বিশ্ব ফুটবলের মহাতারকা, পর্তুগালের কিংবদন্তি ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো তার বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ারের শেষ প্রান্তে পৌঁছেছেন বলে এক ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য করেছেন। সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে তিনি জানিয়েছেন, অদূর ভবিষ্যতেই তিনি ফুটবল বুট তুলে রাখবেন। তবে অবসরের পর খেলার মাঠ বা এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কোনো কাজেই তিনি আর নিজেকে যুক্ত রাখতে চান না। বরং তার একান্ত চাওয়া, পরিবারের সঙ্গে নিবিড় সময় কাটানো এবং ফুটবলের বাইরে তার নিজস্ব শখ ও আগ্রহের দুনিয়ায় নিজেকে ব্যস্ত রাখা। এই ঘোষণা বিশ্বজুড়ে তার কোটি কোটি ভক্তদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে, যেখানে একদিকে যেমন বিষাদের সুর বাজছে, তেমনি অনেকেই তার এই ব্যক্তিগত সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাচ্ছেন।
খেলা থেকে বিদায় ও মানসিক প্রস্তুতি
প্রখ্যাত সাংবাদিক পিয়ার্স মর্গানের সঙ্গে এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো তার অবসরের ভাবনা নিয়ে খোলামেলা আলোচনা করেছেন। তিনি জানান, “শিগগিরই অবসর নেব। কিন্তু আমি প্রস্তুত। এটা কঠিন হবে, হ্যাঁ, হয়তো আমি কাঁদবও। এটা খুব, খুব কঠিন হবে।” রোনালদোর এই উক্তি তার মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকার ইঙ্গিত দেয়, যদিও আবেগপ্রবণ মুহূর্তগুলো এড়িয়ে যাওয়া তার পক্ষে কঠিন হবে বলে তিনি নিজেই স্বীকার করেছেন। তিনি আরও যোগ করেন, “তবে আমি ২৫, ২৬, ২৭ বছর বয়স থেকেই আমার ভবিষ্যৎ ভেবে রেখেছি। তাই আমি মনে করি, এই চাপ সামলাতে পারব।” ফুটবলের এই দীর্ঘ পথচলায় তিনি নিজেকে কেবল একজন খেলোয়াড় হিসেবেই নয়, বরং একজন দূরদর্শী ব্যক্তি হিসেবেও গড়ে তুলেছেন, যা তাকে অবসরের পরবর্তী জীবনের জন্য প্রস্তুতি নিতে সাহায্য করেছে।
এক ঝলকে ক্যারিয়ার ও ভবিষ্যৎ স্বপ্ন
প্রায় চার দশক ছুঁই ছুঁই এই ফুটবল তারকা তার পেশাদার ক্যারিয়ার শুরু করেছিলেন আজ থেকে প্রায় ২৩ বছর আগে পর্তুগালের বিখ্যাত ক্লাব স্পোর্টিং সিপি থেকে। এরপর ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড, রিয়াল মাদ্রিদ এবং জুভেন্টাসের মতো বিশ্বের সেরা ক্লাবগুলোতে খেলে তিনি নিজেকে সর্বকালের অন্যতম সেরা খেলোয়াড় হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। বর্তমানে তিনি সৌদি প্রো লিগের আল নাসর ক্লাবের হয়ে মাঠ মাতাচ্ছেন, যেখানে তার চুক্তি ২০২৭ সালের জুন মাস পর্যন্ত বহাল আছে। ফুটবলের প্রতি তার শেষ বড় আকুলতা হলো, ২০২৬ সালে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও মেক্সিকোতে অনুষ্ঠিতব্য ফিফা বিশ্বকাপে পর্তুগালের হয়ে দেশকে প্রতিনিধিত্ব করা। দেশের হয়ে বিশ্বকাপ জয় তার ক্যারিয়ারের মুকুটে এক অনবদ্য পালক হয়ে থাকবে, যা অর্জন করতে তিনি বদ্ধপরিকর।
পরিবার ও ব্যক্তিগত আগ্রহের দুনিয়া
পাঁচবারের ব্যালন ডি’অর জয়ী এই ফুটবলার অকপটে স্বীকার করেছেন যে, ফুটবলে গোল করার যে তীব্র উত্তেজনা ও অনবদ্য রোমাঞ্চ, তার সঙ্গে কোনো কিছুরই তুলনা হয় না। তবে ফুটবলের বাইরেও তার বহুবিধ আগ্রহ ও লক্ষ্য রয়েছে। তিনি বলেন, “অবসরের পর আমি নিজের জন্য সময় রাখতে চাই, পরিবারের সঙ্গে থাকতে চাই, সন্তানদের বড় করতে চাই। আমি চাই আরও বেশি পারিবারিক মানুষ হতে।” রোনালদো তার বাগদত্তা জর্জিনা রদ্রিগেজের সঙ্গে পাঁচ সন্তানের জনক। তাদের বড় ছেলে ক্রিশ্চিয়ানো জুনিয়র বর্তমানে আল নাসরের যুব দলে খেলছে এবং পর্তুগালের অনূর্ধ্ব বয়সভিত্তিক দলেও প্রতিনিধিত্ব করেছে, যা রোনালদোর ফুটবলীয় উত্তরাধিকারের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।
ফুটবলের বাইরে এক সুবিশাল সাম্রাজ্য
ফুটবলের মাঠের বাইরেও ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর একটি সুবিশাল বাণিজ্যিক সাম্রাজ্য রয়েছে। তিনি জানান, মাত্র ৩৯ বছর বয়সেই তিনি বিলিয়নিয়ার হওয়ার লক্ষ্য পূরণ করেছেন, যা তার অসাধারণ ব্যবসায়িক দূরদর্শিতার প্রমাণ। তার ব্যক্তিগত ব্র্যান্ড ‘সিআর৭’ এর অধীনে অন্তর্বাস থেকে শুরু করে হোটেল, পারফিউম, জিম সহ বিভিন্ন পণ্য ও সেবার এক বিশাল সম্ভার রয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও তার প্রভাব অসামান্য; তার ইউটিউব চ্যানেলে রয়েছে ৭৭ মিলিয়নেরও বেশি সাবস্ক্রাইবার, যা তাকে বিশ্বের অন্যতম প্রভাবশালী ব্যক্তিত্বে পরিণত করেছে। ফুটবল ছাড়ার পর তিনি এই ব্যবসা এবং তার অন্যান্য শখগুলোতে আরও বেশি মনোনিবেশ করতে চান, যা তাকে নতুন অধ্যায়ে নিজেকে সম্পূর্ণভাবে বিকশিত করার সুযোগ দেবে।
