More

    ২৪০ দিন পর দলে ফিরে আবারও বাদ পড়ার শঙ্কায় সৌম্য

    দীর্ঘ ২৪০ দিনের প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে বাংলাদেশ জাতীয় দলে প্রত্যাবর্তন করেছিলেন সৌম্য সরকার। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে দ্বিতীয় ওয়ানডেতে তার ব্যাট থেকে এসেছিল দলের হয়ে সর্বোচ্চ রানের ঝলমলে এক ইনিংস। অথচ, এমন একটি ব্যক্তিগত উজ্জ্বল পারফরম্যান্সের পরেও এই প্রতিভাবান বাঁহাতি ব্যাটসম্যান নিজেকে দল থেকে বাদ পড়ার আশঙ্কায় ভুগছেন। গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি নিজেই নিজের এই শঙ্কার কথা অকপটে জানিয়েছেন, যা ক্রিকেট মহলে নতুন করে আলোচনার জন্ম দিয়েছে।

    দীর্ঘ অপেক্ষার পর দুর্দান্ত প্রত্যাবর্তন, তবুও অনিশ্চয়তা

    সৌম্য সরকারের এবারের প্রত্যাবর্তন ছিল এক দীর্ঘ বিরতির পর। প্রায় আট মাস পর জাতীয় দলের নীল জার্সি গায়ে জড়িয়ে তিনি ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে দ্বিতীয় ওয়ানডেতে ব্যাট হাতে নামেন এবং দল যখন কঠিন পরিস্থিতিতে, তখন তিনিই দলের হাল ধরেছেন। তার ব্যাট থেকে এসেছে দলের হয়ে সর্বোচ্চ রানের একটি ইনিংস, যা ব্যক্তিগত নৈপুণ্যের বিচারে প্রশংসার দাবি রাখে। কিন্তু ক্রিকেটীয় বাস্তবতায় শুধু ব্যক্তিগত পারফরম্যান্সই সবকিছু নয়, বিশেষত যখন দলের জয় অধরা থাকে। সৌম্যের ক্ষেত্রেও ঠিক একই ধরনের এক অদ্ভুত সমীকরণ কাজ করছে, যেখানে উজ্জ্বল পারফরম্যান্সের পরও তার ভবিষ্যত অনিশ্চিত মনে হচ্ছে।

    অস্থিরতা ও বাদ পড়ার পুনরাবৃত্ত অভিজ্ঞতা

    বাংলাদেশের ওপেনারদের মধ্যে সর্বশেষ যে সেঞ্চুরিটি এসেছিল, সেটিও সৌম্য সরকারের ব্যাট থেকেই। এমনকি, মাত্র তিন ইনিংস আগেও তিনি একটি উজ্জ্বল অর্ধশতক হাঁকিয়েছিলেন। এতদসত্ত্বেও, সৌম্য সরকারের ক্যারিয়ারে দল থেকে খুব অল্প সময়ের মধ্যেই ছিটকে যাওয়ার তিক্ত অভিজ্ঞতা নতুন নয়। এর আগে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির পরও তাকে দল থেকে বাদ পড়তে হয়েছিল, যা তার ক্রিকেট যাত্রাকে বারবার বিঘ্নিত করেছে। এই অস্থিরতা তার পারফরম্যান্সেও কখনো কখনো প্রভাব ফেলেছে, এবং সে কারণেই এবারের সর্বোচ্চ রানের ইনিংসের পরও তিনি ফের দল থেকে বাদ পড়ার শঙ্কা দেখছেন। নিজের অবস্থান সুসংহত করতে তিনি নিরন্তর প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন, কারণ তিনি জানেন, সুযোগ পেলে নিজেকে প্রমাণ করাটাই পেশাদারিত্বের পরিচয়।

