More

    ঢাকা বায়ুদূষণে আজ বিশ্বে তৃতীয়, সুরক্ষায় যা করতে হবে

    আজ শনিবার, ঢাকার আকাশ যেন এক অদৃশ্য ধোঁয়াশার চাদরে ঢাকা। বায়ুদূষণের মাত্রা এতটাই বিপজ্জনক পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, বিশ্বের ১২৬টি শহরের মধ্যে রাজধানী ঢাকার অবস্থান আজ তৃতীয় স্থানে উঠে এসেছে। এই উদ্বেগজনক পরিস্থিতি নগরবাসীর স্বাস্থ্য ও দৈনন্দিন জীবনে গুরুতর প্রভাব ফেলছে। প্রতি মুহূর্তে বাতাসের বিষাক্ত কণা প্রবেশ করছে ফুসফুসে, যা দীর্ঘমেয়াদী স্বাস্থ্য ঝুঁকির কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে।

    বর্তমান পরিস্থিতি: ঢাকার বায়ুমান

    সকাল ১০টার দিকে সুইসভিত্তিক বায়ুদূষণ পর্যবেক্ষণকারী সংস্থা আইকিউএয়ারের (IQAir) তথ্য অনুযায়ী, ঢাকার গড় বায়ুমান (AQI) রেকর্ড করা হয়েছে ১৯১। এই মানকে ‘অস্বাস্থ্যকর’ হিসেবে শ্রেণীবদ্ধ করা হয়, যা সকল শ্রেণির মানুষের জন্যই উদ্বেগজনক। তবে, কেবল রাজধানী নয়, দেশের অন্যান্য বিভাগীয় শহরও ভয়াবহ দূষণের কবলে। উদাহরণস্বরূপ, খুলনার বায়ুমান আজ ঢাকার চেয়েও খারাপ, যেখানে AQI রেকর্ড করা হয়েছে ১৯৮। এটি নির্দেশ করে যে দেশের পরিবেশগত পরিস্থিতি একটি গুরুতর সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে।

    গতকাল শুক্রবার ঢাকার বায়ুদূষণের মাত্রা কিছুটা কম থাকলেও পরিস্থিতি সন্তোষজনক ছিল না। সেদিন বিশ্বের ১২৬টি শহরের মধ্যে ঢাকার অবস্থান ছিল দশম। তবে, দেশের রাজশাহী, রংপুর এবং খুলনার মতো গুরুত্বপূর্ণ বিভাগীয় শহরগুলোর বায়ুমান গতকালও ঢাকার চেয়ে অনেক বেশি খারাপ ছিল, যা দেশের সার্বিক বায়ুদূষণ পরিস্থিতির ভয়াবহতা তুলে ধরে।

    বায়ুদূষণ পর্যবেক্ষণ ও বৈশ্বিক চিত্র

    সুইজারল্যান্ডভিত্তিক এই প্রতিষ্ঠান আইকিউএয়ার বিশ্বের বিভিন্ন শহরের বায়ুদূষণের অবস্থা নিয়মিতভাবে লাইভ বা তাৎক্ষণিক সূচকের মাধ্যমে প্রকাশ করে। তাদের তৈরি করা এই সূচক বাতাসের গুণগত মান সম্পর্কে জনসাধারণকে সঠিক তথ্য দেয় এবং সম্ভাব্য স্বাস্থ্যঝুঁকি সম্পর্কে সতর্ক করে। এটি নাগরিক ও নীতিনির্ধারকদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার হিসেবে কাজ করে।

    বৈশ্বিক দূষণের চিত্রও বেশ উদ্বেগজনক। গতকালের মতো আজও বায়ুদূষণে শীর্ষস্থানে রয়েছে ভারতের রাজধানী দিল্লি, যেখানে AQI স্কোর ৬৪৩। এরপরেই রয়েছে পাকিস্তানের লাহোর, যার স্কোর ৩৪৬। এই পরিসংখ্যানগুলো দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে ক্রমবর্ধমান বায়ুদূষণের এক ভয়াবহ চিত্র উপস্থাপন করে, যা আঞ্চলিক সহযোগিতার মাধ্যমে সমাধানের দাবি রাখে।

