বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত সিদ্ধান্ত গ্রহণ নিয়ে চলমান বিতর্কের মাঝে, বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এক জোরালো বক্তব্য পেশ করেছেন। তিনি দৃঢ়ভাবে মনে করেন যে, একটি অনির্বাচিত অন্তর্বর্তী সরকারের দেশের ভবিষ্যৎ প্রভাবিত করে এমন দীর্ঘমেয়াদী সিদ্ধান্ত, বিশেষ করে বন্দর ব্যবস্থাপনা এবং স্বল্পোন্নত দেশের (LDC) তালিকা থেকে উত্তরণের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কোনো আইনি বা নৈতিক এখতিয়ার নেই। তার এই মন্তব্য এমন এক সময়ে এসেছে যখন দেশের দুটি গুরুত্বপূর্ণ টার্মিনাল বিদেশি কোম্পানির হাতে পরিচালনার চুক্তি এবং এলডিসি থেকে উত্তরণের ঘোষণা নিয়ে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা চলছে।
জাতীয় সম্পদের কৌশলগত নিয়ন্ত্রণ ও অন্তর্বর্তী সরকারের এখতিয়ার
সম্প্রতি চট্টগ্রাম বন্দরের লালদিয়া কনটেইনার টার্মিনাল নির্মাণ ও পরিচালনা এবং ঢাকার পানগাঁও নৌ টার্মিনাল পরিচালনার ভার বিদেশি কোম্পানিকে দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে, যা দেশের বিভিন্ন মহলে গভীর উদ্বেগ ও বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। তারেক রহমান তার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রকাশিত একটি পোস্টে এই পদক্ষেপের তীব্র সমালোচনা করেছেন। তার মতে, “একটি দেশ যেই সরকারকে নির্বাচিত করেনি, সেই সরকার দেশের দীর্ঘমেয়াদি ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করে দিতে পারে না।” এটি কেবল রুটিন মাফিক প্রশাসনিক কাজ নয়, বরং জাতীয় সম্পদ নিয়ে এমন কৌশলগত অঙ্গীকার যা ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে দীর্ঘকালের জন্য প্রভাবিত করবে। এই ধরনের সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য একটি গণতান্ত্রিক ম্যান্ডেট অপরিহার্য, যা বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের নেই বলে তিনি উল্লেখ করেন।
এলডিসি থেকে উত্তরণ এবং দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব
বন্দর বিষয়ক চুক্তির পাশাপাশি, অন্তর্বর্তী সরকার ২০২৬ সালে বাংলাদেশকে স্বল্পোন্নত দেশের (LDC) তালিকা থেকে উত্তরণের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেছে। তারেক রহমান এই সিদ্ধান্তকেও প্রশ্নবিদ্ধ করেছেন। তিনি যুক্তি দেন যে, দেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক কাঠামোর ওপর এলডিসি থেকে উত্তরণের সুদূরপ্রসারী প্রভাব রয়েছে। এমন একটি মৌলিক অর্থনৈতিক পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের মতামত এবং জনমতের প্রতিফলন জরুরি। অথচ, গণতান্ত্রিকভাবে অনির্বাচিত একটি সরকার এমন গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করছে, যা দেশের আপামর জনগণের ওপর দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব ফেলবে।
গণতান্ত্রিক ম্যান্ডেটের অপরিহার্যতা
বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান তার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে প্রকাশিত দীর্ঘ পোস্টে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেছেন যে, এই ধরনের কৌশলগত সিদ্ধান্তগুলো কোনো রুটিন ওয়ার্কের অংশ হতে পারে না। বরং, এগুলো হলো জাতীয় সম্পদ এবং ভবিষ্যতের প্রতি কৌশলগত প্রতিশ্রুতি। তিনি জোর দিয়ে বলেন, “ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে বেঁধে ফেলার এসব সিদ্ধান্ত এমন একটি অন্তর্বর্তী সরকার নিয়েছে, যাদের কোনো ধরনের গণতান্ত্রিক ম্যান্ডেট নেই।” নির্বাচিত জনগণের দ্বারা গঠিত সরকারের মাধ্যমেই কেবলমাত্র এ ধরনের নীতিগত ও কৌশলগত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা উচিত, যেখানে জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটে এবং দীর্ঘমেয়াদী জাতীয় স্বার্থ সুরক্ষিত থাকে। তার এই বক্তব্য দেশের শাসন ব্যবস্থা এবং গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া নিয়ে এক গভীর আলোচনার সূত্রপাত ঘটিয়েছে।
