More

    যে ৩ কারণে লিভারপুলের কাছে পাত্তাই পায়নি রিয়াল মাদ্রিদ

    ফুটবল বিশ্ব সাক্ষী হলো এক অপ্রত্যাশিত ফলাফলের, যেখানে প্রাক-ম্যাচ ভবিষ্যদ্বাণীকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে অ্যানফিল্ডের ঐতিহ্যবাহী মাঠ এক ভিন্ন চিত্রের উন্মোচন ঘটালো। ম্যাচের আগে রিয়াল মাদ্রিদ ছিল পরিষ্কার ফেভারিট; তাদের বার্সেলোনার বিরুদ্ধে জয় এবং দুর্দান্ত গোলস্কোরিং ফর্ম ইঙ্গিত দিচ্ছিল যে, অ্যানফিল্ডে তারা বুঝি জয়ের ছক কষেই পা রেখেছে। অন্যদিকে, সাম্প্রতিক সময়ে লিভারপুল তাদের সেরা ফর্মে ছিল না, শেষ আট ম্যাচের মধ্যে ছয়টিতেই হেরেছিল, যা তাদের আত্মবিশ্বাসে চিড় ধরানোর জন্য যথেষ্ট ছিল। তবে, ফুটবল আবারও প্রমাণ করলো যে, পরিসংখ্যান মাঠে নামার আগে পর্যন্তই কথা বলে।

    ম্যাচ শুরু হতেই দেখা গেল সম্পূর্ণ ভিন্ন এক দৃশ্যপট। লিভারপুল শুরু থেকেই আক্রমণাত্মক ফুটবল খেলে রিয়াল মাদ্রিদের রক্ষণভাগে ত্রাস ছড়াতে থাকে। তাদের তীব্র আক্রমণের মুখে রিয়ালের খেলোয়াড়রা যেন দিশেহারা হয়ে পড়েছিল। যদি বেলজিয়ান গোলরক্ষক থিবো কোর্তোয়া দুর্দান্ত কয়েকটি সেভ না করতেন, তাহলে সফরকারীদের হয়তো ৪ বা ৫ গোল হজম করে লজ্জাজনক হারের মুখে পড়তে হতো। অ্যানফিল্ডের গর্জন আর লিভারপুলের মরিয়া প্রচেষ্টা যেন রিয়াল মাদ্রিদের আত্মতুষ্টিকে ভেঙে চুরমার করে দেয়। এই অপ্রত্যাশিত জয়ের পেছনে কিছু সুনির্দিষ্ট নিয়ামক কাজ করেছে, যা চলুন বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা যাক।

    মাঝমাঠের অপ্রতিরোধ্য দখল

    লিভারপুল এই ম্যাচে শুরু থেকেই ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নিজেদের হাতে তুলে নেয়, আর এর মূল কারিগর ছিল তাদের শক্তিশালী মাঝমাঠের দখল। মিডফিল্ডে অ্যালেক্সিস ম্যাক অ্যালিস্টার ছিলেন দলের সেরা পারফর্মার। ম্যাচের একমাত্র এবং জয়সূচক গোলটিও আসে তার মাথা থেকে, যা ছিল তার বুদ্ধিদীপ্ত খেলারই এক দারুণ প্রতিচ্ছবি। গোলের চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ ছিল তার নিখুঁত বল নিয়ন্ত্রণ এবং ম্যাচের গতি নির্ধারণ করার ক্ষমতা। তিনি শুধু বল দখলে রাখাতেই পারদর্শী ছিলেন না, বরং রিয়ালের মাঝমাঠের আক্রমণগুলোকেও কার্যকরভাবে ভেঙে দিতে সক্ষম হন, যার ফলে রিয়াল তাদের স্বাভাবিক ছন্দ খুঁজে পায়নি। ম্যাক অ্যালিস্টারের উপস্থিতিতে লিভারপুলের মাঝমাঠ যেন এক দুর্ভেদ্য প্রাচীর তৈরি করেছিল, যা রিয়ালের তারকাখচিত মিডফিল্ডকে অপ্রস্তুত করে তোলে।

    বোতলবন্দি ভিনিসিয়ুস জুনিয়র

    ম্যাচে লিভারপুলের রাইটব্যাক হিসেবে তরুণ কনর ব্র্যাডলির পারফরম্যান্স ছিল এককথায় অসাধারণ এবং ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দেওয়ার অন্যতম নিয়ামক। তিনি রিয়াল মাদ্রিদের সবচেয়ে বিপজ্জনক ফরোয়ার্ডদের একজন, ভিনিসিয়ুস জুনিয়রকে প্রায় পুরোটা সময় নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখেন। ব্র্যাডলির আঁটসাঁট মার্কিংয়ের কারণে রিয়ালের বাম পাশ থেকে উল্লেখযোগ্য কোনো আক্রমণই গড়ে উঠতে পারেনি, যা তাদের আক্রমণাত্মক ধার কমিয়ে দেয়। ভিনিসিয়ুসের মতো একজন গতিশীল উইঙ্গারকে এভাবে নিষ্ক্রিয় করে রাখা রিয়ালের আক্রমণ পরিকল্পনাকে মারাত্মকভাবে ব্যাহত করে। শুধু রক্ষণেই নয়, ব্র্যাডলি সুযোগ পেলেই আক্রমণে উঠে দলের জন্য বেশ কিছু সুযোগ তৈরি করেন, যা তার বহুমুখী প্রতিভার প্রমাণ দেয়।

    গোলমুখে নিষ্প্রভ এমবাপ্পে-বেলিংহামরা

    রিয়াল মাদ্রিদের তারকা ফরোয়ার্ড কিলিয়ান এমবাপ্পে এবং জুড বেলিংহামের মতো খেলোয়াড়রা এই ম্যাচে ছিলেন একেবারেই নিষ্প্রভ। যদিও রিয়াল মাদ্রিদ ম্যাচের ৬১ শতাংশ সময় বলের দখল রেখেছিল, কিন্তু তা ফলপ্রসূ কোনো আক্রমণে রূপান্তরিত হয়নি। গোলমুখে তারা চরম ব্যর্থতার পরিচয় দেয়। এমবাপ্পেদের মোট ‘এক্সজি’ (প্রত্যাশিত গোল) ছিল মাত্র ০.৪৫, যা তাদের আক্রমণভাগের দুর্বলতা এবং ফিনিশিংয়ের অভাবকে স্পষ্টভাবে তুলে ধরে। এত তারকাখচিত দল নিয়েও এমন কম এক্সজি প্রমাণ করে যে, তারা লিভারপুলের রক্ষণে কোনো প্রকৃত বিপদ সৃষ্টি করতে পারেনি। এই সবকিছু মিলিয়ে অ্যানফিল্ডে গত রাতে রিয়ালের জন্য যেন এক শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল, যেখানে তারা নিজেদের ছায়া হয়েই রইল।

    Recent Articles

    Related Stories

    Leave A Reply

    Please enter your comment!
    Please enter your name here