আসন্ন ২০২৬ ফিফা বিশ্বকাপের প্রস্তুতিতে এখন থেকেই গভীর মনোনিবেশ করেছে বর্তমান বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনা। এই মেগা ইভেন্টকে সামনে রেখে দল গোছানো এবং নতুন প্রতিভাদের বাজিয়ে দেখতে ব্যস্ত সময় পার করছেন আলবিসেলেস্তে কোচ লিওনেল স্কালোনি। আন্তর্জাতিক বিরতিকে কাজে লাগিয়ে প্রীতি ম্যাচগুলোতে অভিজ্ঞ খেলোয়াড়দের পাশাপাশি তরুণদেরও সুযোগ করে দেওয়া হচ্ছে, যাতে ভবিষ্যতের জন্য একটি শক্তিশালী ও সুষম দল তৈরি করা যায়। এই ধারাবাহিকতার অংশ হিসেবেই চলতি মাসে অ্যাঙ্গোলা সফরের জন্য ঘোষিত স্কোয়াডেও নতুনত্বের ছোঁয়া রেখেছেন তিনি।
তরুণ প্রতিভার আগমন ও গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন
স্পেনে অনুশীলন ক্যাম্প এবং আগামী ১৪ নভেম্বর অ্যাঙ্গোলার বিপক্ষে অনুষ্ঠিতব্য প্রীতি ম্যাচের জন্য ২৪ সদস্যের যে দল ঘোষণা করেছেন লিওনেল স্কালোনি, তাতে উল্লেখযোগ্য চমক হিসেবে তিনজন সম্পূর্ণ নতুন মুখকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এই প্রথমবার আর্জেন্টিনার সিনিয়র দলে ডাক পেয়েছেন প্রতিভাবান ফরোয়ার্ড হোয়াকিন পানিচেলি, প্রতিশ্রুতিশীল মিডফিল্ডার ম্যাক্সিমো পেরোনে এবং ডাইনামিক উইঙ্গার জিয়ানলুকা প্রেস্তিয়ানি। তাদের অন্তর্ভুক্তি স্কালোনির দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার একটি সুস্পষ্ট ইঙ্গিত বহন করে। অন্যদিকে, দলের পরিচিত মুখ ভ্যালেন্তিন বারকো ইনজুরি কাটিয়ে আবারও জাতীয় দলে ফেরার সুযোগ পেয়েছেন। তবে, এই সফরে প্রত্যাশিতভাবেই বিশ্বসেরা গোলরক্ষক এমিলিয়ানো মার্তিনেজকে বিশ্রাম দেওয়া হয়েছে, যা মূল খেলোয়াড়দের কার্যভার ব্যবস্থাপনার একটি অংশ।
এএফএ সভাপতির যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত
স্কালোনির দল ঘোষণার কয়েক ঘণ্টা আগেই একটি গুরুত্বপূর্ণ এবং যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেন আর্জেন্টিনা ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের (এএফএ) সভাপতি ক্লদিও তাপিয়া। তিনি নিশ্চিত করেন যে, এই আন্তর্জাতিক বিরতিতে দেশের ঘরোয়া লিগে খেলা কোনো খেলোয়াড়কে জাতীয় দলে নেওয়া হবে না। এই সিদ্ধান্তটি তাপিয়া এবং স্কালোনির যৌথ আলোচনার ফসল, যার মূল উদ্দেশ্য হলো ক্লাব ফুটবলের ক্ষতি এড়ানো এবং ক্লাবগুলোকে তাদের খেলোয়াড়দের নির্বিঘ্নে ব্যবহার করার সুযোগ দেওয়া। এই দূরদর্শী সিদ্ধান্তটি স্কালোনিকে বিদেশের লিগে খেলা নতুন ও তরুণ প্রতিভাদের খুঁজে বের করতে এবং তাদেরকে জাতীয় দলের পরিবেশে মানিয়ে নেওয়ার সুযোগ করে দিতে বিশেষভাবে প্রভাবিত করেছে, যা দল গঠনে আরও বৈচিত্র্য এনেছে।
আলোচিত তিন নতুন মুখ: এক ঝলকে
আর্জেন্টিনা দলে প্রথমবারের মতো ডাক পাওয়া ত্রয়ীর মধ্যে অন্যতম হলেন ২৩ বছর বয়সী ফরোয়ার্ড হোয়াকিন পানিচেলি। কর্দোবার এই তরুণ খেলোয়াড় রিভার প্লেটের যুব একাডেমি থেকে উঠে এসেছেন এবং বর্তমানে তিনি তার ক্যারিয়ারের সেরা সময় পার করছেন ফরাসি ক্লাব রেসিং স্ত্রাসবুর্গের হয়ে। গত জুলাইয়ে আলাভেস থেকে এই ক্লাবে যোগ দেওয়ার পর থেকে তার পারফরম্যান্স রীতিমতো নজর কাড়া। ৬ ফুট ২ ইঞ্চি উচ্চতার এই শক্তিশালী ফরোয়ার্ড মাত্র ১১ ম্যাচে ৯ গোল করে বর্তমানে ফরাসি লিগ আঁর সর্বোচ্চ গোলদাতা হিসেবে শীর্ষে রয়েছেন। এমনকি ইউরোপা কনফারেন্স লিগে তার অভিষেক ম্যাচেই গোলের দেখা পেয়েছেন, যা তার আক্রমণাত্মক মেধা ও গোল করার ক্ষমতাকে তুলে ধরে।
অন্যদিকে, মাত্র ১৯ বছর বয়সী জিয়ানলুকা প্রেস্তিয়ানি আর্জেন্টিনার অনূর্ধ্ব-২০ বিশ্বকাপ দলের অন্যতম উজ্জ্বল তারকা ছিলেন। আক্রমণভাগের এই দ্রুতগতির এবং অত্যন্ত টেকনিক্যাল খেলোয়াড়টি তার ড্রিবলিং ক্ষমতা ও সুযোগ তৈরি করার দক্ষতার জন্য পরিচিত। বর্তমানে তিনি পর্তুগালের ক্লাব বেনফিকার হয়ে খেলেন, যেখানে তিনি ভবিষ্যতের এক বড় তারকা হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার পথে রয়েছেন। স্কালোনির দলে তার অন্তর্ভুক্তি ভবিষ্যতের জন্য আর্জেন্টিনার আক্রমণভাগকে আরও শক্তিশালী করার একটি স্পষ্ট ইঙ্গিত।
দলের তৃতীয় নতুন মুখ হলেন ২১ বছর বয়সী মিডফিল্ডার ম্যাক্সিমো পেরোনে। ম্যানচেস্টার সিটির একজন উদীয়মান তারকা হিসেবে পরিচিত পেরোনে বর্তমানে স্পেনের লাস পালমাসে ধারে খেলছেন। একজন সেন্ট্রাল মিডফিল্ডার হিসেবে তিনি খেলা নিয়ন্ত্রণ, পাসিং নির্ভুলতা এবং প্রতিপক্ষের আক্রমণ প্রতিহত করার সক্ষমতার জন্য প্রশংসিত। স্কালোনির দলে একজন বল-প্লেয়িং মিডফিল্ডার হিসেবে তার অন্তর্ভুক্তি মধ্যমাঠে আরও গভীরতা এবং কৌশলগত বিকল্প যোগ করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এই তিন তরুণ খেলোয়াড়ের ডাক প্রমাণ করে যে, আর্জেন্টিনা কেবল বর্তমান নয়, বরং ভবিষ্যতের দিকেও নজর রেখে দল গোছানোর কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।
