কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জ উপজেলায় এক উল্লেখযোগ্য রাজনৈতিক দলবদলির ঘটনা ঘটেছে, যেখানে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) ও এর বিভিন্ন সহযোগী সংগঠনের ৬২ জন সক্রিয় নেতাকর্মী আনুষ্ঠানিকভাবে জামায়াতে ইসলামীতে যোগদান করেছেন। একই সাথে, গণঅধিকার পরিষদের দুই জন শীর্ষস্থানীয় নেতাও এই অনুষ্ঠানে জামায়াতের আদর্শিক পতাকাতলে শামিল হয়েছেন। এই ঘটনা স্থানীয় রাজনীতিতে নতুন মেরুকরণের ইঙ্গিত দিচ্ছে এবং বিভিন্ন মহলে আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
গণঅধিকার পরিষদ ও বিএনপির ৬৪ নেতাকর্মীর জামায়াতে যোগদান
গত শনিবার, ৮ নভেম্বর রাতে করিমগঞ্জ উপজেলার জয়কা ইউনিয়নের ঝাউতলা বাজারে আয়োজিত এক বর্ণাঢ্য এবং সুসংগঠিত অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে এই গণযোগদান সম্পন্ন হয়। নবাগতদের ফুলেল শুভেচ্ছার মাধ্যমে বরণ করে নেওয়া হয়, যা তাঁদের নতুন রাজনৈতিক যাত্রার আনুষ্ঠানিক সূচনা করে। এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় মজলিশে শূরার অন্যতম সদস্য এবং কিশোরগঞ্জ-৩ (করিমগঞ্জ–তাড়াইল) আসনের মনোনীত সংসদ সদস্য প্রার্থী অধ্যাপক কর্নেল (অব.) ডা. জেহাদ খান। তাঁর উপস্থিতিতে যোগদানকারীদের মধ্যে উদ্দীপনা ছিল লক্ষণীয়।
যাঁরা দলবদল করলেন: একটি বিস্তারিত চিত্র
জামায়াতে ইসলামীতে যোগদানকারী ৬২ জন বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীর মধ্যে উল্লেখযোগ্য রয়েছেন: করিমগঞ্জ উপজেলার জয়কা ইউনিয়ন যুবদলের সংগঠনিক সম্পাদক আল হারুন, নোয়াবাদ ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ড বিএনপির সহসভাপতি নজরুল ইসলাম, নোয়াবাদ ইউনিয়ন ছাত্রদলের সদস্য আবদুল হক, জয়কা ৩নং ওয়ার্ডের সভাপতি বিল্লাল হোসেন এবং নোয়াবাদ ইউনিয়ন যুবদলের প্রচার সম্পাদক শফিকুল ইসলাম খোকন। এছাড়াও, ছানাউল্লাহ, আল আমিন, যুবদল নেতা হিমেলসহ আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ ও সক্রিয় কর্মী এই দলে নাম লিখিয়েছেন, যা নিঃসন্দেহে জামায়াতের সাংগঠনিক শক্তিকে আরও বৃদ্ধি করবে।
বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের বাইরে, গণঅধিকার পরিষদ থেকেও দুইজন প্রভাবশালী নেতা জামায়াতে ইসলামীতে যোগ দিয়েছেন। এঁদের মধ্যে রয়েছেন গণঅধিকার পরিষদের নেতা আব্দুল জব্বার এবং করিমগঞ্জ উপজেলা ছাত্র অধিকার পরিষদের সাবেক সভাপতি শহিদুল ইসলাম। এই যোগদান স্থানীয় রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে ভিন্ন মাত্রা যোগ করেছে।
দলবদলের নেপথ্যের কারণ: আল হারুনের স্পষ্ট বক্তব্য
যোগদানকারী যুবদল নেতা আল হারুন তাঁর রাজনৈতিক অবস্থান পরিবর্তনের কারণ ব্যাখ্যা করে বলেন, “আমি ২০০৯ সাল থেকে যুবদলের রাজনীতির সঙ্গে নিবিড়ভাবে যুক্ত ছিলাম। তবে, ৫ আগস্টের বিএনপি এবং বর্তমান বিএনপির মধ্যে আমি সুস্পষ্ট পার্থক্য দেখতে পাচ্ছি। বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি গভীরভাবে পর্যালোচনা করে আমি এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছি যে, বাংলাদেশে একমাত্র জামায়াতে ইসলামীই ইনসাফভিত্তিক রাজনীতি (ন্যায় ও সুবিচার প্রতিষ্ঠা) অনুশীলন করে।”
তিনি আরও যোগ করেন, “ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন শীর্ষস্থানীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অনুষ্ঠিত ছাত্র সংসদ নির্বাচনগুলোতে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের প্রার্থীরা শিক্ষার্থীদের ভোটে নির্বাচিত হয়ে নেতৃত্বে এসেছে, যা আমাকে অত্যন্ত অনুপ্রাণিত করেছে। শিক্ষার্থীদের এই সমর্থন জামায়াতের আদর্শের প্রতি তরুণ সমাজের ক্রমবর্ধমান আস্থারই প্রতিফলন।”
অধ্যাপক কর্নেল (অব.) ডা. জেহাদ খানের দূরদর্শী বার্তা
অনুষ্ঠানে উপস্থিত থেকে নবাগতদের বরণ করে নেওয়ার সময় অধ্যাপক কর্নেল (অব.) ডা. জেহাদ খান তাঁর বক্তব্যে দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং জামায়াতের ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনা নিয়ে আলোকপাত করেন। তিনি বলেন, “দেশের জনগণ আজ ন্যায়, সুবিচার এবং ইসলামভিত্তিক একটি সুশৃঙ্খল শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠায় দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। জামায়াতে ইসলামী এই লক্ষ্য অর্জনে বদ্ধপরিকর এবং দেশের সর্বস্তরের মানুষের প্রত্যাশা পূরণে আমরা অবিরাম কাজ করে যাবো।” তাঁর এই বক্তব্যে জামায়াতের আদর্শিক অবস্থান এবং ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক দিকনির্দেশনা স্পষ্ট হয়ে ওঠে।
এই গণযোগদান করিমগঞ্জ অঞ্চলের রাজনৈতিক গতিপথে এক নতুন বাঁক এনেছে এবং আগামী দিনে এর প্রভাব আরও সুস্পষ্ট হবে বলে পর্যবেক্ষক মহল মনে করছেন।
