More

    চার আসনে বিক্ষোভ, ফরিদপুরে সংঘর্ষ, আহত ২৩

    আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপির অভ্যন্তরীণ কোন্দল ও অসন্তোষ ক্রমশ স্পষ্ট হয়ে উঠছে। দলের সম্ভাব্য প্রার্থীর নাম ঘোষণার পর পঞ্চম দিনেও অন্তত চারটি নির্বাচনী আসনে তীব্র সংঘাত, বিক্ষোভ ও মিছিলের ঘটনা ঘটেছে। মনোনয়ন প্রত্যাশা এবং কিছু আসনে প্রার্থী পরিবর্তনের দাবিতে দলের অভ্যন্তরে এই উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে, যা দলের ভবিষ্যৎ ঐক্য ও নির্বাচনী কৌশল নিয়ে প্রশ্ন তুলছে।

    বিশেষ করে, গতকাল শুক্রবার ফরিদপুর-১ আসনে বিএনপির দুই মনোনয়ন প্রত্যাশী পক্ষের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে, যা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে। এই সহিংসতায় তিনজন কর্তব্যরত পুলিশ সদস্যসহ উভয় পক্ষের অন্তত তেইশ জন ব্যক্তি আহত হয়েছেন। এর বাইরে, গত বৃহস্পতিবার মধ্যরাত থেকে গতকাল পর্যন্ত প্রার্থী পরিবর্তনের দাবিতে দেশের অন্তত তিনটি নির্বাচনী আসনে লাগাতার বিক্ষোভ কর্মসূচি পালিত হয়েছে।

    উল্লেখ্য, আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে গত সোমবার বিএনপি প্রাথমিকভাবে ২৩৭টি আসনে মনোনীত প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করে। এই ঘোষণার পর থেকেই দলের সিদ্ধান্ত নিয়ে অসন্তোষ ও প্রার্থী বদলের দাবিকে কেন্দ্র করে দেশের অন্তত ১২টি আসনে বিক্ষোভের ঢেউ আছড়ে পড়েছে, যা দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে অস্বস্তিতে ফেলেছে।

    ফরিদপুরে ভয়াবহ সংঘাত: মনোনয়ন ঘিরে তীব্র বিভেদ

    ফরিদপুর-১ আসনটি (বোয়ালমারী, আলফাডাঙ্গা ও মধুখালী উপজেলা নিয়ে গঠিত) বিএনপির জন্য এখনও একটি অমীমাংসিত এলাকা। এই আসনে দল এখনো কোনো একক প্রার্থী ঘোষণা না করলেও, দুটি প্রতিদ্বন্দ্বী পক্ষ নিজেদের মনোনয়ন নিশ্চিত করতে মরিয়া হয়ে মাঠে সক্রিয় রয়েছে। গতকাল বিকেলে জেলার বোয়ালমারী উপজেলা সদরে দলটির দুই পক্ষের মধ্যে সংঘটিত সংঘর্ষে তিনজন পুলিশ সদস্যসহ উভয় দলের অন্তত তেইশ জন কর্মী-সমর্থক আহত হন। এই ঘটনা স্থানীয় রাজনীতিতে এক নতুন মাত্রার উত্তেজনা যোগ করেছে।

    দলীয় সূত্রের খবর অনুযায়ী, বোয়ালমারী উপজেলা বিএনপি মূলত দুটি সুস্পষ্ট ধারায় বিভক্ত। এর একটির নেতৃত্বে রয়েছেন কৃষক দলের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি খন্দকার নাসিরুল ইসলাম, এবং অন্যটির নেতৃত্বে আছেন বোয়ালমারী উপজেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সম্পাদক শামসুদ্দীন মিয়া। উভয় নেতাই আসন্ন সংসদ নির্বাচনে ফরিদপুর-১ আসন থেকে দলীয় মনোনয়ন লাভের আকাঙ্ক্ষায় নিজেদের শক্ত অবস্থান তৈরি করতে চাইছেন, যা এই সংঘাতের মূল কারণ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে।

    গতকাল সংঘটিত সংঘর্ষের সময় বিএনপির এক পক্ষের একটি কার্যালয়ে ব্যাপক হামলা ও ভাঙচুর চালানো হয়। শুধু তাই নয়, আক্রমণকারীরা নির্মমভাবে দৃষ্টিনন্দন অন্তত দশটি মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগ করে। এছাড়া, আশপাশের বেশ কয়েকটি দোকানেও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে, যা স্থানীয় জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি করে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, হামলাকারীদের হাতে রামদা, চাইনিজ কুড়ালসহ বিভিন্ন ধরনের দেশীয় ধারালো অস্ত্রশস্ত্র দেখা গেছে, যা সহিংসতার তীব্রতা প্রমাণ করে।

    দেশজুড়ে প্রার্থী বদলের দাবিতে বিক্ষোভ

    ফরিদপুরের এই সংঘাতময় পরিস্থিতির পাশাপাশি, গত বৃহস্পতিবার মধ্যরাত থেকে শুরু হয়ে গতকাল পর্যন্ত দেশের অন্তত তিনটি নির্বাচনী আসনে প্রার্থী পরিবর্তনের দাবিতে লাগাতার বিক্ষোভ প্রদর্শিত হয়েছে। স্থানীয় কর্মী ও সমর্থকরা নির্বাচিত প্রার্থী নিয়ে তাদের অসন্তোষ প্রকাশ করে পছন্দের ব্যক্তিকে মনোনয়ন দেওয়ার জন্য দলের হাইকমান্ডের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। এই বিক্ষোভগুলো বিএনপির অভ্যন্তরীণ গণতন্ত্র এবং প্রার্থী বাছাই প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন তৈরি করছে

    নির্বাচনের প্রাক্কালে দলের অভ্যন্তরে এমন তীব্র সংঘাত ও বিভেদ বিএনপির নির্বাচনী সাফল্যের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই পরিস্থিতি দ্রুত নিরসন করতে না পারলে, তা দলের সামগ্রিক ঐক্য এবং জনসমর্থনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন।

    Recent Articles

    Related Stories

    Leave A Reply

    Please enter your comment!
    Please enter your name here