    সৌম্য সরকার নিজের অনুভূতি প্রকাশ করে বলেছেন, “অনেক দিন পর দলে ফিরলে কিছুটা নতুন নতুন লাগে, মানিয়ে নিতেও খানিকটা সময় লেগে যায়। কিন্তু একজন পেশাদার ক্রিকেটার হিসেবে দলে এসেই পারফর্ম করাটা আমাদের প্রধান কাজ। যখনই সুযোগ পাই, নিজেকে প্রমাণ করার সর্বোচ্চ চেষ্টা করি। কারণ, যদি তা করতে না পারি, তবে আবার দলের বাইরে চলে যেতে হবে, এটাই বাস্তবতা।”

    পরাজয়ের গ্লানি এবং গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে ব্যর্থতা

    দ্বিতীয় ওয়ানডেতে দলের পরাজয়ের অন্যতম কারিগরদের একজন ছিলেন সৌম্য সরকার নিজেই, এমন এক কঠিন সত্যকেও তিনি মেনে নিতে দ্বিধা করেননি। মূল ম্যাচে তিনি দুটি ফ্রি হিট কাজে লাগাতে পারেননি, যা ম্যাচের গতিপথ পাল্টে দিতে পারতো। এরপর সুপার ওভারেও একটি ফ্রি হিট থেকে তিনি মোটে ১ রান নিতে সক্ষম হন। সুপার ওভারের মতো টানটান উত্তেজনাময় মুহূর্তেও তিনি বড় শট খেলতে পারেননি, যা দলের জয়ের জন্য অপরিহার্য ছিল। এই ব্যর্থতাগুলো সামগ্রিকভাবে দলের পরাজয়ে বড় ভূমিকা রেখেছে।

    নিজেকে নিয়ে সৌম্যের বিশ্লেষণ: ‘আমারই ব্যর্থতা’

    নিজের ব্যর্থতাকে সৌম্য সরকার অকপটে স্বীকার করে নিয়েছেন। তিনি বলেন, “আজকে তিনটি ফ্রি হিট কাজে লাগাতে পারিনি, যদিও এমন ঘটনা আগেও ঘটেছে। তবে এটিকে কোনো প্রতিবন্ধকতা হিসেবে দেখি না। সুপার ওভারে যেহেতু প্রতিটি বলই ফ্রি হিটের মতো, সেখানে আমার লক্ষ্য ছিল ছক্কা বা বাউন্ডারি হাঁকানো। কিন্তু আমি তা পারিনি, সেখানেই আমার কিছু ঘাটতি ছিল বলেই মনে করি।” তিনি আরও যোগ করেন, “এটা সম্পূর্ণ আমারই ব্যর্থতা। বাঁহাতি স্পিনারের বলে একটি বাউন্ডারি আদায় করতে পারব বলে আমার দৃঢ় আত্মবিশ্বাস ছিল। তবে এটাও ঠিক, উইকেটটি ছক্কা বা চার মারার জন্য খুব একটা অনুকূল ছিল না। বলও পুরোনো হয়ে গিয়েছিল, ৫০ ওভারের পরের বলে বড় শট খেলা এমনিতেই কঠিন।”

    সৌম্য সরকারের এই আত্ম-বিশ্লেষণ তার পেশাদারিত্বের প্রমাণ দেয়। তবে এই মুহূর্তে তার সামনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো, এই ব্যর্থতাগুলো কাটিয়ে উঠে নির্বাচকদের আস্থা অর্জন করে দলে নিজের জায়গা পাকাপোক্ত করা। তার প্রতিভার ঝলক দেখা গেলেও, ধারাবাহিকতার অভাব এবং গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে স্নায়ু ধরে রাখতে না পারার প্রবণতা তাকে বারবার অনিশ্চয়তার মুখে ঠেলে দিচ্ছে। তার ভবিষ্যতের পথ কী হবে, তা জানতে হয়তো আরও কিছু সময় অপেক্ষা করতে হবে।

    Recent Articles

    Related Stories

    Leave A Reply

    Please enter your comment!
    Please enter your name here