হিমেল পরশে পঞ্চগড়ের হেমন্ত: উত্তরাঞ্চলের শীতের পূর্বাভাস
দেশের সর্ব উত্তরের জনপদ হিসেবে পরিচিত পঞ্চগড় জেলায় হেমন্তের সূচনা লগ্নেই প্রকৃতিতে শীতের আবহ স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। দিন যত গড়াচ্ছে, তাপমাত্রার পারদ ততই নিম্নগামী হয়ে প্রকৃতির বুকে শীতের আগমনী বার্তা ঘোষণা করছে। সন্ধ্যা নামলেই এক শীতল পরশ অনুভূত হচ্ছে, যা রাতভর কুয়াশার ঘন চাদর বিছিয়ে সকাল পর্যন্ত বিরাজ করছে। এই পরিবর্তন পঞ্চগড়ের মানুষের দৈনন্দিন জীবনে এনেছে নতুন এক ঋতুচক্রের ছোঁয়া।
তাপমাত্রার সর্বশেষ চিত্র: পঞ্চগড় ও দেশের সর্বনিম্ন রেকর্ড
তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, আজ সোমবার সকাল ৯টায় পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় দিনের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১৬ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যদিও এটি দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল না। দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা আজ রেকর্ড করা হয়েছে রাজশাহীতে, যেখানে পারদ নেমেছিল ১৬ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। এই পরিসংখ্যানই বলে দিচ্ছে, দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলজুড়ে এখন শীতের পূর্বাভাস বেশ তীব্র।
কুয়াশার চাদর ভেদ করে রোদের ঝলকানি
রাত থেকে ভোর পর্যন্ত পঞ্চগড় জেলাজুড়ে ছিল ঘন কুয়াশার এক আস্তরণ, যা দিগন্তকে আবৃত করে রেখেছিল সাদা চাদরে। কিন্তু বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কুয়াশার সেই নিশ্ছিদ্র আবরণ ধীরে ধীরে পাতলা হয়ে আসে, এবং পূব আকাশে উঁকি দেয় ঝলমলে সোনালী সূর্য। শীতের এই সময়ে দিনেরবেলায় রোদের উপস্থিতি এক আরামদায়ক অনুভূতি এনে দেয়, যা শীতের তীব্রতাকে কিছুটা প্রশমিত করে তোলে।
বিশেষজ্ঞের দৃষ্টিতে পঞ্চগড়ের আবহাওয়া
তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জিতেন্দ্র নাথ রায় মুঠোফোনে প্রথম আলোকে জানান, গত কয়েক দিন ধরেই তেঁতুলিয়ায় দিনের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ক্রমশ কমছে। এই কারণে সন্ধ্যা নামার সাথে সাথেই হিমেল হাওয়া অনুভূত হচ্ছে এবং এই অনুভূতি সকাল পর্যন্ত স্থায়ী হচ্ছে। তবে দিনের বেলায় দীপ্তিময় সূর্যের উপস্থিতির কারণে দিন ও রাতের সর্বোচ্চ এবং সর্বনিম্ন তাপমাত্রার মধ্যে একটি উল্লেখযোগ্য ব্যবধান সৃষ্টি হচ্ছে। তিনি আরও উল্লেখ করেন যে, চলতি নভেম্বর মাসে তাপমাত্রা কমলেও আপাতত কোনো তীব্র শৈত্যপ্রবাহের আশঙ্কা নেই। তবে ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহের দিকে এই অঞ্চলে একটি মৃদু শৈত্যপ্রবাহ দেখা দিতে পারে, এমন পূর্বাভাসও তিনি দিয়েছেন।
হিমালয়ের সান্নিধ্য ও শীতের আগমন
হিমালয়ের পাদদেশ সংলগ্ন হওয়ায় ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে পঞ্চগড় জেলায় প্রতি বছরই অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় শীতের আগমন ঘটে কিছুটা আগে, এবং শীত বিদায়ও নেয় দেরিতে। বর্তমানে হেমন্তের মাঝামাঝি সময়েই এখানকার প্রকৃতিতে শীতের প্রকট উপস্থিতি লক্ষ করা যাচ্ছে। গত কয়েক দিন ধরে রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শীতের অনুভূতিও তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে। এর ফলস্বরূপ, স্থানীয় বাসিন্দারা রাতে হালকা কাঁথা-কম্বল গায়ে জড়িয়ে ঘুমাতে বাধ্য হচ্ছেন, যা এই অঞ্চলের প্রাথমিক শীতের স্বাভাবিক চিত্র।
আজ সকালে পঞ্চগড় সদর উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে এক অপূর্ব প্রাকৃতিক দৃশ্য। কুয়াশাচ্ছন্ন সকালের পূর্ব আকাশে সূর্য তার সোনালী আভা ছড়াতে শুরু করেছে, কুয়াশার সাথে যেন এক মৃদু লুকোচুরি খেলা চলছে। সড়কের পাশের ঘাসে এবং ফসলের মাঠে জমে থাকা শিশিরবিন্দুগুলো সূর্যের আলোয় মুক্তার মতো ঝলমল করছে, যা শীতের আগমনকে আরও বেশি সুস্পষ্ট করে তুলেছে। এই মনোরম দৃশ্য শীতপ্রেমীদের জন্য এক ভিন্ন আমেজ সৃষ্টি করছে।
