কক্সবাজার-চট্টগ্রাম মহাসড়কে মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনা: একই পরিবারের পাঁচজনের প্রাণহানি
গত বুধবার, ৫ নভেম্বর, বাংলাদেশের সড়কপথে আরও একটি হৃদয়বিদারক দুর্ঘটনার সাক্ষী হলো জাতি। কক্সবাজার-চট্টগ্রাম মহাসড়কের চকরিয়া অংশে সংঘটিত এক ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনায় একই পরিবারের পাঁচ সদস্য মর্মান্তিকভাবে প্রাণ হারিয়েছেন। এই মর্মান্তিক ঘটনাটি ঘটেছে বুধবার সকাল ৯টায়, যখন একটি যাত্রীবাহী বাস ও মাইক্রোবাসের মধ্যে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এ দুর্ঘটনায় পুরো এলাকায় গভীর শোকের ছায়া নেমে এসেছে এবং দেশের সড়ক নিরাপত্তা পরিস্থিতির দুর্বলতা নতুন করে সামনে চলে এসেছে।
দুর্ঘটনার বিস্তারিত চিত্র ও ক্ষতিগ্রস্তদের পরিচয়
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, চকরিয়ার ফাঁসিয়াখালী হাঁসের দিঘি সেনা ক্যাম্পের দক্ষিণে এই ভয়াবহ দুর্ঘটনাটি ঘটে। চট্টগ্রামমুখী মারছা পরিবহনের একটি দ্রুতগামী যাত্রীবাহী বাসের সঙ্গে কক্সবাজারগামী একটি মাইক্রোবাসের সরাসরি ও প্রচণ্ড সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষের তীব্রতা এতটাই ছিল যে, ঘটনাস্থলেই মাইক্রোবাসের আরোহী পাঁচজন যাত্রী মৃত্যুবরণ করেন। নিহতদের মধ্যে একজন নিষ্পাপ শিশু এবং চারজন নারী রয়েছেন, যা ঘটনার ভয়াবহতাকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে। এই হৃদয়বিদারক ঘটনায় যে পরিবারটি সম্পূর্ণভাবে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেল, তাৎক্ষণিকভাবে তাঁদের পরিচয় নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি। তবে পুলিশ নিহতদের পরিচয় উদ্ঘাটনে এবং তাদের স্বজনদের খুঁজে বের করতে নিবিড়ভাবে কাজ করছে বলে জানা গেছে।
দুর্ঘটনায় কেবল প্রাণহানিই নয়, গুরুতর আহত হয়েছেন আরও দুজন। আহত এই দুই ব্যক্তিকে দ্রুত ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করে চকরিয়ার বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য ভর্তি করা হয়েছে। তাদের শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য এখনো পাওয়া যায়নি, তবে হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, তাদের নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে এবং জীবন বাঁচানোর সর্বোচ্চ চেষ্টা চলছে।
পুলিশের পদক্ষেপ ও পলাতক চালকদের রহস্য
মালুমঘাট হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মেহেদী হাসান দুর্ঘটনার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, খবর পেয়েই হাইওয়ে পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে উদ্ধার তৎপরতা শুরু করে এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। পুলিশ দুর্ঘটনা কবলিত দুটি গাড়িই জব্দ করেছে এবং সেগুলো বর্তমানে হাইওয়ে থানার হেফাজতে রয়েছে। তবে দুর্ঘটনার পরপরই বাস ও মাইক্রোবাসের দুই চালকই দ্রুত ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যান। চালকদের এই পলায়ন জনমনে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে এবং তাঁদের দ্রুত আইনের আওতায় এনে জবাবদিহির মুখোমুখি করার জোরালো দাবি জানানো হয়েছে। ওসি মেহেদী হাসান আরও বলেন, পলাতক চালকদের ধরতে একাধিক দল অভিযান চালাচ্ছে এবং দুর্ঘটনার প্রকৃত কারণ অনুসন্ধানে একটি উচ্চপর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে।
স্থানীয়দের উদ্বেগ এবং সড়ক নিরাপত্তার দাবি
এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনার পর স্থানীয় বাসিন্দারা গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তাদের দীর্ঘদিনের অভিযোগ, কক্সবাজার-চট্টগ্রাম মহাসড়কের এই নির্দিষ্ট অংশে দীর্ঘদিন ধরে গতি নিয়ন্ত্রণের কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেই। পর্যাপ্ত স্পিডব্রেকার এবং সতর্কতামূলক সাইনবোর্ডের অভাবে যানবাহনগুলো এখানে অনিয়ন্ত্রিত গতিতে চলাচল করে, যার ফলস্বরূপ প্রায়শই ছোট-বড় দুর্ঘটনার শিকার হন সাধারণ মানুষ। স্থানীয়রা অবিলম্বে ওই স্থানে প্রয়োজনীয় সংখ্যক স্পিডব্রেকার স্থাপন এবং সতর্কতামূলক সাইনবোর্ড বসানোর জন্য প্রশাসনের প্রতি জোরালো দাবি জানিয়েছেন। তারা মনে করেন, এই ধরনের প্রয়োজনীয় অবকাঠামোগত উন্নয়নের মাধ্যমেই কেবল ভবিষ্যতে এমন মর্মান্তিক ও অপূরণীয় ক্ষতি এড়ানো সম্ভব হবে এবং সড়কের নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে।
দুর্ঘটনার পরবর্তী অবস্থা ও যান চলাচল স্বাভাবিককরণ
ভয়াবহ এই দুর্ঘটনার পর কক্সবাজার-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ওই অংশে কিছু সময়ের জন্য যান চলাচল সম্পূর্ণরূপে বন্ধ হয়ে যায়। দুর্ঘটনাকবলিত গাড়িগুলো সড়কের মাঝখানে থাকায় এবং উৎসুক জনতার ভিড়ের কারণে মহাসড়কে ব্যাপক যানজটের সৃষ্টি হয়। এতে যাত্রীরা চরম ভোগান্তিতে পড়েন এবং দীর্ঘ সময় আটকে থাকেন। পরে মালুমঘাট হাইওয়ে পুলিশ এবং স্থানীয় প্রশাসনের কর্মীরা দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। তারা দুর্ঘটনাকবলিত গাড়িগুলো সরিয়ে যান চলাচলের পথ সুগম করেন এবং ধীরে ধীরে মহাসড়কে স্বাভাবিক গতি ফিরিয়ে আনেন। এই হৃদয়বিদারক ঘটনা আবারও দেশের সড়ক নিরাপত্তা ব্যবস্থার দুর্বলতা এবং নিরাপদ সড়ক নিশ্চিত করতে কার্যকর ও দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণের প্রয়োজনীয়তাকে স্পষ্ট করে তুলেছে। নিহতদের পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা এবং আহতদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করা হচ্ছে।
