বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে, যেখানে গণমানুষের স্বতঃস্ফূর্ত জাগরণে ক্ষমতার পটভূমি পরিবর্তিত হয়েছে, সেখানে নিষিদ্ধ ঘোষিত আওয়ামী লীগ জনমনে বিভ্রান্তি ও আতঙ্ক ছড়াতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। এই অপচেষ্টার কেন্দ্রে রয়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অপব্যবহার, যেখানে পুরোনো ছবি, ভিডিও এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ব্যবহার করে তৈরি ‘ডিপফেক’ কন্টেন্ট দিয়ে একটি মিথ্যা আখ্যান তৈরির চেষ্টা চলছে।
আওয়ামী লীগের ঘনিষ্ঠ কয়েকটি ফেসবুক পেজ এবং অনলাইন প্ল্যাটফর্মে সুপরিকল্পিতভাবে ভুয়া প্রচারণা চালানো হচ্ছে। কখনো বিএনপির ঐতিহাসিক সমাবেশ, কখনো জুলাই আন্দোলনের উত্তাল মিছিল, আবার কখনো অন্য দেশের রাজনৈতিক কর্মসূচির ছবি ও ভিডিওকে নিজেদের বর্তমান কার্যকলাপ হিসেবে উপস্থাপন করা হচ্ছে। এর পাশাপাশি, দলের দুষ্কৃতকারীরা অত্যাধুনিক এআই প্রযুক্তি ব্যবহার করে তৈরি করা ‘ডিপফেক’ ভিডিও এবং সম্পাদিত ছবি দিয়েও প্রতারণামূলক প্রচারে লিপ্ত রয়েছে, যা সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করার এক নগ্ন প্রয়াস।
নৈতিক ভিত্তি হারানোর পর মিথ্যাচারের আশ্রয়
৫ আগস্ট শেখ হাসিনার দেশ ত্যাগের পর, আওয়ামী লীগ তার প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী, শোক দিবস অথবা অন্য কোনো ধরনের রাজনৈতিক বা সামাজিক আয়োজন করার নৈতিক শক্তি সম্পূর্ণভাবে হারিয়ে ফেলেছে। জনসাধারণের চোখে তাদের বিশ্বাসযোগ্যতা তলানিতে এসে ঠেকেছে। এর পরেও, মানুষকে ধোঁকা দেওয়ার জন্য বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করা হচ্ছে। কখনো মুখে মাস্ক পরে বিক্ষিপ্তভাবে জড়ো হওয়া কিছু মানুষকে আন্দোলনের প্রতীক হিসেবে দেখানো হচ্ছে, আবার কখনো পুরোনো ফুটেজ ব্যবহার করে বড় জনসমর্থন প্রমাণের চেষ্টা করা হচ্ছে। এই সব প্রচেষ্টার মূলেই রয়েছে এআই প্রযুক্তির অপব্যবহার, যা দেশের মানুষকে চরমভাবে বোকা বানানোর এক অশুভ পরিকল্পনা।
বিশেষ করে, ১৩ নভেম্বর আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে রায়ের তারিখ সামনে রেখে দলটি দেশে-বিদেশে ভয়াবহ অপপ্রচার চালাচ্ছে। এই অপপ্রচারের তালিকায় বিদেশে পলাতক নেতাদের পাশাপাশি ভারতে আত্মগোপনে থাকা শেখ হাসিনাও যুক্ত হয়েছেন। তাদের মূল উদ্দেশ্য হলো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি মিথ্যা ধারণা তৈরি করা যে, দেশের অনেক মানুষ এখনো আওয়ামী লীগের সঙ্গে আছে এবং তারা আন্দোলনের ডাক দিলে মানুষ তাতে সাড়া দেবে।
গণমানুষের ক্ষোভ ও বাস্তব চিত্র
বাস্তবতা সম্পূর্ণ ভিন্ন। দেশের আপামর জনগণ আওয়ামী লীগের ওপর চরমভাবে ক্ষুব্ধ ও বিতশ্রদ্ধ। বিশেষ করে ১৬ বছরের দুঃশাসন, গুম, খুন, রাতের ভোট, ডামি ভোট এবং গণতন্ত্র কেড়ে নিয়ে স্বৈরতন্ত্র কায়েমের বিরুদ্ধে সোচ্চার সব শ্রেণি-পেশার মানুষের মন থেকে দলটি সম্পূর্ণরূপে উঠে গেছে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে জুলাই আন্দোলনের সময় সংগঠিত গণহত্যা। মানুষের চোখের সামনে আজও ভেসে ওঠে আওয়ামী লীগের অপরাধের সব দৃশ্য, যা তাদের বিবেককে নাড়া দেয়। এমন এক পরিস্থিতিতে দেশের মানুষ যখন শেখ হাসিনাসহ দলের সব খুনি ও দুর্নীতিবাজ নেতাদের বিচারের দাবিতে ঐক্যবদ্ধ, তখন মিথ্যাচার ও অপপ্রচারের আশ্রয় নিয়ে জনমতকে প্রভাবিত করার এই চেষ্টা ব্যর্থ হতে বাধ্য।
আওয়ামী লীগের এই সুপরিকল্পিত মিথ্যাচার ও আতঙ্ক ছড়ানোর প্রচেষ্টা কেবল তাদের হতাশা ও জনবিচ্ছিন্নতারই প্রমাণ। ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে মিথ্যা তথ্য ও বিকৃত ছবি ছড়িয়ে তারা সাময়িকভাবে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করতে পারলেও, শেষ পর্যন্ত সত্যের কাছে তাদের পরাজিত হতেই হবে। জনগণ এখন অনেক বেশি সচেতন এবং তারা জানে কীভাবে সত্য ও মিথ্যার পার্থক্য করতে হয়। তাদের দীর্ঘদিনের বঞ্চনা ও নিপীড়নের অভিজ্ঞতা এই ডিজিটাল অপপ্রচারকে সফল হতে দেবে না।
