More

    আন্দোলনে সমর্থন দিয়ে শেষমেশ জন্মভূমি ছাড়তে হলো জকোভিচকে

    সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিশ্বজুড়ে দুর্নীতি, অন্যায় এবং বৈষম্যের বিরুদ্ধে জনবিক্ষোভ, বিশেষ করে ছাত্র সমাজের নেতৃত্বে, এক নতুন মাত্রা পেয়েছে। এসব গণআন্দোলন অনেক সময় এতটাই তীব্র আকার ধারণ করেছে যে, কয়েকটি দেশে সরকারও পতন হয়েছে। সর্বশেষ উদাহরণ হিসেবে নেপালের রাজনৈতিক পটপরিবর্তন উল্লেখ করা যেতে পারে। এই গণজাগরণের ঢেউয়ে ব্যতিক্রম নয় ইউরোপের দেশ সার্বিয়াও। সেখানে ২০২৪ সাল থেকে চলমান সরকারবিরোধী ছাত্র আন্দোলন তীব্র আকার ধারণ করেছে, যা এবার এক কিংবদন্তী ক্রীড়াবিদকেও দেশত্যাগে বাধ্য করেছে।

    জাতীয় নায়কের দেশত্যাগ: নোভাক জোকোভিচের নতুন ঠিকানা গ্রিসে

    পুরুষ এককে রেকর্ড ২৪টি গ্র্যান্ড স্লাম জয়ী সার্বিয়ান টেনিস তারকা নোভাক জোকোভিচ, যিনি দীর্ঘকাল ধরে তাঁর জন্মভূমি সার্বিয়ার অহংকার হিসেবে বিবেচিত, সম্প্রতি এক নাটকীয় রাজনৈতিক পরিস্থিতির শিকার হয়েছেন। সার্বিয়ার সরকারবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রতি সমর্থন জানানোর কারণে তিনি সরকারের রোষানলে পড়েন এবং শেষ পর্যন্ত জন্মভূমি ছেড়ে সপরিবারে ইউরোপের আরেক দেশ গ্রিসে স্থায়ীভাবে বসবাসের সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হন। এই ঘটনা বিশ্বজুড়ে তাঁর ভক্ত এবং রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মধ্যে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে।

    গ্রিক সংবাদমাধ্যম পোর্তো থেমা-র খবর অনুযায়ী, জোকোভিচ গ্রিসে স্থায়ীভাবে বসবাসের জন্য রাজধানী এথেন্সের অভিজাত এলাকা গ্লিফাদায় একটি বিলাসবহুল বাড়ি কিনেছেন। তাঁর দুই সন্তান, ১১ বছর বয়সী ছেলে স্টেফান এবং আট বছর বয়সী মেয়ে তারাকে এথেন্সের একটি স্বনামধন্য স্কুলে ভর্তি করানো হয়েছে। শুধু তাই নয়, ৩৮ বছর বয়সী এই টেনিস তারকা এথেন্সে একটি অত্যাধুনিক টেনিস একাডেমি চালু করার পরিকল্পনাও করছেন, যা গ্রিসের টেনিস অঙ্গনে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করতে পারে। সম্প্রতি তাঁকে এথেন্সের কাভুরি টেনিস ক্লাবে তাঁর ছেলের সঙ্গে অনুশীলন করতেও দেখা গেছে, যা তাঁর নতুন জীবনের ইঙ্গিত বহন করে।

    গ্রিসে স্থায়ীভাবে বসবাসের জন্য জোকোভিচ ‘গোল্ডেন ভিসা’ প্রাপ্তির প্রক্রিয়া শুরু করেছেন এবং এর জন্য দেশটিতে বড় অঙ্কের বিনিয়োগ করতে প্রস্তুত বলে জানা গেছে। এই প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে তিনি গ্রিসের প্রধানমন্ত্রী কিরিয়াকোস মিতসোতাকিসের সঙ্গে ইতিমধ্যে দুবার বৈঠক করেছেন, যা তাঁর গ্রিসে স্থায়ী হওয়ার সদিচ্ছা এবং অঙ্গীকারের প্রমাণ বহন করে।

    আন্দোলন এবং সরকারি রোষানল

    সার্বিয়ার ছাত্র সমাজ সরকারের দুর্নীতি ও অসমতার বিরুদ্ধে সোচ্চার। তারা আগাম নির্বাচনের দাবিতে অনড় রয়েছে এবং তাদের আন্দোলন প্রতিনিয়ত গতি লাভ করছে। গত ১৫ মার্চ প্রায় তিন লাখ মানুষ সার্বিয়ার রাজধানী বেলগ্রেডে সমবেত হয়েছিল, যা ছিল সরকারের বিরুদ্ধে এক বিশাল প্রতিবাদী সমাবেশ। এই বিক্ষোভের ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করে নোভাক জোকোভিচ ছাত্র ও যুব সমাজের প্রতি তাঁর অকুণ্ঠ সমর্থন ঘোষণা করেন। তাঁর এই সাহসী পদক্ষেপ সার্বিয়ার ক্ষমতাসীন মহলে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি করে।

    নোভাকের সমর্থনমূলক পোস্টের পরপরই সার্বিয়ার প্রেসিডেন্ট আলেকসান্দার ভুচিচ তাঁকে ‘দেশের শত্রু’ হিসেবে চিহ্নিত করেন, যা একজন জাতীয় বীরের প্রতি এক অপ্রত্যাশিত এবং কঠোর প্রতিক্রিয়া ছিল। প্রেসিডেন্টের এই মন্তব্যের পর সরকারের অনুগত সংবাদমাধ্যমগুলো নোভাক জোকোভিচের চরিত্র হননের জন্য নানাভাবে চেষ্টা চালায়। চতুর্দিক থেকে আসা এই তীব্র রাজনৈতিক চাপ এবং মিডিয়া ট্রায়ালের মুখে অবশেষে জোকোভিচ তাঁর জন্মভূমি ত্যাগের মতো কঠিন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে বাধ্য হন। এটি কেবল তাঁর ব্যক্তিগত জীবনে নয়, সার্বিয়ার রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রেক্ষাপটেও এক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে, যেখানে একজন বিশ্বখ্যাত তারকাও রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার রোষানল থেকে রেহাই পাননি।

    Recent Articles

    Related Stories

    Leave A Reply

    Please enter your comment!
    Please enter your name here