More

    নতুন পে স্কেলে ‘গ্রেড’ কমিয়ে বেতন বাড়ানোর প্রস্তাব

    সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য নতুন বেতন কাঠামো প্রণয়নের কাজ আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু করেছে পে কমিশন। এই প্রেক্ষাপটে দেশের সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিভিন্ন সংগঠন তাদের সুচিন্তিত প্রস্তাবনা কমিশনের কাছে জমা দিয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম হলো বাংলাদেশ সরকারি কর্মচারী কল্যাণ ফেডারেশন, যারা তাদের প্রস্তাবনায় সর্বনিম্ন বেতন ৩৫ হাজার টাকায় উন্নীতকরণ এবং বিদ্যমান গ্রেড সংখ্যা কমানোর সুপারিশ করেছে।

    বর্তমান অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপট ও নতুন বেতনের প্রস্তাবনা

    বাংলাদেশ সরকারি কর্মচারী কল্যাণ ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও মুখপাত্র আব্দুল মালেক গণমাধ্যমকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তাদের প্রস্তাবনার বিস্তারিত তুলে ধরেন। তিনি উল্লেখ করেন, “আমরা জোরালোভাবে প্রস্তাব করেছি যে, সরকারি কর্মচারীদের সর্বনিম্ন মাসিক বেতন ৩৫ হাজার টাকায় নির্ধারণ করা হোক এবং একইসঙ্গে বর্তমানে প্রচলিত ২০টি গ্রেড কমিয়ে যুগোপযোগী ১২টি গ্রেডে আনা হোক।” এই প্রস্তাবনা বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতি এবং জীবনযাত্রার ক্রমবর্ধমান ব্যয়ভারের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ বলে ফেডারেশন মনে করে।

    আব্দুল মালেক আরও ব্যাখ্যা করেন যে, সর্বশেষ পে স্কেল প্রণীত হয়েছিল ২০১৫ সালে। নিয়ম অনুযায়ী, পরবর্তী পে স্কেল ২০২০ সালে কার্যকর হওয়ার কথা থাকলেও তা হয়নি। এই দীর্ঘসূত্রতা এবং সময়ক্ষেপণের কারণে সরকারি কর্মচারীরা মারাত্মকভাবে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। তিনি বলেন, “যদি পে স্কেল নিয়মিতভাবে প্রণীত হতো, তাহলে ২০২০ সালেই কর্মচারীদের বেতন দ্বিগুণ হয়ে যেত এবং ২০২৫ সাল নাগাদ তা কমপক্ষে ৩৩ হাজার টাকায় পৌঁছাত।” পে স্কেল প্রণয়নের এই বিলম্ব সরকারি কর্মচারীদের মধ্যে ব্যাপক হতাশার সৃষ্টি করেছে।

    দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি ও বেতন বৈষম্য নিরসনের দাবি

    বর্তমান আকাশচুম্বী দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতি বিবেচনা করেই ফেডারেশন সর্বনিম্ন ৩৫ হাজার টাকা বেতনের প্রস্তাব করেছে। আব্দুল মালেক জোর দিয়ে বলেন, “আমরা চাই, সরকারি কর্মচারীদের বেতন বৈষম্য কমে আসুক। বর্তমানে বেতনের অনুপাত ১:১০, যা অত্যন্ত বেশি। আমরা এই অনুপাতকে ১:৪-এ নামিয়ে আনার প্রস্তাব করেছি, যাতে নিম্ন ও উচ্চ স্তরের কর্মচারীদের মধ্যে আর্থিক ব্যবধান কিছুটা কমে আসে।” তার মতে, সাধারণত প্রতি পাঁচ বছর অন্তর পে স্কেল পুনর্গঠিত হওয়া উচিত। কিন্তু ২০২০ এবং ২০২৫, উভয় নির্ধারিত সময়েই তা কার্যকর হয়নি, যা সরকারি কর্মচারীদের জন্য এক বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

    বেসরকারি খাতের বেতন বৃদ্ধি এবং জীবনযাত্রার ব্যয়

    ফেডারেশন শুধু সরকারি নয়, বেসরকারি খাতের কর্মীদের বেতন বৃদ্ধির দাবিকেও গুরুত্ব দিচ্ছে। আব্দুল মালেক দৈনন্দিন জীবনযাত্রার ব্যয়ের একটি বাস্তব চিত্র তুলে ধরে বলেন, “একজন সাধারণ মানুষ দিনে তিন বেলা যদি শুধু ডাল-ভাত-ভর্তা দিয়েও আহার করেন, তবে তাতে প্রতিদিন প্রায় ১৫০ টাকা খরচ হয়। একটি ছয় সদস্যের পরিবারের জন্য শুধু খাবারের পেছনেই মাসে অন্তত ২৭ হাজার টাকা ব্যয় হয়।” এর সঙ্গে বাসাভাড়া, চিকিৎসা, সন্তানদের শিক্ষা এবং অন্যান্য মৌলিক খরচ যোগ করলে একটি পরিবারের মাসিক ৫০ হাজার টাকাও অপ্রতুল বলে তিনি মনে করেন। এই পরিসংখ্যান বাস্তবতার নিরিখে নতুন পে স্কেল প্রণয়নের প্রয়োজনীয়তাকে আরও বেশি জোরালো করে তোলে।

    পে কমিশন কর্তৃক নতুন পে স্কেলের প্রস্তাব আগামী জানুয়ারি বা ফেব্রুয়ারি মাসের মধ্যেই সরকারের কাছে জমা দেওয়া হতে পারে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। এই প্রস্তাবনা সরকারি কর্মচারীদের দীর্ঘদিনের প্রত্যাশা পূরণ এবং ক্রমবর্ধমান জীবনযাত্রার ব্যয়ের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ একটি বেতন কাঠামো নিশ্চিত করবে বলে আশা করা হচ্ছে।

    Recent Articles

    Related Stories

    Leave A Reply

    Please enter your comment!
    Please enter your name here