আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গন ক্রমশ উত্তপ্ত হয়ে উঠছে। আগামী ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিতব্য এই গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচনকে সামনে রেখে ইতোমধ্যে নানান গুঞ্জন ডালপালা মেলছে। এরই ধারাবাহিকতায়, সরকারের উচ্চপদস্থ দুজন উপদেষ্টার পদত্যাগের খবর রাজনৈতিক মহলে নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে। আগামী সপ্তাহেই পদত্যাগ করতে যাচ্ছেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া এবং তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মো. মাহফুজ আলম। এই পদক্ষেপের মূল উদ্দেশ্য, তফসিল ঘোষণার আগেই নির্বাচনে সরাসরি অংশগ্রহণের প্রস্তুতি নেওয়া।
নির্বাচনে অংশগ্রহণ ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট
গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম সমন্বয়ক হিসেবে পরিচিত এই দুই উপদেষ্টা তাদের পদত্যাগের পর আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনী মাঠে নামবেন। তাদের এই সিদ্ধান্ত বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ। যদিও তারা কোন রাজনৈতিক দলের ব্যানারে নির্বাচনে লড়বেন, তা এখনো স্পষ্ট নয়। এর আগে সাবেক উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম জাতীয় নাগরিক পার্টি – এনসিপিতে যোগ দিলেও, আসিফ ও মাহফুজের ক্ষেত্রে সেই সম্ভাবনা আপাতত ক্ষীণ বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
বিভিন্ন বিশ্বস্ত সূত্রের ইঙ্গিত অনুযায়ী, এই দুই উপদেষ্টা সম্ভবত বিএনপি কর্তৃক ছেড়ে দেওয়া আসনগুলোতে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করতে পারেন। এই কৌশল তাদের জন্য একটি ভিন্ন প্ল্যাটফর্ম তৈরি করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তাদের পদত্যাগের বিষয়টি ইতোমধ্যে মৌখিকভাবে প্রধান উপদেষ্টাকে অবহিত করা হয়েছে, যা আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়ারই একটি অংশ।
আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার বক্তব্য ও প্রস্তুতি
বৃহস্পতিবার এক অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া তার নির্বাচনী প্রস্তুতির কথা খোলাখুলি জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আমি নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছি। পদত্যাগ করেই নির্বাচন করব।’ তিনি আরও যোগ করেন, এমন কোনো আইনি বাধ্যবাধকতা নেই যে উপদেষ্টা পদে থাকলে নির্বাচন করা যাবে না। তবে নীতিগত কারণেই উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালনরত অবস্থায় নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা সঠিক হবে না বলে তিনি মনে করেন। কোন দল থেকে নির্বাচন করবেন, সে বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত এখনো নেননি বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
সজীব ভূঁইয়া জানান, তিনি শুধু নির্বাচন করার ঘোষণা দিয়েছেন, কিন্তু কোথা থেকে লড়বেন, তা এখনো প্রকাশ করেননি। তিনি আরও ইঙ্গিত দেন যে, কেবল এই দুজন ছাত্র উপদেষ্টাই নন, বরং আরও কয়েকজন উপদেষ্টা আসন্ন নির্বাচনে অংশ নিতে পারেন, যা আসন্ন নির্বাচনকে আরও প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক করে তুলতে পারে।
ভোটার স্থানান্তর ও ঢাকা-১০ আসনের গুঞ্জন
আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার নির্বাচনী পরিকল্পনার একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো তার ভোটার এলাকা পরিবর্তন। তিনি পূর্বে কুমিল্লার ভোটার ছিলেন, তবে সম্প্রতি তিনি ঢাকা-১০ আসনের ভোটার হয়েছেন। এই স্থানান্তরের পর থেকেই রাজনৈতিক মহলে গুঞ্জন তীব্র হয়েছে যে, তিনি সম্ভবত ঢাকা-১০ আসন থেকেই জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। এই আসনে ঐতিহ্যগতভাবে একটি নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দলের প্রভাব থাকলেও, আসিফ মাহমুদের এই পদক্ষেপ একটি নতুন মেরুকরণের ইঙ্গিত দিচ্ছে। তার এই কৌশলগত পদক্ষেপ আসন্ন নির্বাচনে একটি ভিন্ন মাত্রার রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্ম দিতে পারে, যা ভোটারদের মধ্যেও নতুন আগ্রহ সৃষ্টি করেছে।