বাংলাদেশের ক্রিকেটের ইতিহাসে আজ এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা হলো। হাবিবুর রহমান সোহান তার ব্যাট হাতে রচনা করলেন এক অবিস্মরণীয় কীর্তি, যা দেশের দ্রুততম টি-টোয়েন্টি শতক হিসেবে জায়গা করে নিয়েছে ইতিহাসের পাতায়। তার এই অসাধারণ পারফরম্যান্স কেবল রেকর্ড বইয়েই স্থান করে নেয়নি, বরং দেশের তরুণ ক্রিকেটারদের জন্য এক নতুন অনুপ্রেরণার সৃষ্টি করেছে।
হাবিবুর সোহানের ঐতিহাসিক শতক: এক নতুন মাইলফলক
মাত্র ৩৫টি বল মোকাবেলা করে এই ঐতিহাসিক শতক পূর্ণ করেন হাবিবুর রহমান সোহান, যা টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে তার বিস্ফোরক ব্যাটিংয়ের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। এশিয়া কাপের মঞ্চে হংকং চায়নার বিপক্ষে এই অবিশ্বাস্য রেকর্ড গড়েন তিনি, যা গোটা ক্রিকেট বিশ্বকে চমকে দিয়েছে। কাতারের দোহাতে অনুষ্ঠিত ‘এ’ গ্রুপের এই গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে হংকং বাংলাদেশকে ১৬৮ রানের একটি চ্যালেঞ্জিং লক্ষ্যমাত্রা ছুড়ে দিয়েছিল। তবে সোহানের বিধ্বংসী ব্যাটিং তাণ্ডবে, বাংলাদেশ ৫৪ বল হাতে রেখেই অনায়াসে লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করে, যা তার ইনিংসের প্রভাব কতটা গভীর ছিল তা স্পষ্ট করে তোলে।
ঝড়ো ইনিংসের সূচনা ও পাওয়ারপ্লেতে আধিপত্য
সোহান তার ইনিংসের শুরু থেকেই বোলারদের ওপর চড়াও হয়েছিলেন। প্রথম ওভারেই তিনটি বিশাল ছক্কা হাঁকিয়ে তিনি নিজের অভিপ্রায় পরিষ্কার করে দেন। এরপর দ্বিতীয় ওভারে আরও তিনটি চারের সঙ্গে একটি ছক্কা হাঁকিয়ে রানের গতিকে আরও তীব্র করেন। পাওয়ারপ্লের প্রতিটি ওভারেই তিনি বড় বড় রান সংগ্রহ করতে থাকেন, যা প্রতিপক্ষের বোলারদের আত্মবিশ্বাস ভেঙে দেয়। প্রথম ছয় ওভার অর্থাৎ পাওয়ারপ্লে শেষ হতেই বাংলাদেশের স্কোরবোর্ডে জমা পড়েছিল ১০৭ রান, যা টি-টোয়েন্টিতে এক বিস্ময়কর সূচনা। এমনকি তার ‘সবচেয়ে কম’ রান আসা ওভারটিও ১৩ রান এনে দিয়েছিল, যা তার ইনিংসে ধারাবাহিক আধিপত্যের প্রমাণ।
বৈভব সূর্যবংশীর সঙ্গে তুলনা ও দেশের রেকর্ড ভাঙা
অন্যদিকে, গতকাল এশিয়া কাপ ইমার্জিং স্টার্সে ভারতের বৈভব সূর্যবংশী ৩২ বলে এক দুরন্ত শতক হাঁকিয়েছিলেন। এক পর্যায়ে মনে হচ্ছিল, সোহান বুঝি সেই রেকর্ডটিও স্পর্শ করে ফেলবেন। ৩১ বলে তার ব্যক্তিগত সংগ্রহ ছিল ৯৬ রান; তবে পরবর্তী ৪ রান তুলতে তাকে আরও ৪টি বল খেলতে হয়। ফলে বৈভবের রেকর্ড ভাঙা না হলেও, ৩৫ বলে শতক হাঁকিয়ে সোহান বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসের নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছেন। যে কোনো ফরম্যাটের ক্রিকেটেই এটি এখন পর্যন্ত কোনো দেশীয় ব্যাটসম্যানের দ্রুততম সেঞ্চুরি। এর আগে এই রেকর্ডটি ছিল পারভেজ হোসেন ইমনের দখলে, যিনি ২০২০ সালে ৪২ বলে শতক হাঁকিয়েছিলেন। সোহান সেই রেকর্ডকে ৭ বলের ব্যবধানে টপকে গিয়ে নিজের নাম স্বর্ণাক্ষরে লিখিয়ে নিলেন বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসে। তার এই কীর্তি নিশ্চিতভাবেই দেশের ক্রিকেটকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাবে এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে বড় স্বপ্ন দেখতে অনুপ্রাণিত করবে।
