More

    মাইনাস ২ ডিগ্রিতে চার ঘণ্টার ফাইনাল, তুষারে ঢাকা মাঠে শমিত সোমদের হার

    কানাডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের ফাইনাল সবসময়ই তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা ও নাটকীয়তার জন্য পরিচিত। তবে এবারের আসরের শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচটি শুধু ফুটবলীয় লড়াইয়ের জন্য নয়, বরং এক অভূতপূর্ব প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে ইতিহাসের পাতায় জায়গা করে নিয়েছে। কানাডার রাজধানী অটোয়ার টিডি প্লেস স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত এই ফাইনালে মুখোমুখি হয়েছিল শমিত সোমের দল ক্যাভালরি এফসি এবং আতলেতিকো অটোয়া। ৯০ মিনিটের লড়াই ১-১ গোলে সমতা নিয়ে শেষ হওয়ার পর ম্যাচ গড়িয়েছিল অতিরিক্ত সময়ে, যেখানে শেষ হাসি হেসেছে আতলেতিকো অটোয়া, ২-১ ব্যবধানে জয় নিয়ে শিরোপা নিজেদের করে নিয়েছে।

    কিন্তু এই গোল, পাল্টা গোল এবং শিরোপার হাড্ডাহাড্ডি লড়াইকেও ছাপিয়ে ম্যাচের মূল আলোচনায় চলে আসে ভয়াবহ আবহাওয়া। বাংলাদেশ জাতীয় দলের মিডফিল্ডার শমিত সোম এবং তার ক্লাব সতীর্থদের খেলতে হয়েছে এক হাড় কাঁপানো মাইনাস ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার মধ্যে। ম্যাচের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত স্টেডিয়াম জুড়ে ছিল অবিরাম তুষারপাত, যা খেলার স্বাভাবিক ছন্দকে সম্পূর্ণভাবে ব্যাহত করে। বারবার খেলা বন্ধ করতে হয়েছে, আর মাঠ থেকে তুষার সরাতেই কেটে গেছে মূল্যবান অনেকটা সময়। এমনকি কনকনে শীতের তীব্রতার কারণে খেলোয়াড়দের ড্রেসিংরুমে পাঠানো নিয়েও তৈরি হয়েছিল বিতর্ক। সব মিলিয়ে, দুই ঘণ্টার নির্ধারিত খেলা শেষ হতে লেগে যায় প্রায় চার ঘণ্টা, যা এক নজিরবিহীন ঘটনা।

    মাঠজুড়ে কুড়ি সেন্টিমিটার তুষারপাত: প্রকৃতির রুদ্ররূপ

    দ্য অ্যাথলেটিকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ফাইনালের দিনে কানাডার অন্টারিও প্রদেশজুড়ে মৌসুমের প্রথম বড় ধরনের তুষারঝড় বইছিল। শুধু অটোয়াতেই প্রায় ২০ সেন্টিমিটার পুরু তুষারের স্তর জমেছিল। ফুটবল কানাডার প্রেক্ষাপটে তুষারের মধ্যে খেলা কোনো নতুন ঘটনা নয়, তবে এমন পরিস্থিতিতে মাঠের টাচলাইন বা পেনাল্টি এলাকার মতো গুরুত্বপূর্ণ দাগগুলো আলাদা করে চেনা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে। খেলার সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করতে ম্যাচের সকাল থেকেই শুরু হয় তুষার সরানোর প্রাণপণ চেষ্টা

    এই বিশাল কর্মযজ্ঞে ব্যবহার করা হয়েছিল অত্যাধুনিক স্নোপ্লাউ (তুষার পরিষ্কারক যান), স্নোব্লোয়ার্স (তুষার ওড়ানোর যন্ত্র) এবং সনাতন কোদালও। কিন্তু প্রকৃতির বিশালতার কাছে এই সব আয়োজনও যেন যথেষ্ট ছিল না। তীব্র তুষারপাতের কারণে মাঠকে খেলার উপযোগী করে তোলা কঠিন হয়ে পড়েছিল, যার ফলস্বরূপ নির্ধারিত সময়ে খেলা শুরু করা সম্ভব হয়নি।

    বিলম্বিত কিক অফ এবং কোচদের প্রতিক্রিয়া

    তুষার সরানোর নিরন্তর চেষ্টার পরও খেলা শুরু হতে ২০ মিনিট বিলম্ব হয়। তুষারাবৃত মাঠে ফুটবল খেলা অনেক দর্শককে রোমাঞ্চিত করলেও, খেলোয়াড়দের জন্য এটি কতটা কষ্টদায়ক হতে পারে, তা নিয়ে ম্যাচের আগে মন্তব্য করেন ক্যাভালরি এফসির কোচ টমি হুইলডন জুনিয়র। তিনি বলেন, “এই আবহাওয়া সাহসীদের জন্য। (ফাইনালটি) সঙ্গীত থেকে অ্যাকশন মুভিতে রূপ নেবে।” তার এই কথাটি যেন ম্যাচের বাস্তব চিত্রকে পুরোপুরিভাবে তুলে ধরেছিল – যেখানে খেলোয়াড়দের প্রতিটি পদক্ষেপ ছিল এক কঠিন সংগ্রাম।

    প্রতিবেদনে আরও কিছু বিষয় উঠে এসেছিল, যার মধ্যে অটোয়া কোচ দিয়েগো মেজিয়ার বদলি খেলোয়াড়দের নিয়ে সম্ভাব্য বিতর্কও উল্লেখযোগ্য ছিল, যা প্রতিকূল আবহাওয়ার মধ্যে কৌশলগত সিদ্ধান্ত গ্রহণের জটিলতাকে ইঙ্গিত করে। এই ফাইনালটি প্রমাণ করেছে যে, ফুটবল মাঠে কেবল খেলোয়াড়দের দক্ষতা বা কোচের কৌশলই জয়-পরাজয় নির্ধারণ করে না, কখনো কখনো প্রকৃতিও হয়ে ওঠে এক অপ্রতিরোধ্য প্রতিপক্ষ।

    Recent Articles

    Related Stories

    Leave A Reply

    Please enter your comment!
    Please enter your name here