নীতি ও আদর্শের প্রশ্নে কোনো আপস নয়, বরং প্রয়োজনে রাজনৈতিক আত্মাহুতিও শ্রেয় – এমনটাই দৃঢ়তার সাথে ব্যক্ত করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)’র কেন্দ্রীয় মুখ্য সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল) হাসনাত আবদুল্লাহ। তিনি স্পষ্ট করে জানিয়ে দিয়েছেন যে, পাড়া-মহল্লায় অবৈধ অর্থ লেনদেন ও চাঁদাবাজির মতো অপসংস্কৃতির সঙ্গে যারা জড়িত, তাদের সঙ্গে জোট করে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার চেয়ে মৃত্যুবরণ করা অনেক ভালো। তার এই মন্তব্য দেশের চলমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে এক নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছে, যেখানে রাজনৈতিক শুদ্ধতা ও মূল্যবোধের উপর জোর দেওয়া হচ্ছে।
সোমবার (১০ নভেম্বর) রাতে চাঁদপুর জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে এনসিপি জেলা কমিটির এক গুরুত্বপূর্ণ সমন্বয় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে হাসনাত আবদুল্লাহ তার বক্তব্যে বিএনপির বর্তমান পরিস্থিতি নিয়েও গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, বহু কষ্টে ও ত্যাগের বিনিময়ে বিএনপি নামক দলটি টিকে আছে। অথচ, দুঃখজনক হলেও সত্য যে, দলের অনেক ত্যাগী ও নিবেদিতপ্রাণ নেতাকর্মী তাদেরই কিছু শীর্ষ নেতার অনৈতিক কার্যকলাপের কারণে কোণঠাসা হয়ে পড়েছেন। এই নেতাকর্মীরা প্রায়শই এনসিপি নেতাদের কাছে নিজেদের হতাশা ব্যক্ত করে বলেন, ‘তোমরা দেশটাকে সঠিক পথে ফিরিয়ে আনো। আমাদের দলটাকে ওরা ছিনতাই করে নিয়ে গেছে।’ হাসনাত আবদুল্লাহ আরও উল্লেখ করেন, ভোটাধিকার ও জনগণের স্বাধীনতার জন্য তারা রক্ত ও ঘামের বিনিময়ে আন্দোলন করেছেন, যা বর্তমানে প্রায় উপেক্ষিত।
নীতিভিত্তিক রাজনীতি এবং বিএনপির প্রতি এনসিপি’র বার্তা
হাসনাত আবদুল্লাহ তার বক্তব্যে বিএনপির প্রতি এক মিশ্র বার্তা দেন। তিনি বলেন, বিএনপির মধ্যে বহু সজ্জন ও সৎ ব্যক্তি রয়েছেন, যারা কোনো অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত নন। এনসিপি এমন নীতিবান মানুষদের সাদরে গ্রহণ করতে প্রস্তুত। তিনি জিয়াউর রহমানের আদর্শের প্রতি অগাধ আস্থা প্রকাশ করে বলেন, যারা জিয়াউর রহমানের আদর্শে বিশ্বাসী, তারা কখনোই চাঁদাবাজি বা অবৈধ লেনদেনের মতো জঘন্য কাজে লিপ্ত হতে পারে না। এই মন্তব্য বিএনপির মূল আদর্শ ও বর্তমান অবস্থার মধ্যে একটি বিভেদরেখা টেনে দিয়েছে।
নিজের দল এনসিপি সম্পর্কে জনমনে প্রচলিত টিপ্পনী ও মশকরার বিষয়েও তিনি সজাগ দৃষ্টি রাখেন। অনেকে এনসিপিকে ‘চায়ের দোকানের আলাপ’ বা ‘ভোটের পর অস্তিত্বহীন’ বলে উপহাস করেন। এমন সমালোচনার জবাবে হাসনাত আবদুল্লাহ দৃঢ় কণ্ঠে বলেন, “ভালো ও মহৎ উদ্যোগ প্রায়শই ক্ষুদ্র পরিসরেই তার যাত্রা শুরু করে।” তিনি প্রচলিত ধারণাকে চ্যালেঞ্জ করে বলেন, সমাজে যারা সংখ্যায় বেশি, তারাই কল্যাণকামী – এই ধারণা ভুল। কল্যাণকামী মানুষের সংখ্যা সবসময়ই কম হয়। উদাহরণস্বরূপ তিনি বলেন, ‘হাসিনার সময়ে’ যারা লড়াই-সংগ্রাম করেছেন, তাদের সংখ্যাও কিন্তু কমই ছিল। এটি ইঙ্গিত দেয় যে, গুণের বিচারে সংখ্যা গৌণ এবং আদর্শিক সংগ্রাম অল্প সংখ্যক মানুষ দিয়েই শুরু হতে পারে।
নেতাকর্মীদের প্রতি বার্তা: সংখ্যা নয়, আদর্শনিষ্ঠাই মূল
নিজের দলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে এনপিপি’র এই নেতা সংগঠন শক্তিশালী করার উপর জোর দেন। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, “আপনারা অনেকেই কোরাম করছেন। আজ দেখা যাচ্ছে এই জেলার আটটি উপজেলায় যে সংখ্যক জনপ্রতিনিধির উপস্থিতি দরকার, সেই পরিমাণ লোক এখানে উপস্থিত হননি। তাহলে আপনারা কীভাবে কাজ করবেন?” তিনি স্পষ্ট করে দেন যে, কেবল সংখ্যাপূরণের উদ্দেশ্যে গঠিত কমিটির প্রতি এনসিপি’র কোনো আগ্রহ নেই। হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, “কোরাম করা লোকদেরকে আমাদের প্রয়োজন নেই। ভালো দশজন দিয়ে এনসিপি’র কমিটি গঠিত হবে,” যা আদর্শ ও নিষ্ঠার উপর দলের সর্বোচ্চ গুরুত্বকে ফুটিয়ে তোলে।
জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, “আমরা দেখছি ভালো নির্বাচন হবে।” তার এই সংক্ষিপ্ত মন্তব্য আগামী জাতীয় নির্বাচন ঘিরে এক ইতিবাচক ইঙ্গিত বহন করে, যা দেশের রাজনৈতিক মহলে নানা আলোচনার জন্ম দিতে পারে।
