দেশের আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ রাখতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিয়েছে। দেশের ৬৪টি জেলার জন্য নতুন পুলিশ সুপার (এসপি) চূড়ান্ত করা হয়েছে। এই পদক্ষেপ নির্বাচনকালীন সময়ে মাঠ পর্যায়ের প্রশাসনিক কাঠামোকে আরও শক্তিশালী ও পক্ষপাতহীন করবে বলে আশা করা হচ্ছে।
গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতায় নতুন এসপি নিয়োগ
গত সোমবার সন্ধ্যায় প্রধান উপদেষ্টার সরকারি বাসভবন ‘যমুনা’য় এক বিশেষ লটারির মাধ্যমে এই এসপিদের নির্বাচন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়। এই আয়োজনটি সুশাসন ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের প্রতি অন্তর্বর্তী সরকারের অঙ্গীকারের প্রতিফলন। শিগগিরই নির্বাচিত কর্মকর্তাদের পদায়ন সংক্রান্ত সরকারি আদেশ জারি করা হবে বলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং পুলিশ সদর দপ্তর সূত্রে জানা গেছে। এই নিয়োগ প্রক্রিয়া দেশের নির্বাচনী ব্যবস্থায় বিশ্বাসযোগ্যতা ও স্বচ্ছতা বাড়াবে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন।
পুলিশ সদর দপ্তর থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, লটারি প্রক্রিয়াকালে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন, যা এই নিয়োগের গুরুত্ব ও স্বচ্ছতাকে তুলে ধরে। তাঁদের মধ্যে ছিলেন ভারপ্রাপ্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ও ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী। এছাড়াও, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা এবং প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের প্রতিনিধিরা এই স্বচ্ছ প্রক্রিয়ার সাক্ষী ছিলেন। এমন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের উপস্থিতি নিয়োগ প্রক্রিয়ার গ্রহণযোগ্যতা নিশ্চিত করেছে।
আজ মঙ্গলবার যোগাযোগ করা হলে পুলিশ সদর দপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক (প্রশাসন) এ কে এম আওলাদ হোসেন প্রথম আলোকে জানান, “গতকাল যমুনায় লটারির মাধ্যমে দেশের ৬৪টি জেলার জন্য এসপি চূড়ান্ত করা হয়েছে। সরকারি আদেশ জারি হলেই তাঁদের স্ব স্ব কর্মস্থলে পদায়ন করা হবে।” তাঁর এই মন্তব্য অন্তর্বর্তী সরকারের দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণের ইঙ্গিত দেয় এবং নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রশাসনের দ্রুত প্রস্তুতি গ্রহণের চিত্র প্রতিফলিত করে।
এসপি নির্বাচন প্রক্রিয়ার বিস্তারিত ও এর কার্যকারিতা
নির্ভরযোগ্য পুলিশ সূত্রগুলো থেকে জানা গেছে, এসপি নির্বাচনের ক্ষেত্রে একটি সুনির্দিষ্ট ও কঠোর পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়েছে, যা নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করার জন্য ডিজাইন করা হয়েছে। প্রথমে, অতীতে এসপি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন এমন কর্মকর্তাদের তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়। এই পদক্ষেপের উদ্দেশ্য ছিল নির্বাচনে নতুন ও নিরপেক্ষ একটি নেতৃত্ব নিশ্চিত করা, যাতে কোনো পূর্ব অভিজ্ঞতার প্রভাব বা পক্ষপাতিত্বের সুযোগ না থাকে। এরপর, পুলিশ ক্যাডারের ২৫তম, ২৭তম এবং ২৮তম ব্যাচের কর্মকর্তাদের মধ্য থেকে পুঙ্খানুপুঙ্খ যাচাই-বাছাইয়ের মাধ্যমে একটি সংক্ষিপ্ত তালিকা প্রস্তুত করা হয়। এই সংক্ষিপ্ত তালিকায় থাকা কর্মকর্তাদের মধ্য থেকে লটারির মাধ্যমে ৬৪ জনকে নির্বাচন করা হয়েছে। এটি মেধা ও ভাগ্য উভয়কেই সম্মান জানানোর একটি অনন্য প্রক্রিয়া, যা সম্ভাব্য যেকোনো রাজনৈতিক প্রভাব থেকে মুক্ত থাকার বার্তা দেয়।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং পুলিশ সদর দপ্তরের একাধিক সূত্র আরও নিশ্চিত করেছে যে, আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে মাঠপর্যায়ে কর্মকর্তাদের বদলি ও পদায়নের ক্ষেত্রে প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশনায় যোগ্য কর্মকর্তাদের একটি তালিকা সংশ্লিষ্ট কমিটির কাছে জমা দেওয়া হয়েছিল। জেলাওয়ারি পদায়ন চূড়ান্ত করার জন্য লটারি পদ্ধতি গ্রহণ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, যা এই নিয়োগ প্রক্রিয়াকে প্রশ্নাতীত ও অধিকতর গ্রহণযোগ্য করে তুলেছে। এই সিদ্ধান্তের ফলস্বরূপ, গত সপ্তাহে দেশের ৬টি জেলায় নতুন এসপি নিয়োগের যোগদান স্থগিত রাখা হয়েছিল, যা বর্তমান লটারি-ভিত্তিক নিয়োগের পথ সুগম করে। এই নতুন নিয়োগগুলো নির্বাচনকালীন সময়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ এবং একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে আশা করা হচ্ছে। এটি মূলত একটি শক্তিশালী ও নিরপেক্ষ প্রশাসন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে অন্তর্বর্তী সরকারের একটি সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা।