    উদ্বেগজনক জাতীয় প্রবণতা

    লক্ষ্য করা যাচ্ছে যে, রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বায়ুর মান দিনের পর দিন খারাপ হচ্ছে। বিশেষ করে শীতকালে এই পরিস্থিতি আরও নাজুক হয়ে ওঠে। কোনো কোনো দিন দেখা যায়, বিভাগীয় বা অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ শহরগুলোর বায়ুদূষণের মাত্রা ঢাকাকেও ছাড়িয়ে যাচ্ছে, যা কেবল রাজধানীর সমস্যা নয়, বরং দেশের একটি ব্যাপক পরিবেশগত চ্যালেঞ্জের ইঙ্গিত দেয়। এই ধরনের দূষণ কেবল শ্বাসকষ্ট বা ফুসফুসের রোগই নয়, বরং দীর্ঘমেয়াদী হৃদরোগ, স্ট্রোক এবং অন্যান্য জটিল রোগের ঝুঁকিও বাড়িয়ে তোলে।

    দূষণ রোধে করণীয় ও স্বাস্থ্য সুরক্ষা

    বর্তমান অস্বাস্থ্যকর বায়ুমান বিবেচনায়, নাগরিকদের, বিশেষত সংবেদনশীল গোষ্ঠীর সুরক্ষায় অবিলম্বে কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করা অত্যাবশ্যক।

    • মাস্ক পরিধান: বয়স্ক ব্যক্তি, অন্তঃসত্ত্বা নারী, শিশু এবং শারীরিকভাবে অসুস্থ ব্যক্তিদের মতো সংবেদনশীল গোষ্ঠীর মানুষদের অবশ্যই বাইরে বেরোনোর সময় এন৯৫ বা সমমানের মাস্ক পরিধান করতে হবে। এটি ক্ষতিকর কণা থেকে শ্বাসতন্ত্রকে রক্ষা করবে।
    • শারীরিক কার্যকলাপ সীমিতকরণ: খোলা স্থানে শরীরচর্চা বা যেকোনো ধরনের strenuous activity থেকে বিরত থাকতে হবে। উচ্চ দূষণের সময় শারীরিক পরিশ্রম ফুসফুসে ক্ষতিকর কণার প্রবেশ বাড়িয়ে দেয়, যা স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ।
    • জানালা বন্ধ রাখা: ঘরের ভেতরে বায়ুর মান কিছুটা উন্নত রাখতে জানালা ও দরজা যথাসম্ভব বন্ধ রাখতে হবে, বিশেষ করে পিক আওয়ারে। প্রয়োজনে এয়ার পিউরিফায়ার ব্যবহার করা যেতে পারে।

    ঢাকার কিছু ‘অত্যন্ত অস্বাস্থ্যকর’ এলাকা

    আজ রাজধানীতে আটটি এলাকায় দূষণ পরিস্থিতি বিশেষ করে খারাপ ছিল। এর মধ্যে দুটি স্থানের বায়ুর মান ‘খুবই অস্বাস্থ্যকর’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে, যা সর্বোচ্চ সতর্কতার নির্দেশক। এই স্থানগুলো হলো আইসিডিডিআরবি–সংলগ্ন এলাকা এবং দক্ষিণ পল্লবী। এই দুটি স্থানের AQI যথাক্রমে ২১১ এবং ২০১। এছাড়া, মিরপুরের ইস্টার্ন হাউজিং, কল্যাণপুর এবং বেজ এয়ার ওয়াটার আউটলেট সংলগ্ন এলাকার মতো কয়েকটি স্থানেও বায়ুর মান ২০০-এর কাছাকাছি বা তার বেশি ছিল, যা এখানকার বাসিন্দাদের জন্য গুরুতর স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করছে।

    Recent Articles

    Related Stories

    Leave A Reply

    Please enter your comment!
    Please enter your name here