রাজশাহী-৫ (পুঠিয়া-দুর্গাপুর) আসনে বিএনপির প্রার্থী মনোনয়ন নিয়ে অভ্যন্তরীণ কোন্দল ও অসন্তোষ তীব্র আকার ধারণ করেছে। দলটির স্থানীয় নেতা-কর্মীদের একাংশ বর্তমান ঘোষিত প্রার্থী নজরুল ইসলাম মন্ডলের মনোনয়ন বাতিলের দাবিতে সরব হয়েছেন। সম্প্রতি এক সাংবাদিক সম্মেলনে তাঁরা নজরুল ইসলামকে ‘জনবিচ্ছিন্ন’ আখ্যা দিয়ে তৃণমূলের পরীক্ষিত, ত্যাগী ও জনপ্রিয় কোনো নেতাকে মনোনয়ন দেওয়ার জন্য জোর দাবি জানিয়েছেন। এই ঘটনা আসন্ন নির্বাচনের আগে দলের মধ্যে নতুন করে অস্থিরতা সৃষ্টি করেছে।
দাবির মূলে জনবিচ্ছিন্নতার অভিযোগ
বিক্ষোভকারী নেতা-কর্মীদের মূল অভিযোগ হলো, নজরুল ইসলাম মন্ডল তৃণমূলের সঙ্গে সম্পর্কহীন এবং তাঁর কোনো শক্তিশালী জনভিত্তি নেই। তাঁদের মতে, এমন একজন প্রার্থীকে মনোনয়ন দিলে আসনটি ধরে রাখা কঠিন হবে। তাঁরা বিশ্বাস করেন, যাঁরা দীর্ঘ সময় ধরে দলের জন্য আত্মত্যাগ করেছেন, বিভিন্ন প্রতিকূল পরিস্থিতিতে নেতা-কর্মীদের পাশে দাঁড়িয়েছেন, কেবল তাঁদের মধ্য থেকেই যোগ্য প্রার্থী নির্বাচন করা উচিত। এই দাবি মূলত তিন সম্ভাব্য প্রার্থীর সমর্থকদের পক্ষ থেকে উত্থাপিত হয়েছে, যাঁদের নাম বারবার উচ্চারিত হচ্ছে।
সংবাদ সম্মেলনের প্রেক্ষাপট ও উপস্থিতি
গত রবিবার বিকেলে দুর্গাপুর প্রেসক্লাবে এই গুরুত্বপূর্ণ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এই সময়ে তিনটি প্রভাবশালী পক্ষের সমর্থকেরা উপস্থিত ছিলেন, যা এই দাবির ব্যাপকতাকে নির্দেশ করে। উপস্থিত ছিলেন বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য আবু বকর সিদ্দিক, পুঠিয়া উপজেলা বিএনপির সাবেক সহসভাপতি ইশফাক খায়রুল হক এবং প্রয়াত জনপ্রিয় নেতা নাদিম মোস্তফার সুযোগ্য পুত্র জুলফান নাঈম মোস্তফার সমর্থকেরা। সংবাদ সম্মেলন চলাকালীন প্রেসক্লাবের ভেতরে ও বাইরে কয়েকশো নেতা-কর্মীর স্বতঃস্ফূর্ত উপস্থিতি দেখা যায়, যাঁরা নিজ নিজ পছন্দের প্রার্থীর পক্ষে গগনবিদারী স্লোগান দিয়ে পরিস্থিতিকে আরও উত্তপ্ত করে তোলেন। এই প্রতিবাদী জনসমাগম তাঁদের দাবির প্রতি দৃঢ় সমর্থনের ইঙ্গিত বহন করে।
ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট এবং বিতর্কিত অতীত
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন রাজশাহী জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক হারুনুর রশিদ, পুঠিয়া উপজেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক রফিকুল ইসলাম এবং দুর্গাপুর পৌর বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মাইনুল ইসলাম। তাঁদের বক্তব্যে বলা হয়, ১৯৯৬ সালের আগে রাজশাহী-৫ আসনটি বিএনপির শক্ত ঘাঁটি ছিল না। সেই কঠিন সময়ে প্রয়াত নাদিম মোস্তফাকে মনোনয়ন দেওয়া হলে তিনি বিপুল ভোটে জয়ী হয়ে আসনটি বিএনপিকে উপহার দেন, যা দলের ইতিহাসে এক মাইলফলক। এর বিপরীতে, তাঁরা নজরুল ইসলাম মন্ডলের ১৯৯৬ সালের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। তাঁদের দাবি, সে সময় তিনি দলীয় সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে গিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন এবং তাঁর জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছিল। এই ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট টেনে তাঁরা বর্তমান প্রার্থীর অতীত আনুগত্য ও কার্যকারিতা নিয়ে গভীর সন্দেহ প্রকাশ করেন।
সংকটে অবিচল নেতৃত্ব ও প্রত্যাশিত প্রার্থী
লিখিত বক্তব্যে নেতারা আরও বলেন, দুঃসময়ে যাঁরা মিথ্যা মামলা ও রাজনৈতিক আক্রমণের শিকার হয়েছেন, কারাবরণ করেছেন এবং ব্যবসা-বাণিজ্য হারিয়ে চরম ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন, তাঁদের মধ্য থেকেই প্রকৃত ত্যাগী নেতাদের নির্বাচন করা উচিত। তাঁরা আবু বকর সিদ্দিক, ইশফাক খায়রুল হক এবং জুলফান নাঈম মোস্তফার মতো নেতাদের উদাহরণ টেনে বলেন যে, এঁরা সবাই সংকটময় মুহূর্তে মাঠে ছিলেন, নেতা-কর্মীদের পাশে থেকেছেন এবং দলের জন্য নিজেদের নিবেদন করেছেন। এই তিন জন নেতা কেবল পরীক্ষিতই নন, বরং তাঁরা দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে অসংখ্য বাধার মোকাবিলা করে নিজেদের যোগ্যতা প্রমাণ করেছেন। তাঁরা বিশ্বাস করেন, এমন আত্মত্যাগী ও নিবেদিতপ্রাণ নেতৃত্বই রাজশাহী-৫ আসনে বিএনপির বিজয় নিশ্চিত করতে পারে এবং দলকে আরও সুসংহত করতে সাহায্য করবে। তাঁদের দাবি, দলের উচ্চপর্যায় যেন তৃণমূলের এই জোরালো কণ্ঠস্বরকে গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করে এবং জনআকাঙ্ক্ষা পূরণের লক্ষ্যে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে।
