More

    ফাইনালে পাকিস্তানকে পেল বাংলাদেশ

    এশিয়া কাপ রাইজিং স্টারসের ফাইনাল মঞ্চ এখন প্রস্তুত! টানটান উত্তেজনায় ভরা এই টুর্নামেন্টের শিরোপা জয়ের চূড়ান্ত লড়াইয়ে মুখোমুখি হতে যাচ্ছে ক্রিকেটের দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী – বাংলাদেশ ‘এ’ দল এবং পাকিস্তান ‘এ’ দল। বাংলাদেশ ইতোমধ্যে এক মহানাটকীয় ম্যাচে ভারতের বিরুদ্ধে সুপার ওভারে জয় ছিনিয়ে নিয়ে তাদের শ্রেষ্ঠত্বের প্রমাণ দিয়েছে। এবার তাদের সেই সফলতার সঙ্গী হতে আসছে শ্বাসরুদ্ধকর এক সেমিফাইনাল জিতে আসা পাকিস্তান ‘এ’ দল।

    আকবর আলী ও রিপন মন্ডলদের নেতৃত্বাধীন তরুণ টাইগাররা তাদের এই অভাবনীয় সাফল্যের পর অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছিল ফাইনালের প্রতিপক্ষের জন্য। তাদের সেই অপেক্ষার অবসান ঘটেছে দ্বিতীয় সেমিফাইনালের রোমাঞ্চকর পরিসমাপ্তিতে, যেখানে পাকিস্তান ‘এ’ দল ৫ রানের ব্যবধানে শ্রীলঙ্কা ‘এ’ দলকে হারিয়ে ফাইনালের টিকিট নিশ্চিত করেছে।

    দ্বিতীয় সেমিফাইনাল: এক রোমাঞ্চকর লড়াই

    কাতারের দোহার ওয়েস্ট এন্ড পার্ক ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট স্টেডিয়ামের মনোরম পরিবেশে অনুষ্ঠিত হলো এই দিবারাত্রির হাই-ভোল্টেজ সেমিফাইনাল ম্যাচ। ফাইনালের টিকিট কাটার লক্ষ্যে লঙ্কা এবং পাকিস্তানের ‘এ’ দল মুখোমুখি হয়েছিল। টস জিতে শ্রীলঙ্কা ‘এ’ ফিল্ডিংয়ের সিদ্ধান্ত নেয়, যা পাকিস্তানের ইনিংসের শুরুতেই তাদের কিছুটা চাপে ফেলে।

    ব্যাট করতে নেমে পাকিস্তান ‘এ’ দল শুরুটা আশানুরূপ ছিল না। শ্রীলঙ্কার বোলারদের নিয়ন্ত্রিত বোলিং এবং দ্রুত উইকেট পতনের ফলে তারা বড় স্কোর গড়তে ব্যর্থ হয়। নির্ধারিত ২০ ওভারে ৯ উইকেট হারিয়ে তারা সংগ্রহ করে মাত্র ১৫৩ রান। দলের পক্ষে ত্রাতা হিসেবে আবির্ভূত হন গাজী ঘোরি, যিনি ৩৬ বলে অপরাজিত ৩৯ রানের এক গুরুত্বপূর্ণ ইনিংস খেলেন। তার এই ইনিংসটিই পাকিস্তানকে একটি সম্মানজনক অবস্থানে পৌঁছে দেয়। শ্রীলঙ্কার হয়ে বল হাতে আগুন ঝরিয়েছেন প্রমোদ মাদুশান, ২৯ রানের বিনিময়ে শিকার করেছেন ৪টি মূল্যবান উইকেট। তার সাথে যোগ দিয়ে ত্রাভিন ম্যাথুও ২২ রান দিয়ে ৪ উইকেট তুলে নেন, যা পাকিস্তানের ব্যাটিং মেরুদণ্ড ভেঙে দেয়।

