রাজধানীর ঐতিহাসিক ধানমন্ডি ৩২ নম্বর এলাকা থেকে সন্দেহভাজন হিসেবে আটক এক ১৪ বছর বয়সী কিশোরকে অবশেষে মুক্তি দিয়েছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার দুপুরে তাকে ধানমন্ডি থানা থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়, যা এলাকার জনমনে স্বস্তি এনেছে এবং চলমান রাজনৈতিক উত্তেজনার মাঝে একটি দ্রুত সমাধানের ইঙ্গিত বহন করে। এই ঘটনাটি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কঠোর অবস্থানের পাশাপাশি যাচাই-বাছাইয়ের মাধ্যমে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের সক্ষমতাকেও তুলে ধরেছে।
গ্রেপ্তার ও মুক্তির বিস্তারিত
আজ বৃহস্পতিবার সকাল ১০টার দিকে যখন ওই কিশোরকে আটক করা হয়, তখন তার বয়স ছিল মাত্র ১৪ বছর। ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলা থেকে আসা এই কিশোরের আচরণ ও কথায় অসঙ্গতি থাকায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সন্দেহ হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সে নিজেকে শিক্ষার্থী হিসেবে পরিচয় দিলেও, তার বক্তব্যে অসঙ্গতিপূর্ণ তথ্য পাওয়া যায়। পুলিশ জানায়, সে একবার ছাত্রদল ও আরেকবার ছাত্রশিবিরের সঙ্গে সম্পৃক্ততার কথা বলেছিল। তার ব্যাগে প্রাপ্ত কিছু কাগজপত্র ও অন্যান্য আলামতের ভিত্তিতে পুলিশ প্রাথমিকভাবে ধারণা করেছিল যে সে কোনো নিষিদ্ধ সংগঠনের সাথে জড়িত থাকতে পারে। এক্ষেত্রে তার বক্তব্যে ছাত্রলীগের মতো সংগঠনের নামও উঠে আসে, যা তার পরিচয় নিয়ে এক ধরনের ধোঁয়াশা তৈরি করেছিল এবং তাকে আটক করার অন্যতম কারণ ছিল।
তবে, আটক হওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই তাকে মুক্তি দেওয়া হয়। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) রমনা বিভাগের উপকমিশনার মো. মাসুদ আলম বিকেলে প্রথম আলোকে দেওয়া এক বক্তব্যে জানান, বিস্তারিত তদন্ত এবং তথ্যের সত্যতা যাচাইয়ের পর এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। উপকমিশনার আলম নিশ্চিত করেন যে, ওই কিশোর আসলে তার গ্রামের বাড়ি ভালুকা থেকে ঢাকার ঐতিহাসিক ধানমন্ডি ৩২ নম্বর এলাকাটি দেখতে এসেছিল। তার গ্রামের বাড়িতে খোঁজখবর নিয়ে তার সম্পর্কে কোনো রকম সন্দেহজনক বা নেতিবাচক তথ্য পাওয়া যায়নি। এই যাচাই প্রক্রিয়া শেষে তার নির্দোষিতা প্রমাণিত হওয়ায়, বৃহস্পতিবার দুপুরে তাকে ধানমন্ডি থানা থেকে সসম্মানে ছেড়ে দেওয়া হয়।
আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির প্রেক্ষাপট
উল্লেখ্য, বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দেশজুড়ে কঠোর নজরদারি বজায় রেখেছে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে অনলাইনে ‘ঢাকা লকডাউন’ কর্মসূচি ঘোষণার পর থেকেই যেকোনো ধরনের নাশকতা বা বিশৃঙ্খলা প্রতিরোধে পুলিশ ও অন্যান্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থা বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করছে। গত মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত আইনশৃঙ্খলাসংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির এক গুরুত্বপূর্ণ সভায় এই মর্মে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল যে, যেকোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর ওপর নাশকতা বা অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির বিন্দুমাত্র সন্দেহ হলেই তাকে তাৎক্ষণিকভাবে আটক করা হবে। এই প্রেক্ষাপটেই ওই কিশোরকে আটক করা হয়েছিল, যা পরবর্তীতে তার নির্দোষিতা প্রমাণিত হওয়ায় শান্তিপূর্ণভাবে মীমাংসিত হয়।
এই ঘটনাটি প্রমাণ করে যে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী একদিকে যেমন তাদের দায়িত্ব পালনে সচেষ্ট, তেমনি প্রয়োজনে যাচাই-বাছাইয়ের মাধ্যমে দ্রুত সঠিক সিদ্ধান্ত নিতেও সক্ষম। এমন সময়ে যখন রাজনৈতিক উত্তেজনা চরমে, তখন এই ধরনের দ্রুত ও সঠিক পদক্ষেপ গণমানুষের আস্থা বৃদ্ধিতে সহায়ক এবং সমাজে শান্তি বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
