দীর্ঘদিন ধরে চলমান জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে দলের ২০ জন প্রভাবশালী নেতাকে পুনর্বহাল করেছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন খুলনার কয়রা ও পাইকগাছাসহ দেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ জেলার রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বরা। এই সিদ্ধান্তকে দলের অভ্যন্তরে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনা এবং আসন্ন রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় এক সুদূরপ্রসারী পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে। গতকাল রবিবার রাতে দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত এক আনুষ্ঠানিক বিজ্ঞপ্তিতে এই চাঞ্চল্যকর তথ্য নিশ্চিত করা হয়, যা দ্রুতই রাজনৈতিক মহলে আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
খুলনার দুই নেতার প্রত্যাবর্তন: বিতর্কের অবসান
বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার হওয়া নেতাদের তালিকায় খুলনার দুটি গুরুত্বপূর্ণ উপজেলার সাবেক নেতা রয়েছেন, যাদের নাম বেশ আলোচিত ছিল। এরা হলেন— কয়রা উপজেলা বিএনপির সাবেক সদস্যসচিব নুরুল আমিন বাবুল এবং পাইকগাছা উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক এস এম এনামুল। এই দুই নেতার বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারকে স্থানীয় রাজনীতিতে বিএনপির অবস্থান শক্তিশালী করার একটি কৌশলগত পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।
উল্লেখ্য, গত বছরের ১৯শে সেপ্টেম্বর নুরুল আমিন বাবুলকে দলের শৃঙ্খলাভঙ্গ, সহিংসতামূলক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ এবং দলবিরোধী কার্যকলাপে লিপ্ত থাকার সুনির্দিষ্ট অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়েছিল। ফলস্বরূপ, তাকে প্রাথমিক সদস্যপদসহ সাংগঠনিক কাঠামোর সকল স্তর থেকে বহিষ্কারের মতো কঠোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিল বিএনপি। অন্যদিকে, গত বছরের ১০ই আগস্ট পাইকগাছা উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এস এম এনামুলকে দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে কার্যক্রমে অংশ নেওয়ার অভিযোগে সাময়িকভাবে বহিষ্কার করা হয়েছিল। এই দুই নেতার বহিষ্কারের পর থেকেই তাদের অনুসারীরা এবং স্থানীয় নেতাকর্মীরা দফায় দফায় মানববন্ধন, বিক্ষোভ কর্মসূচি ও স্মারকলিপি পেশের মাধ্যমে ধারাবাহিক আন্দোলন চালিয়ে আসছিলেন, যার মূল দাবি ছিল এই বহিষ্কারাদেশ দ্রুত প্রত্যাহার করা। দীর্ঘদিনের এই চাপ ও জনমতের প্রতি সম্মান জানিয়েই দল অবশেষে তাদের পুনর্বহালের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
দেশব্যাপী বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার: এক সমন্বিত পদক্ষেপ
শুধু খুলনা নয়, বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিটিতে জানানো হয়েছে যে, দেশের আরও দশটি জেলা থেকে মোট ১৮ জন নেতার বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করা হয়েছে। এই জেলাগুলো হলো— ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কক্সবাজার, পাবনা, ফরিদপুর, টাঙ্গাইল, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, পঞ্চগড়, কুমিল্লা এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জ। এই ব্যাপক পরিসরের প্রত্যাহার প্রক্রিয়া দলের ভেতরের বিভেদ দূর করে ঐক্য ফিরিয়ে আনার ইঙ্গিত বহন করে।
প্রত্যাহারাদেশ প্রাপ্ত উল্লেখযোগ্য নেতাদের মধ্যে রয়েছেন: ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সরাইল উপজেলা বিএনপির ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক আবদুল জব্বার, সরাইল সরকারি কলেজ ছাত্রদলের সাবেক আহ্বায়ক স্বপন মিয়া এবং এম রিফাত বিন জিয়া। কক্সবাজার জেলা থেকে যারা এই সুযোগ পেয়েছেন, তাদের মধ্যে আছেন: ঈদগাঁও উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আলমগীর তাজ জনি, জেলা বিএনপির নারীবিষয়ক সম্পাদক নাছিমা আক্তার (বকুল), পৌর বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম মুকুল এবং সাবেক সদস্য সাহাব উদ্দিন সাহেদ। এছাড়া, পাবনা জেলার সুজানগর উপজেলা বিএনপির সাবেক সদস্যসচিব শেখ আবদুর রউফ এবং অন্যান্য জেলা থেকে আরও বেশ কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ নেতার বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করা হয়েছে। এই পদক্ষেপ নিঃসন্দেহে দলের তৃণমূল থেকে কেন্দ্রীয় পর্যায় পর্যন্ত একটি নতুন উদ্দীপনা এবং সমন্বয় তৈরি করবে বলে পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন।
