More

    জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়: নতুন পদ্ধতিতে সিজিপিএ বের করবেন যেভাবে

    শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষা মূল্যায়নে আধুনিকতা ও আন্তর্জাতিক মান নিশ্চিত করার লক্ষ্যে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় তাদের ফলাফল নির্ণয় পদ্ধতিতে এক যুগান্তকারী পরিবর্তন এনেছে। সম্প্রতি প্রকাশিত নতুন নির্দেশিকা অনুযায়ী, এখন থেকে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনস্থ সকল শিক্ষার্থীর ফল ক্যুমুলেটিভ গ্রেড পয়েন্ট অ্যাভারেজ (সিজিপিএ) পদ্ধতিতে নির্ণয় করা হবে। এই নতুন পদ্ধতি একদিকে যেমন ফলাফলের স্বচ্ছতা বৃদ্ধি করবে, তেমনি শিক্ষার্থীদের সামগ্রিক মেধার মূল্যায়নকেও আরও সুষম ও কার্যকর করে তুলবে।

    নতুন গ্রেডিং পদ্ধতির বিস্তারিত রূপরেখা

    জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের এই নতুন গ্রেডিং পদ্ধতিতে শিক্ষার্থীর তত্ত্বীয়, ব্যবহারিক ও মৌখিক পরীক্ষায় প্রাপ্ত নম্বরকে সুনির্দিষ্ট প্রক্রিয়ার মাধ্যমে লেটার গ্রেড এবং গ্রেড পয়েন্টে রূপান্তরিত করে ফলাফল নির্ধারণ করা হবে। এই রূপান্তরের ভিত্তি হবে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি) কর্তৃক প্রদত্ত অভিন্ন গ্রেডিং পদ্ধতি, যা দেশের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহে একটি সমতাপূর্ণ মূল্যায়ন কাঠামো নিশ্চিত করে। এর ফলে, শিক্ষার্থীদের প্রাপ্ত গাণিতিক নম্বর সরাসরি লেটার গ্রেড ও গ্রেড পয়েন্টে প্রতিফলিত হবে, যা পূর্বের সনাতন পদ্ধতির চেয়ে অনেক বেশি প্রমিত ও সহজবোধ্য।

    প্রতি শিক্ষাবর্ষে জিপিএ (গ্রেড পয়েন্ট অ্যাভারেজ) নির্ণয়

    শিক্ষার্থীদের প্রতিটি শিক্ষাবর্ষের পারফরম্যান্স মূল্যায়নের জন্য গ্রেড পয়েন্ট অ্যাভারেজ (জিপিএ) পদ্ধতি অনুসরণ করা হবে। এই পদ্ধতিতে, একটি নির্দিষ্ট শিক্ষাবর্ষে একজন শিক্ষার্থীর অর্জিত মোট পয়েন্টকে ঐ শিক্ষাবর্ষের জন্য নির্ধারিত মোট ক্রেডিট দ্বারা ভাগ করে জিপিএ নির্ণয় করা হবে। এটি শিক্ষার্থীদের বার্ষিক একাডেমিক অগ্রগতি পরিমাপের একটি স্পষ্ট মানদণ্ড হিসেবে কাজ করবে।

    উদাহরণস্বরূপ, যদি একজন শিক্ষার্থী চারটি কোর্সে সর্বমোট ৩৯ পয়েন্ট অর্জন করেন এবং ঐ কোর্সগুলোর জন্য মোট ১৬ ক্রেডিট নির্ধারিত থাকে (যদিও উত্তীর্ণ ক্রেডিট সংখ্যা ১২), তবে জিপিএ হবে ৩৯ ÷ ১৬ = ২.৪৪। এই উদাহরণটি স্পষ্ট করে যে, জিপিএ গণনার ক্ষেত্রে অর্জিত পয়েন্ট এবং মোট নির্ধারিত ক্রেডিটের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

    সিজিপিএ (ক্যুমুলেটিভ গ্রেড পয়েন্ট অ্যাভারেজ): সামগ্রিক মূল্যায়ন

    শিক্ষার্থীদের সামগ্রিক একাডেমিক পারফরম্যান্স মূল্যায়নের জন্য ক্যুমুলেটিভ গ্রেড পয়েন্ট অ্যাভারেজ (সিজিপিএ) নির্ধারণ করা হবে। এটি প্রথম শিক্ষাবর্ষ থেকে শুরু করে চতুর্থ শিক্ষাবর্ষ পর্যন্ত প্রতিটি বছরের মোট অর্জিত পয়েন্টের সমষ্টিকে সম্পূর্ণ কোর্সের জন্য নির্ধারিত মোট ক্রেডিট দিয়ে ভাগ করে হিসাব করা হবে। এই পদ্ধতি শিক্ষার্থীদের দীর্ঘমেয়াদী একাডেমিক ধারাবাহিকতা ও অর্জনের একটি পূর্ণাঙ্গ চিত্র তুলে ধরবে। নতুন নির্দেশিকায় ইপিএস (আর্নড পয়েন্ট সিকিউরড), জিপিএস (গ্রেড পয়েন্ট অ্যাভারেজ), টিপিএস (টোটাল পয়েন্ট সিকিউরড) এবং সিজিপিএ সংক্রান্ত সংজ্ঞাগুলো অত্যন্ত স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে, যা শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি শিক্ষক ও সংশ্লিষ্ট সকলের জন্য ফলপ্রসূ হবে।

    প্রমোশন এবং একাডেমিক অগ্রগতির নীতিমালা

    জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন নির্দেশিকায় শিক্ষার্থীদের এক বর্ষ থেকে পরবর্তী বর্ষে প্রমোশন, গ্রেড উন্নয়ন এবং মানোন্নয়ন সংক্রান্ত নীতিমালাগুলো বিস্তারিতভাবে তুলে ধরা হয়েছে। এটি শিক্ষার্থীদের একাডেমিক যাত্রার প্রতিটি ধাপকে সুসংগঠিত করবে।

    • এক বর্ষ থেকে পরবর্তী বর্ষে প্রমোশনের জন্য শিক্ষার্থীর সব কোর্সের পরীক্ষায় অংশগ্রহণ বাধ্যতামূলক
    • প্রথম বর্ষ থেকে দ্বিতীয় বর্ষে এবং দ্বিতীয় বর্ষ থেকে তৃতীয় বর্ষে প্রমোশনের জন্য শিক্ষার্থীর কমপক্ষে অর্ধেক কোর্সে ‘D’ গ্রেড প্রাপ্ত হতে হবে। এই শর্তটি শিক্ষার্থীদের মধ্যে নিয়মিত পড়াশোনা ও ভালো ফলাফলের আগ্রহ তৈরি করবে।

    এই নতুন এবং আধুনিক গ্রেডিং পদ্ধতি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য একটি উন্নততর মূল্যায়ন কাঠামো নিশ্চিত করবে। এর মাধ্যমে ফলাফল ঘোষণায় যেমন স্বচ্ছতা আসবে, তেমনি শিক্ষার্থীদের কর্মজীবনে প্রবেশের ক্ষেত্রেও একটি প্রমিত ও আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত মূল্যায়নের সুযোগ তৈরি হবে, যা তাদের ভবিষ্যৎ পেশাগত সাফল্যের পথকে সুগম করবে।

    Recent Articles

    Related Stories

    Leave A Reply

    Please enter your comment!
    Please enter your name here