রাজনৈতিক অঙ্গনে গুজব একটি পরিচিত অধ্যায়, যা প্রায়শই অস্থিরতা সৃষ্টি করে এবং জনমনে বিভ্রান্তি ছড়ায়। সম্প্রতি জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)-এর মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী-এর পদত্যাগ বিষয়ক একটি চাঞ্চল্যকর গুঞ্জন দলের অভ্যন্তরে এবং গণমাধ্যমে দ্রুততার সাথে ছড়িয়ে পড়েছিল। তবে এই খবরটি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন ও অসত্য বলে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রত্যাখ্যান করেছে দলটি, যা দ্রুততার সাথে এই বিভ্রান্তি নিরসনে সহায়ক হয়েছে।
গুজব নিরসনে এনসিপি-এর আনুষ্ঠানিক অবস্থান
বৃহস্পতিবার (২৪ অক্টোবর) দিবাগত রাত আনুমানিক ২টার দিকে এনসিপি-এর যুগ্ম সদস্যসচিব (দপ্তর) সালেহ উদ্দিন সিফাত-এর স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই গুজবকে দৃঢ়ভাবে অসত্য হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। বিজ্ঞপ্তিতে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয় যে, ‘নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী আমাদের সঙ্গেই আছেন এবং দলের কার্যক্রমে সক্রিয়ভাবে যুক্ত রয়েছেন।’ এই আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দ্রুততার সাথে ছড়িয়ে পড়া ভুল তথ্যের মোকাবিলা করে দলের অভ্যন্তরে ও বাহিরে আস্থা ফেরাতে সাহায্য করে।
দলের পক্ষ থেকে আরও জানানো হয় যে, নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী কেবল দলের সঙ্গে যুক্তই নন, বরং অতি সম্প্রতি তিনি নির্বাচন কমিশনে এনসিপি-এর নিবন্ধন সংক্রান্ত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কাজ অত্যন্ত দক্ষতার সাথে সম্পন্ন করেছেন। এছাড়াও, তিনি মুখ্য সমন্বয়ক হিসেবে দলের বিভিন্ন উইং এবং গুরুত্বপূর্ণ সাংগঠনিক দায়িত্ব নিরলসভাবে পালন করে চলেছেন। এমতাবস্থায়, তাঁর পদত্যাগ অথবা দল থেকে অব্যাহতি নেওয়ার প্রশ্নই আসে না বলে জোর দিয়ে বলা হয়েছে, যা তাঁর নিরবচ্ছিন্ন কর্মতৎপরতার ইঙ্গিত দেয়।
সিনিয়র নেতৃত্বের প্রতিবাদ ও গুজবের উৎপত্তি
এদিকে, এনসিপি-এর আরেক সিনিয়র নেতা এবং সিনিয়র যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক আব্দুল হান্নান মাসউদ এই গুজব মোকাবিলায় এগিয়ে এসেছেন। বৃহস্পতিবার রাতে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে এক পোস্টে তিনি দ্ব্যর্থহীন ভাষায় লিখেছেন, ‘আমি নিশ্চিত করছি যে, জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপি-এর মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী-এর পদত্যাগের যে সংবাদ ছড়ানো হচ্ছে, তা নিছকই একটি গুজব ছাড়া আর কিছুই নয়।’ তিনি এমন অসত্য ও ভিত্তিহীন খবরের তীব্র নিন্দা জানিয়ে সবাইকে সতর্ক থাকার এবং বিভ্রান্ত না হওয়ার আহ্বান জানান।
উল্লেখ্য যে, এই গুজবটির সূত্রপাত ঘটেছিল বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে। কয়েকটি অনলাইন গণমাধ্যম এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ‘এনসিপির সূত্রের’ বরাত দিয়ে পাটওয়ারী-এর পদত্যাগের খবর প্রকাশ করে। সে সময়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে দাবি করা হয় যে, তিনি প্রায় দুই সপ্তাহ আগে দলের আহ্বায়ক এবং সদস্যসচিব বরাবর পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন। তবে দলটির হাইকমান্ড নাকি তখনও আনুষ্ঠানিকভাবে তাঁর পদত্যাগপত্র গ্রহণ করেনি বলেও উল্লেখ করা হয়েছিল। এই ধরনের অসম্পূর্ণ, যাচাইবিহীন এবং বিভ্রান্তিকর তথ্যই জনমনে গুজবের জন্ম দেয় ও অস্থিরতা তৈরি করে।
এনসিপি কর্তৃপক্ষ এই ঘটনায় প্রকাশিত সকল অসত্য সংবাদকে তীব্রভাবে প্রত্যাখ্যান করেছে এবং সংশ্লিষ্ট গণমাধ্যমগুলোকে সঠিক তথ্য যাচাই করে সংবাদ প্রকাশের অনুরোধ জানিয়েছে। দলটির নেতারা সম্মিলিতভাবে নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী-এর সক্রিয়তা এবং দলের প্রতি তাঁর অবিচল নিষ্ঠার উপর জোর দিয়ে বলেছেন যে, এমন গুজব দলের ঐক্যে ফাটল ধরাতে পারবে না এবং দলের কার্যক্রম যথারীতি চলবে।