    শ্রীলঙ্কার বিস্ফোরক শুরু এবং মিডল অর্ডারের ধস

    ১৫৪ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে শ্রীলঙ্কা ‘এ’ দলের শুরুটা ছিল বিস্ফোরক। দুই ওপেনার লাসিথ ক্রুসপুল্লে এবং ভিষেন হালামবাগে মাত্র ১.২ ওভারে ২৯ রান তুলে দলের জন্য দারুণ একটি প্ল্যাটফর্ম তৈরি করেন। বিশেষ করে ক্রুসপুল্লে, যিনি মাত্র ৭ বলে ২ চার ও ৩ ছক্কায় ২৭ রানের এক বিধ্বংসী ইনিংস খেলেন, প্রতিপক্ষকে শুরুতেই ব্যাকফুটে ঠেলে দেন। তবে তার দ্রুত বিদায়ে (১.৩ ওভারে) ওপেনিং জুটি ভাঙলেও, হালামবাগে হাল ছাড়েননি। তিনি ছোট ছোট জুটি গড়ে দলকে জয়ের পথে রাখার চেষ্টা করেন।

    তবে পাকিস্তানের বোলারদের নিখুঁত লাইন-লেন্থের সামনে শ্রীলঙ্কার মিডল অর্ডার ছিল ভঙ্গুর। নিয়মিত বিরতিতে উইকেট পতনের ফলে একসময় ৯৯ রানে ৮ উইকেট হারিয়ে জয়ের পথ থেকে প্রায় ছিটকে যায় শ্রীলঙ্কা। হালামবাগেও তখন সাজঘরে ফিরে গেছেন (২৭ বলে ২৯ রান), ফলে মনে হচ্ছিল ম্যাচটি পাকিস্তানের হাতের মুঠোয়।

    মিলান রত্নানায়াকের অবিশ্বাস্য প্রতিরোধ ও নাটকীয় সমাপ্তি

    কিন্তু ক্রিকেট অনিশ্চয়তার খেলা, আর এর প্রমাণ দিলেন মিলান রত্নানায়াকে। নবম উইকেট জুটিতে ত্রাভিন ম্যাথুকে সাথে নিয়ে তিনি অবিশ্বাস্য এক প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। ৪৭ রানের এই জুটি শ্রীলঙ্কার জন্য নতুন করে জয়ের আশা জাগিয়ে তোলে। রত্নানায়াকে একাই দলের হাল ধরেন, ৩২ বলে ৪০ রানের এক লড়াকু ইনিংস উপহার দেন। তার প্রতিটি শটেই ছিল দৃঢ়তা আর জয়ের আকাঙ্ক্ষা।

    তবে শেষ রক্ষা হয়নি। ম্যাচ যখন একদম শেষ মুহূর্তে, জয়ের জন্য প্রয়োজনীয় রান প্রায় হাতের নাগালে, ঠিক তখনই ৩ বল বাকি থাকতে আউট হয়ে ফেরেন রত্নানায়াকে। তার বিদায়ের সাথে সাথেই শ্রীলঙ্কার জয়ের স্বপ্নও শেষ হয়ে যায়। নির্ধারিত ওভার শেষে ৯ উইকেট হারিয়ে তারা থামে ১৪৮ রানে, মাত্র ৫ রানের আক্ষেপ নিয়ে মাঠ ছাড়ে। পাকিস্তানের পক্ষে বল হাতে উজ্জ্বল ছিলেন সাদ মাসুদসুফিয়ান মুকিম, দুজনেই ৩টি করে উইকেট নিয়ে শ্রীলঙ্কার ব্যাটিং লাইনআপে ধস নামান।

    এই রুদ্ধশ্বাস জয়ের মধ্য দিয়ে পাকিস্তান ‘এ’ দল এশিয়া কাপ রাইজিং স্টারসের ফাইনাল নিশ্চিত করেছে। আগামী ম্যাচে তাদের মুখোমুখি হবে অদম্য বাংলাদেশ ‘এ’ দল। ফাইনালের মঞ্চে দুই দেশের তরুণ প্রতিভাদের মধ্যে এক হাড্ডাহাড্ডি লড়াই দেখার অপেক্ষায় এখন ক্রিকেট বিশ্ব। এই ম্যাচটি যে আরও একটি মহানাটকীয় ম্যাচের সাক্ষী হবে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না।

    Recent Articles

    Related Stories

    Leave A Reply

    Please enter your comment!
    Please enter your name here