ফুটবল মাঠে বার্সেলোনার উদীয়মান তারকা লামিনে ইয়ামাল তাঁর অসাধারণ নৈপুণ্য দিয়ে যেমন বিশ্বজুড়ে ফুটবলপ্রেমীদের নজর কেড়েছেন, তেমনি মাঠের বাইরে তাঁর ব্যক্তিগত জীবনও গত কয়েক মাস ধরে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। ১৮ বছর বয়সী এই তরুণ উইঙ্গারের নাম জড়িয়েছে বেশ কয়েকজন নারীর সঙ্গে, যা তাঁর পেশাদারী জীবনের পাশাপাশি ব্যক্তিগত ইমেজকেও প্রভাবিত করছে। তবে, সাম্প্রতিক সময়ে যে সম্পর্কটি সবচেয়ে বেশি আলোচনায় এসেছে, সেটি হলো আর্জেন্টিনার জনপ্রিয় গায়িকা ও র্যাপার নিকি নিকোল-এর সঙ্গে তাঁর প্রেমের গুঞ্জন।
আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে ইয়ামালের সম্পর্ক
স্প্যানিশ সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, লামিনে ইয়ামাল প্রকৃতপক্ষে নিকি নিকোলের সঙ্গেই প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়েছিলেন। দুই তারকার এই সম্পর্ক ফুটবল ও বিনোদন জগতের ভক্তদের মধ্যে বেশ কৌতূহল সৃষ্টি করেছিল। কিন্তু এই আলোচিত প্রেম নাকি মাত্র তিন মাসেই শেষ হয়ে গেছে। হঠাৎ করে এই সম্পর্ক ভেঙে যাওয়ার খবর ইয়ামালের ব্যক্তিগত জীবনে নতুন করে জটিলতা এনেছে। চোট, মাঠে ছন্দহীনতা, বিতর্ক এবং ব্যক্তিগত জীবনের টানাপোড়েন—সব মিলিয়ে বার্সেলোনার এই প্রতিভাবান ফুটবলার যেন এক কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন।
গুজবের ডালপালা: বিশ্বাসঘাতকতার অভিযোগ
নিকি নিকোলের সঙ্গে ইয়ামালের বিচ্ছেদের কারণ নিয়ে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে নানা ধরনের খবর প্রকাশিত হতে থাকে। কিছু প্রতিবেদনে দাবি করা হয় যে, ইয়ামালের ‘বিশ্বাসঘাতকতার’ কারণেই নিকোল এই সম্পর্ক থেকে সরে এসেছেন। বিশেষ করে ইতালির মিলানে অনুষ্ঠিত একটি পার্টিতে ২০ বছর বয়সী মডেল আনা গেগনোস-এর সঙ্গে ইয়ামালকে বেশ ঘনিষ্ঠ অবস্থায় দেখা গিয়েছিল বলে অভিযোগ ওঠে। নিকোল নাকি এই খবর জানতে পারার পরই ইয়ামালের সঙ্গে সব সম্পর্ক ছিন্ন করার সিদ্ধান্ত নেন। এই ধরনের গুরুতর অভিযোগ দ্রুতই সোশ্যাল মিডিয়া এবং বিভিন্ন সংবাদ পোর্টালে ছড়িয়ে পড়ে, যা ইয়ামালের ব্যক্তিগত জীবনকে আরও বেশি আলোচনার খোরাক জোগায়।
ইয়ামালের কঠোর প্রতিবাদ: “সব খবর ভিত্তিহীন”
তবে, লামিনে ইয়ামাল তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা এই সব অভিযোগ কঠোরভাবে প্রত্যাখ্যান করেছেন। স্প্যানিশ সাংবাদিক হাভি হোয়োস-এর অনুষ্ঠানে এসে এই তরুণ তারকা তাঁর অবস্থান স্পষ্ট করেছেন। তিনি জোর দিয়ে বলেছেন যে, তাঁকে নিয়ে প্রচারিত সব খবরই ভিত্তিহীন এবং মিথ্যা। ইয়ামাল স্বীকার করেছেন যে, তিনি এবং নিকি নিকোল এখন আর একসঙ্গে নেই, কিন্তু এর পেছনে কোনো বিশ্বাসঘাতকতা বা প্রতারণা নেই।
ইয়ামাল তাঁর সাক্ষাৎকারে সরাসরি বলেন, “আমরা (আমি ও নিকোল) এখন আর একসঙ্গে নেই। কিন্তু সেটা বিশ্বাসভঙ্গের কারণে নয়। আমরা শুধু আলাদা হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। ব্যস, এইটুকুই। যা বলা হচ্ছে, কিছুই সত্যি নয়। আমি কারও সঙ্গে প্রতারণা করিনি, অন্য কারও সঙ্গেও ছিলাম না।” তাঁর এই বক্তব্য থেকে স্পষ্ট হয় যে, দুজনের বিচ্ছেদ ছিল পারস্পরিক বোঝাপড়ার ফল, কোনো তৃতীয় ব্যক্তির কারণে নয়। ইয়ামাল আরও দাবি করেন যে, যেসব সংবাদমাধ্যম এই ধরনের গল্প ফেঁদে প্রতারণার খবর ছড়াচ্ছে, সেগুলো কেবলই গুজব এবং অসত্য।
নিকি নিকোলের অবস্থান: গুজব উড়িয়ে দিলেন তিনিও
লামিনে ইয়ামালের মতোই, ২৫ বছর বয়সী আর্জেন্টাইন গায়িকা নিকি নিকোলও তাঁর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে এই সব গুজব উড়িয়ে দিয়েছেন। তিনি অত্যন্ত স্পষ্টভাষায় বলেছেন যে, যদি তাঁকে কেউ ঠকাত, তাহলে তিনি অবশ্যই প্রথম সবাইকে জানাতেন। নিকোল এর আগেও এমন পরিস্থিতিতে তাঁর ব্যক্তিগত জীবনের সত্য প্রকাশ করেছেন। উদাহরণ হিসেবে তিনি মেক্সিকান গায়ক পেসো প্লুমা-র সঙ্গে তাঁর পূর্ববর্তী বিচ্ছেদের কথা উল্লেখ করেছেন, যখন তিনি প্রতারণার শিকার হওয়ার পর সেটি প্রকাশ্যে এনেছিলেন। তাঁর এই বক্তব্য ইয়ামালের দাবির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ, যা প্রমাণ করে যে, তাদের বিচ্ছেদের পেছনে বিশ্বাসভঙ্গের অভিযোগটি ভিত্তিহীন।
মাঠের বাইরের এই আলোচনাগুলো ইয়ামালের মতো একজন তরুণ খেলোয়াড়ের মানসিক স্থিতিশীলতা এবং পারফরম্যান্সের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে। তবে, ইয়ামাল এবং নিকি নিকোল উভয়েই এই গুজবকে অস্বীকার করে নিজেদের অবস্থানে দৃঢ় রয়েছেন, যা এই পুরো বিতর্কের একটি ভিন্ন মাত্রা যোগ করেছে।
