন দ্বাদশ বিপিএলের দলে অন্তর্ভুক্ত না করে। এটি টুর্নামেন্টের পবিত্রতা রক্ষা, ম্যাচ ফিক্সিং বা অন্যান্য অনৈতিক কার্যকলাপ থেকে দূরে থাকা এবং একটি ক্লিন ক্রিকেট পরিবেশ বজায় রাখার ক্ষেত্রে একটি শক্তিশালী ও সতর্কতামূলক ব্যবস্থা। বিপিএল কর্তৃপক্ষ ক্রিকেটের সর্বোর্ধ্ব আদর্শ ও ক্লিন ইমেজ বজায় রাখতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।
