More

    সরকারে থাকা দলীয় উপদেষ্টাদের বদলাতে হবে: ব্যারিস্টার আনিস

    একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের পূর্বশর্ত হিসেবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ ও প্রশাসনিক কাঠামোতে আমূল পরিবর্তনের আহ্বান জানিয়েছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ। তাঁর মতে, একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন নিশ্চিত করতে দলীয় প্রভাবমুক্ত প্রশাসন অপরিহার্য। এই পরিবর্তনের মাধ্যমেই কেবল আগামী জাতীয় নির্বাচনকে জনআকাঙ্ক্ষার প্রতিধ্বনি করে তোলা সম্ভব বলে তিনি দৃঢ়ভাবে উল্লেখ করেন।

    বুধবার উপজেলা দিবস উপলক্ষে রাজধানীর গুলশানের হাওলাদার টাওয়ারে জাতীয় পার্টি আয়োজিত এক আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ তাঁর সুচিন্তিত অভিমত ব্যক্ত করেন। তিনি জোর দিয়ে বলেন, ড. ইউনূসের বর্তমান রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা কোনো প্রচলিত আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে অর্জিত হয়নি, বরং তা অর্জিত হয়েছে ছাত্র-জনতার, বিশেষত তরুণ প্রজন্মের আত্মত্যাগ ও রক্তের বিনিময়ে। এই ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট তাঁকে কোনো নির্দিষ্ট দল বা ব্যক্তির প্রতি দায়বদ্ধ না রেখে, বরং রাষ্ট্রীয় দায়িত্ববোধের প্রতিই অনুগত থাকার এক নৈতিক বাধ্যবাধকতা তৈরি করেছে।

    ব্যারিস্টার আনিসুল স্পষ্ট করে বলেন যে, ড. ইউনূসের মূল দায়িত্ব হলো দেশের আপামর জনসাধারণের আকাঙ্ক্ষা পূরণে একটি অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ এবং সর্বমহলে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজন করা। এই লক্ষ্য অর্জনের প্রথম ধাপে তিনি বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে থাকা দলীয় উপদেষ্টা এবং প্রশাসনিক গুরুত্বপূর্ণ পদাধিকারীদের অবিলম্বে বদলানোর দাবি জানান। তাঁর যুক্তি হলো, দলীয় আনুগত্যে আবদ্ধ প্রশাসন কখনো একটি নিরপেক্ষ নির্বাচনের সহায়ক হতে পারে না। একটি ত্রুটিমুক্ত নির্বাচনি পরিবেশ নিশ্চিত করতে হলে সম্পূর্ণ দলনিরপেক্ষ একটি প্রশাসনিক ব্যবস্থা অপরিহার্য। তিনি আরও উল্লেখ করেন যে, এই একই দাবি কেবল জাতীয় পার্টির একার নয়; দেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও সম্প্রতি প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাতের সময় একই উদ্বেগের কথা তুলে ধরেছেন এবং এই পরিবর্তনের প্রয়োজনীয়তা অনুধাবন করিয়েছেন।

    নির্বাচনে জাতীয় পার্টির অংশগ্রহণ: বাধা ও অনিশ্চয়তা

    সভায় উপস্থিত সাংবাদিকদের উদ্দেশে ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেন, আজ সকালে মার্কিন গবেষণা সংস্থা আইআরআই (International Republican Institute)-এর প্রতিনিধিরা তাঁর কাছে জানতে চেয়েছিলেন যে, জাতীয় পার্টি আসন্ন নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে কিনা। উত্তরে তিনি স্পষ্ট করে জানান, জাতীয় পার্টি নীতিগতভাবে নির্বাচনে অংশ নিতে আগ্রহী। কিন্তু বর্তমানে তাঁদের ওপর চাপানো হয়েছে মিথ্যা ও হয়রানিমূলক অসংখ্য মামলা, যা তাঁদের স্বাভাবিক রাজনৈতিক কার্যক্রমকে ব্যাহত করছে। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘আমাদের হাত-পা যেন বেঁধে রাখা হয়েছে। প্রকাশ্যে সভা-সমাবেশ করার অনুমতি দেওয়া হয় না, এমনকি নির্বাচনি এলাকায় গিয়েও প্রচারণা চালানো অসম্ভব হয়ে পড়েছে।’

    ব্যারিস্টার আনিসুল স্মরণ করিয়ে দেন যে, সরকার মিথ্যা মামলাগুলো প্রত্যাহারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, কিন্তু আজ অবধি সেই প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়িত হয়নি। এমতাবস্থায়, কিভাবে জাতীয় পার্টি একটি অর্থবহ ও প্রতিযোগিতামূলক নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে, সে প্রশ্ন তিনি জোরালোভাবে তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টা বারবার বলছেন যে, আগামী নির্বাচন দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে সুন্দর ও গ্রহণযোগ্য হবে।’ কিন্তু মাঠের এই বাস্তব পরিস্থিতি, অর্থাৎ বিদ্যমান আইনি জটিলতা এবং প্রচারণার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা নিয়ে একটি অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন কীভাবে সম্ভব, সে বিষয়ে তিনি সরকারের কাছে সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা দাবি করেন।

    Recent Articles

    Related Stories

    Leave A Reply

    Please enter your comment!
    Please enter your name here