More

    মেসির বিশ্বরেকর্ডের রাতে ইতিহাস গড়ে সেমিফাইনালে মিয়ামি

    ফুটবল জাদুকর লিওনেল মেসির অবিশ্বাস্য পারফরম্যান্সে ভর করে মেজর লীগ সকারের (MLS) প্লে-অফের সেমিফাইনালে নিজেদের জায়গা করে নিয়েছে ইন্টার মায়ামি। শনিবার রাতে ইস্টার্ন কনফারেন্সের প্রথম রাউন্ডের তৃতীয় ও শেষ ম্যাচে ন্যাশভিল এসসি-কে ৪-০ গোলের বিশাল ব্যবধানে পরাজিত করে মেসির নেতৃত্বাধীন দলটি। এই জয়ে, ইন্টার মায়ামি এখন এমএলএস কাপের শিরোপা থেকে মাত্র তিনটি জয় দূরে দাঁড়িয়ে। এই ঐতিহাসিক রাতে কেবল ইন্টার মায়ামিই ইতিহাস গড়েনি, তাদের অধিনায়ক লিওনেল মেসিও স্পর্শ করেছেন এক নতুন বিশ্বরেকর্ড।

    মেসির জাদুকরী পারফরম্যান্স ও জোড়া গোল

    ম্যাচের শুরু থেকেই আক্রমণাত্মক ফুটবল খেলতে থাকে ইন্টার মায়ামি। খেলার দশম মিনিটেই জাদুকরি মুহূর্তের জন্ম দেন মেসি। চারজন ডিফেন্ডারের নিশ্ছিদ্র বেষ্টনী ভেদ করে বক্সের বাইরে থেকে তার বাঁ পায়ের বাঁকানো শট খুঁজে নেয় প্রতিপক্ষের জাল। এই গোল শুধু দলের এগিয়ে যাওয়াই নিশ্চিত করেনি, ন্যাশভিলের আত্মবিশ্বাসেও বড় আঘাত হানে। এরপর ৩৯ মিনিটে আসে মেসির দ্বিতীয় গোল, যা তার সুযোগসন্ধানী ক্ষমতার এক জ্বলন্ত প্রমাণ। সতীর্থ মাতেও সিলভেত্তি প্রতিপক্ষ ডিফেন্ডারকে দারুণভাবে কাটিয়ে বল বাড়িয়ে দেন মেসির দিকে। গোলরক্ষককে কৌশলে পরাস্ত করে ফাঁকা পোস্টে বল জড়িয়ে দেন এই আর্জেন্টাইন মহাতারকা, দলের লিডকে দ্বিগুণ করেন।

    দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে ন্যাশভিল কিছুটা প্রতিরোধ গড়ার চেষ্টা করে এবং একটি গোলও পেয়েছিল বলে মনে হয়, কিন্তু ফাউলের কারণে শেষ পর্যন্ত সেটি বাতিল হয়ে যায়, যা ন্যাশভিলের ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্নকে ভেস্তে দেয়। এরপর ম্যাচের ৭৪তম ও ৭৬তম মিনিটে তরুণ মিডফিল্ডার তাদেও আইয়েন্দের জোড়া গোল ইন্টার মায়ামির জয়কে আরও সহজ করে তোলে এবং সেমিফাইনালের টিকিট নিশ্চিত করে। আইয়েন্দের এই গোলগুলো শুধু স্কোরলাইনকেই বড় করেনি, দলের আত্মবিশ্বাসও বহুগুণে বাড়িয়ে দেয়।

    মেসির অনন্য বিশ্বরেকর্ড

    এই ম্যাচের ৭৬তম মিনিটে, তাদেও আইয়েন্দের দ্বিতীয় গোলে অ্যাসিস্ট করে লিওনেল মেসি শুধু একটি জয়ই নিশ্চিত করেননি, তিনি ফুটবল ইতিহাসের পাতায় নিজের নাম নতুন করে খোদাই করেছেন। চলতি শতাব্দীতে প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে তিনি ৪০০টি গোলে অ্যাসিস্ট করার অবিশ্বাস্য বিশ্বরেকর্ড গড়েছেন। এই মুহূর্তে খেলা চালিয়ে যাচ্ছেন, এমন অন্য কোনো খেলোয়াড়ের নামের পাশে ৩০০টি অ্যাসিস্টও নেই, যা মেসির এই অর্জনকে আরও অনন্য করে তুলেছে। তার এই রেকর্ড প্রমাণ করে যে তিনি কেবল একজন অসাধারণ গোলদাতা নন, একইসাথে সতীর্থদের জন্য সুযোগ তৈরি করতে এবং খেলার গতিপথ পরিবর্তনেও তিনি অদ্বিতীয়।

    ইন্টার মায়ামির ঐতিহাসিক অর্জন

    ন্যাশভিলের বিপক্ষে এই অবিস্মরণীয় জয় ইন্টার মায়ামির জন্যেও এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে। এই প্রথমবারের মতো দলটি এমএলএস প্লে-অফের সেমিফাইনাল পর্যন্ত নিজেদের পথ করে নিয়েছে। এর আগে দক্ষিণ ফ্লোরিডার কোনো ক্লাব হিসেবে ২০০১ সালে মিয়ামি ফিউশন সেমিফাইনালে পৌঁছেছিল, কিন্তু ইন্টার মায়ামির জন্য এটি সম্পূর্ণ এক নতুন এবং ঐতিহাসিক অধ্যায়। মেসির আগমনের পর থেকে এই ক্লাবের পারফরম্যান্সে যে আমূল পরিবর্তন এসেছে, এই অর্জন তারই জ্বলন্ত প্রমাণ। দল এখন ট্রফি জয়ের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে।

    আগামী দিনের চ্যালেঞ্জ: শিরোপার পথে মায়ামি

    সেমিফাইনালে ইন্টার মায়ামিকে এখন মুখোমুখি হতে হবে শক্তিশালী সিনসিনাতির। এই ম্যাচের জয়ী দল ইস্টার্ন কনফারেন্সের ফাইনালে ফিলাডেলফিয়া ইউনিয়ন অথবা এনওয়াইসি এফসির সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে। আগামী ৬ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হবে এই বহু প্রতীক্ষিত ফাইনাল ম্যাচটি। আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, ফিলাডেলফিয়া, সিনসিনাতি অথবা ইন্টার মায়ামি—এই তিন দলের মধ্যে যে দলটি ফাইনালে খেলার যোগ্যতা অর্জন করবে, তারাই হবে ফাইনাল ম্যাচের আয়োজক। এটি হোম গ্রাউন্ডে খেলার একটি বিশাল সুবিধা দেবে।

    সব মিলিয়ে, লিওনেল মেসির অসাধারণ ফুটবল নৈপুণ্য এবং দলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় ইন্টার মায়ামি এখন এমএলএস কাপের শিরোপা জয়ের সুবর্ণ সুযোগের সামনে দাঁড়িয়ে। এই ঐতিহাসিক জয়গুলো ক্লাবটিকে এক নতুন উচ্চতায় নিয়ে গেছে এবং সমর্থকরা অধীর আগ্রহে তাদের প্রথম এমএলএস শিরোপার স্বপ্ন বুনছে। মেসির জাদুতে মায়ামির যাত্রা কেবল শুরু।

    Recent Articles

    Related Stories

    Leave A Reply

    Please enter your comment!
    Please enter your name here