৫ই আগস্টের ঐতিহাসিক গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতাচ্যুত হয়ে দেশত্যাগী শেখ হাসিনাকে পুনরায় বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে ফিরিয়ে আনার জন্য ভারত একটি সুদূরপ্রসারী নীলনকশা প্রণয়ন করেছে। কেবল তাই নয়, এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে দেশটি তাদের সর্বশক্তি নিয়োগ করছে বলে দাবি করেছেন সাবেক সংসদ সদস্য গোলাম মাওলা রনি। তার সাম্প্রতিক ইউটিউব ভিডিওতে তিনি এসব চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রকাশ করেন, যা বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং আঞ্চলিক ভূ-রাজনীতিতে নতুন মাত্রা যোগ করেছে।
আন্তর্জাতিক মহলে শেখ হাসিনাকে উপস্থাপনের কৌশল
গোলাম মাওলা রনি তার ইউটিউব চ্যানেলে স্পষ্ট ভাষায় বলেন, “ভারত এই মুহূর্তে তাদের সর্বশক্তি এবং যত কানেকশন রয়েছে সব কানেকশনগুলো ব্যবহার করছে শেখ হাসিনাকে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত ও প্রচারের জন্য।” তিনি আরও উল্লেখ করেন যে, এই নীলনকশার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে শেখ হাসিনার উপস্থিতি নিশ্চিত করা। উদাহরণস্বরূপ, অতি সম্প্রতি শেখ হাসিনা রয়টার্স, ইন্ডিপেন্ডেন্ট এবং এএফপি-এর মতো বিশ্বের তিনটি প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যমকে যে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন, তা এই পরিকল্পনারই অংশ। বিবিসি-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, এই সাক্ষাৎকারগুলো আয়োজনে ভারতের বিভিন্ন প্রভাবশালী সূত্র শেখ হাসিনাকে সক্রিয়ভাবে সহযোগিতা করেছে। এটি ভারতের পক্ষ থেকে শেখ হাসিনার ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধার এবং বৈশ্বিক সমর্থন আদায়ের এক সুচিন্তিত কৌশল বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
ভারতের অবস্থান পরিবর্তন: ‘লকডাউন’ থেকে সর্বাত্মক সমর্থন
রনি তার বিশ্লেষণে ভারতের গত এক বছরের অবস্থান পরিবর্তনের দিকেও ইঙ্গিত করেছেন। তিনি বলেন, শুরুতে ভারতের দৃষ্টিভঙ্গি ছিল ভিন্ন। পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের জন্য শেখ হাসিনাকে এক ধরনের ‘লকডাউন’ অবস্থায় রাখা হয়েছিল। কিন্তু এখন, বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ এবং ভারতের ভূ-রাজনৈতিক স্বার্থের নিরিখে পরিস্থিতি বিচার করে নরেন্দ্র মোদি সরকার শেখ হাসিনাকে সর্বাত্মক সহযোগিতা প্রদান করছে।
তিনি আরও যোগ করেন, “শেখ হাসিনা যতদিন ভারতে আছেন, এটাকে প্রথম দফায় লকডাউন হিসেবে রাখা হয়েছিল।” এই সময়কালে ভারতের থিংকট্যাংক ও নীতি-নির্ধারকরা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে তিনটি প্রধান বিষয় মূল্যায়ন করেছেন:
- বাংলাদেশের জনগণ শেখ হাসিনার অনুপস্থিতি এবং নতুন সরকার সম্পর্কে কীভাবে প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছে।
- ভারতে এই রাজনৈতিক পরিবর্তন এবং শেখ হাসিনার অবস্থানের বিষয়ে জনমত ও রাজনীতিবিদদের মধ্যে কী ধরনের প্রতিক্রিয়া তৈরি হচ্ছে।
- সর্বোপরি, শেখ হাসিনা নিজে এই জটিল পরিস্থিতি কীভাবে মোকাবেলা করছেন এবং তার নেতৃত্ব কতটা কার্যকর হতে পারে।
আওয়ামী লীগ ও শেখ হাসিনার অপরিহার্যতা নিয়ে ভারতের সিদ্ধান্ত
বিস্তারিত বিশ্লেষণ ও মূল্যায়নের পর ভারত একটি সুনির্দিষ্ট সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছে বলে গোলাম মাওলা রনি দাবি করেন। তার মতে, ভারত এখন শতভাগ নিশ্চিত যে, বাংলাদেশের রাজনীতিতে আওয়ামী লীগের বিকল্প কোনো বিশ্বস্ত মিত্র তাদের নেই, এবং আওয়ামী লীগের মধ্যেও শেখ হাসিনার বিকল্প কোনো নেতা নেই যিনি তাদের স্বার্থ রক্ষা করতে পারবেন। এই দৃঢ় বিশ্বাসই ভারতকে শেখ হাসিনাকে ফিরিয়ে আনার এই ব্যাপক ও জোরালো প্রচেষ্টায় উদ্বুদ্ধ করেছে। রনি উল্লেখ করেন, গত চৌদ্দ মাসে বাংলাদেশে শেখ হাসিনা এবং আওয়ামী লীগ সম্পর্কে যে ব্যাপক নেতিবাচক প্রচার ও জনমত তৈরি হয়েছে, ভারত তা সত্ত্বেও তাদের এই সিদ্ধান্তে অটল রয়েছে। এই পরিস্থিতি আঞ্চলিক ক্ষমতার ভারসাম্যে এবং বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ রাজনীতিতে সুদূরপ্রসারী প্রভাব ফেলবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
