বাংলাদেশের নারী ক্রিকেটে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করে প্রথমবারের মতো জাতীয় ক্রিকেট লিগের (টি–টোয়েন্টি ফরম্যাট) শিরোপা জিতেছে বরিশাল বিভাগ। ছেলেরা জাতীয় ক্রিকেট লিগে কখনো চ্যাম্পিয়ন হতে না পারলেও, মেয়েদের হাত ধরে এলো এই ঐতিহাসিক সাফল্য। ৭টি জয় ও ১২ পয়েন্ট নিয়ে এবারের নারী জাতীয় ক্রিকেট লিগে অপ্রতিরোধ্য চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করেছে বরিশালের নারীরা। এই বিজয় কেবল একটি শিরোপা নয়, এটি বরিশালের নারী ক্রিকেটের জন্য এক মাইলফলক, যা নিঃসন্দেহে ভবিষ্যতের অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে।
শিরোপার গৌরব: বরিশাল পেল বহুল আকাঙ্ক্ষিত বিজয়
মঙ্গলবার বিকেএসপির তিন নম্বর মাঠে অনুষ্ঠিত ফাইনালে তারা রংপুর বিভাগকে ১৩ রানের ব্যবধানে হারিয়ে শিরোপা নিশ্চিত করে। এই শ্বাসরুদ্ধকর ম্যাচে দুর্দান্ত পারফরম্যান্স প্রদর্শন করে বরিশাল তাদের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করেছে। পয়েন্ট টেবিলের দিকে তাকালে দেখা যায়, ৭ ম্যাচে ৫টি জয় নিয়ে ১০ পয়েন্ট অর্জন করে খুলনা বিভাগ দ্বিতীয় স্থানে অবস্থান করছে, যা তাদের ধারাবাহিকতার পরিচায়ক। সমান সংখ্যক জয় ও পয়েন্ট নিয়ে চট্টগ্রাম বিভাগ তৃতীয় স্থান অধিকার করেছে, যা টুর্নামেন্টে তাদের শক্তিশালী পারফরম্যান্সের প্রমাণ।
আট দলের এই প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ টুর্নামেন্টে, রংপুর বিভাগ চারটি জয় নিয়ে চতুর্থ স্থান অর্জন করেছে, যা তাদের টুর্নামেন্টের মাঝে শক্তিশালী অবস্থানকে তুলে ধরে। তিনটি করে জয় নিয়ে রাজশাহী বিভাগ পঞ্চম এবং সিলেট বিভাগ ষষ্ঠ স্থান অধিকার করেছে। অন্যদিকে, ময়মনসিংহ বিভাগ দুটি জয় নিয়ে সপ্তম স্থানে শেষ করে। তবে, পয়েন্ট টেবিলের একেবারে তলানিতে থাকা ঢাকা বিভাগ কোনো ম্যাচেই জয় তুলে নিতে পারেনি, যা তাদের জন্য একটি কঠিন টুর্নামেন্টের ইঙ্গিত দেয়।
ব্যক্তিগত নৈপুণ্যে ঝলমলে তারকারা
এই টুর্নামেন্টের সবচেয়ে উজ্জ্বল তারকা ছিলেন বরিশালের লেগ স্পিনার রাবেয়া খান, যিনি তাঁর অসাধারণ অলরাউন্ড পারফরম্যান্সের জন্য সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার জিতেছেন। বল হাতে তিনি ৭ ম্যাচে ৯টি গুরুত্বপূর্ণ উইকেট শিকার করেছেন। একইসাথে, ব্যাট হাতেও তিনি ছিলেন বিধ্বংসী, যেখানে ১১৮.৫৪ স্ট্রাইক রেটে ১৭৯ রান সংগ্রহ করেছেন। রাবেয়ার এই দ্বিমুখী পারফরম্যান্স দলের চ্যাম্পিয়ন হওয়ার ক্ষেত্রে অনবদ্য ভূমিকা রেখেছে।
বোলিংয়ে নজর কেড়েছেন আরও দুই বোলার – বরিশালের সুলতানা খাতুন এবং চট্টগ্রামের ফাতেমা জাহান। দুজনেই যৌথভাবে সর্বোচ্চ ১৪টি উইকেট শিকার করে টুর্নামেন্টের শীর্ষ উইকেট শিকারি হয়েছেন। তাঁদের ধারাবাহিক উইকেট শিকার টুর্নামেন্টে নিজ নিজ দলের পক্ষে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল। তাঁদের ঠিক পেছনেই, ময়মনসিংহের স্বর্ণা আক্তার একটি উইকেট কম নিয়ে ১৩টি উইকেট শিকার করে তৃতীয় স্থান অধিকার করেছেন, যা তাঁর বোলিং দক্ষতার প্রমাণ।
ব্যাটিংয়ে সেরা ছিলেন সিলেটের শামীমা সুলতানা, যিনি ৭ ইনিংসে ৯৬.৪৯ স্ট্রাইক রেটে ২৭৫ রান করে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকের খেতাব অর্জন করেছেন। তাঁর সাবলীল ব্যাটিং টুর্নামেন্টে অন্যতম সেরা আকর্ষণ ছিল। দ্বিতীয় স্থানে রয়েছেন চ্যাম্পিয়ন বরিশালের ফারজানা হক, যিনি ৭ ম্যাচে ২৫৪ রান করে দলের জয়ে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন। তৃতীয় সর্বোচ্চ ১৮৯ রান সংগ্রহ করেছেন রংপুরের জুরাইয়া ফেরদৌস, যিনি তাঁর ব্যাট হাতে পারফরম্যান্সের পাশাপাশি সেরা উদীয়মান খেলোয়াড়ের পুরস্কারও জিতেছেন, যা তাঁর সম্ভাবনাময় ভবিষ্যতের ইঙ্গিত দেয়।
