বিশ্বজুড়ে ডায়াবেটিস রোগের ক্রমবর্ধমান প্রকোপ এবং এর প্রতিরোধে জনসচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রতি বছর ১৪ই নভেম্বর পালিত হয় বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবস। এই তাৎপর্যপূর্ণ দিনটিকে সামনে রেখে, জনস্বাস্থ্যের উন্নয়নে এক ব্যতিক্রমী ও প্রশংসনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করে বাংলাদেশ এন্ডোক্রাইন সোসাইটি। গত ১৪ই নভেম্বর, শুক্রবার, রাজধানী ঢাকার প্রাণবন্ত হাতিরঝিলে আয়োজন করা হয়েছিল এক সুদূরপ্রসারী ম্যারাথন, যা কেবল শরীরচর্চাকে উৎসাহিত করতেই নয়, বরং ডায়াবেটিস মুক্ত সুস্থ জীবনধারার বার্তাও ছড়িয়ে দিতে সক্ষম হয়েছে। এই আয়োজন ছিল ডায়াবেটিসের বিরুদ্ধে সম্মিলিত লড়াইয়ের এক বলিষ্ঠ পদক্ষেপ, যা অসংখ্য মানুষের মনে স্বাস্থ্য সচেতনতার বীজ বপন করেছে।
সচেতনতার ম্যারাথন: এক হাজার অংশগ্রহণকারী
সকালবেলায় হাতিরঝিলের মনোরম পরিবেশে প্রায় সাড়ে সাত কিলোমিটার দীর্ঘ এই ম্যারাথনে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশ নেন সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষ। দেশের খ্যাতিমান এন্ডোক্রাইনোলজি বিশেষজ্ঞগণ, এন্ডোক্রাইনোলজিসহ অন্যান্য বিষয়ের তরুণ শিক্ষার্থী এবং বিপুল সংখ্যক সাধারণ মানুষ এই স্বাস্থ্য সচেতনতামূলক পদযাত্রায় সামিল হন। প্রায় এক হাজার অংশগ্রহণকারী হাতিরঝিলের সম্পূর্ণ পথ প্রদক্ষিণ করে ম্যারাথনটি সফলভাবে সম্পন্ন করেন, যা তাদের সম্মিলিত সুস্থ জীবনযাপনের অঙ্গীকারের এক প্রতীকী প্রকাশ। এই আয়োজন শুধু শারীরিক সক্রিয়তাকে উৎসাহিত করেনি, বরং অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে একটি শক্তিশালী সামাজিক বন্ধন এবং সম্মিলিত উদ্দেশ্য পূরণের অনুভূতিও তৈরি করেছে, যা ভবিষ্যতে আরও বৃহৎ পরিসরে জনস্বাস্থ্য কার্যক্রমে অংশগ্রহণে প্রেরণা যোগাবে।
উদ্দেশ্য ও বার্তা: সুস্থ জীবনযাত্রার আহ্বান
এই মহৎ উদ্যোগের পেছনে মূল প্রেরণা ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বাংলাদেশ এন্ডোক্রাইন সোসাইটির সভাপতি, চিকিৎসক ফারিয়া আফসানা বলেন, “সাধারণ মানুষকে শরীর চর্চা ও নিয়মিত হাঁটার মতো মৌলিক অথচ কার্যকর স্বাস্থ্যচর্চায় উদ্বুদ্ধ করাই ছিল আমাদের এই আয়োজনের প্রধান লক্ষ্য। নিয়মিত শারীরিক কার্যকলাপ ডায়াবেটিস প্রতিরোধে এবং এর নিয়ন্ত্রণে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।” তিনি ম্যারাথনে অংশ নেওয়া সকল ব্যক্তিকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান এবং দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন যে, প্রতি বছরই বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবস উপলক্ষে এ ধরনের সচেতনতামূলক ও জনকল্যাণমূলক কার্যক্রম অব্যাহত রাখা হবে, যাতে সুস্থ জীবনধারার বার্তা সমাজের প্রতিটি স্তরে পৌঁছে যায়।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত থেকে বাংলাদেশ এন্ডোক্রাইন সোসাইটির প্রধান পৃষ্ঠপোষক, অধ্যাপক ফারুক পাঠান তাঁর গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্যে ডায়াবেটিস প্রতিরোধে হাঁটার অপরিহার্যতার ওপর জোর দেন। তিনি বলেন, “কেবল ডায়াবেটিস রোগীরাই নন, বরং সুস্থ জীবন ধারণ করতে এবং ডায়াবেটিসসহ সকল অসংক্রামক রোগ প্রতিরোধ করতে সকলেরই প্রতিদিন হাঁটা উচিত। আসুন, আমরা সবাই মিলে হাঁটি, সুস্থ থাকি।” তাঁর এই আহ্বান ছিল সকলের জন্য একটি স্পষ্ট বার্তা—সক্রিয় জীবনযাপন কেবল রোগ প্রতিরোধ করে না, বরং সামগ্রিক সুস্থতাও নিশ্চিত করে এবং একটি কর্মঠ ও প্রাণবন্ত সমাজ গঠনে সহায়ক হয়।
পুরস্কার বিতরণ ও স্বীকৃতি
ম্যারাথন শেষে একটি আনন্দঘন পরিবেশে পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এই অনুষ্ঠানে চিকিৎসক ও সাধারণ ক্যাটাগরিতে বিজয়ী, ১ম এবং ২য় রানার আপদের হাতে তুলে দেওয়া হয় সম্মাননা পুরস্কার। এটি ছিল তাদের প্রচেষ্টা ও স্বাস্থ্য সচেতনতার প্রতি একটি স্বীকৃতি এবং অন্যদের জন্য অনুপ্রেরণা। এছাড়াও, ম্যারাথনে অংশগ্রহণকারী সকল প্রতিযোগীকে তাদের এই সক্রিয় ভূমিকার জন্য মেডেল ও সার্টিফিকেট প্রদান করা হয়, যা তাদের এই উদ্যোগের অংশীদারিত্বের স্মারক হিসেবে কাজ করবে এবং আগামী দিনেও এমন জনহিতকর কার্যক্রমে অংশ নিতে উৎসাহিত করবে।
সহযোগী ও ব্যবস্থাপনা
বাংলাদেশ এন্ডোক্রাইন সোসাইটি কর্তৃক আয়োজিত এই সফল কার্যক্রমে সহযোগী হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে স্বনামধন্য অপসোনিন ফার্মা, যারা জনস্বাস্থ্য সেবায় বরাবরই অঙ্গীকারবদ্ধ। এই বৃহৎ আয়োজনটির ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের দায়িত্বে ছিল দক্ষ প্রতিষ্ঠান আলট্রা ক্যাম্প রানার্স, যাদের পেশাদারিত্ব ও নিপুণ ব্যবস্থাপনার কারণে ম্যারাথনটি নির্বিঘ্নে ও সফলভাবে সম্পন্ন করা সম্ভব হয়েছে। তাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টা এবং সুচারু ব্যবস্থাপনার কারণেই এই ম্যারাথনটি নির্বিঘ্নে ও সফলভাবে সম্পন্ন করা সম্ভব হয়েছে, যা ডায়াবেটিস সচেতনতা বৃদ্ধিতে এক নতুন মাত্রা যোগ করেছে এবং ভবিষ্যতে এমন আয়োজনের পথ প্রশস্ত করেছে।
