আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে আত্মবিশ্বাসে টগবগ করছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। দলটির জ্যেষ্ঠ নেতৃত্ব দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে যে, আগামী নির্বাচনে তারা বিপুল ভোটে জয়লাভ করে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব নেবে। এই আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন দলটির মুখ্য সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল) হাসনাত আবদুল্লাহ। তিনি সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করেছেন, যেখানে একদল বুলেটকে ক্ষমতার সিঁড়ি হিসেবে দেখছে, সেখানে এনসিপি সম্পূর্ণ গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায়, অর্থাৎ ব্যালটের মাধ্যমে জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে সরকার গঠন করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এনসিপি সহিংসতা বা বলপ্রয়োগের মাধ্যমে নয়, বরং জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণের মাধ্যমেই রাষ্ট্রক্ষমতার আসনে অধিষ্ঠিত হবে।
পার্বত্য অঞ্চলের সমন্বয় সভা: এনসিপি’র আত্মপ্রকাশ
বৃহস্পতিবার দুপুরে রাঙামাটিতে অনুষ্ঠিত দলটির তিন পার্বত্য জেলার সমন্বয় সভায় হাসনাত আবদুল্লাহ এই মন্তব্য করেন। রাঙামাটি সদরের ঐতিহ্যবাহী অধ্যাপক কুমার সমিত রায় জিমনেসিয়াম প্রাঙ্গণ পরিণত হয়েছিল এনসিপি নেতা-কর্মীদের মিলনমেলায়। এই গুরুত্বপূর্ণ সভায় এনসিপি’র মূল সংগঠনের পাশাপাশি যুবশক্তি, ছাত্রশক্তি এবং শ্রমিকশক্তির বিপুল সংখ্যক নেতা-কর্মী ও সমর্থক অংশ নেন, যা দলটির তৃণমূল স্তরে গভীর প্রভাবের ইঙ্গিত দেয়। এ সভার মধ্য দিয়ে পার্বত্য অঞ্চলের রাজনৈতিক অঙ্গনে এনসিপি’র শক্ত অবস্থান আরও একবার প্রমাণিত হয়েছে।
সভায় বক্তৃতাকালে জাতীয় নাগরিক পার্টি’র কেন্দ্রীয় যুগ্ম মুখ্য সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল) জুবাইরুল আরিফ পার্বত্য অঞ্চলের মানুষের প্রতি এনসিপি’র গভীর অঙ্গীকারের কথা পুনর্ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, “এনসিপি দীর্ঘদিন ধরে পার্বত্য অঞ্চলের বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর মানুষের কল্যাণে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। এর ফলস্বরূপ, এই অঞ্চলের আপামর জনগণ দলটির ওপর অগাধ আস্থা ও বিশ্বাস স্থাপন করেছে।” তিনি আরও যোগ করেন, তিন পার্বত্য জেলায় এনসিপি’র প্রতিটি কর্মসূচিতে শত শত মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ প্রমাণ করে যে, সাধারণ মানুষ এনসিপিকেই তাদের ভরসার স্থল হিসেবে দেখছে এবং তাদের ভবিষ্যৎ পরিবর্তনকারী শক্তি হিসেবে গ্রহণ করছে।
নেতৃবৃন্দের দৃঢ় প্রত্যয়: ১০ বছরের মধ্যে রাষ্ট্রক্ষমতায় এনসিপি
ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব ও রাষ্ট্র পরিচালনার রূপরেখা নিয়ে কথা বলতে গিয়ে এনসিপি’র পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের তত্ত্বাবধায়ক ইমন সৈয়দ এক যুগান্তকারী ঘোষণা দেন। তিনি মন্তব্য করেন, “আমাদের সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা এবং জনগণের অকুণ্ঠ সমর্থন বলছে, আগামী ১০ বছরের মধ্যেই জাতীয় নাগরিক পার্টি রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণ করবে।” পার্বত্য অঞ্চলের মানুষের প্রতি দলের প্রতিশ্রুতির কথা উল্লেখ করে ইমন সৈয়দ বলেন, “আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি যে, তিন পার্বত্য জেলার অন্তত তিনটি গুরুত্বপূর্ণ আসনে এনসিপি’র প্রার্থীরা বিপুল সমর্থন নিয়ে জয়লাভ করবে। কারণ এখানে আমাদের প্রার্থীরা শুধুমাত্র দল নয়, মানুষের আকাঙ্ক্ষারও প্রতিচ্ছবি।”
সমন্বয় সভার এই গুরুত্বপূর্ণ মঞ্চ থেকে আরও বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এ এস এম সুজা উদ্দিন, দলটির কেন্দ্রীয় সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল) মঞ্জিলা ঝুমা, বান্দরবান জেলার প্রধান সমন্বয়কারী শহীদুর রহমান এবং ছাত্রশক্তির দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক মহিরুল ইসলাম। বক্তারা প্রত্যেকেই দলের ঐক্য, জনগণের প্রতি অঙ্গীকার এবং আগামী নির্বাচনে এনসিপি’র বিপুল জয়ের প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন, যা উপস্থিত নেতা-কর্মীদের মধ্যে নতুন উদ্দীপনা ও কর্মোদ্দীপনা সৃষ্টি করে। এই সভা এনসিপি’র ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনা এবং রাষ্ট্র পরিচালনার দৃঢ় সংকল্পের এক সুস্পষ্ট বার্তা নিয়ে আসে।
