বগুড়ায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মিছিলে গুলিবর্ষণের মাধ্যমে হত্যাচেষ্টার এক গুরুতর অভিযোগে দায়ের করা মামলায় দেশজুড়ে ব্যাপক চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। এই ঘটনায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ১৭২ জন ব্যক্তির নাম সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করে মোট ৪৭২ জনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। চাঞ্চল্যকর এই ঘটনাটি ঘটেছিল ২০২৪ সালের ৩ আগস্ট বগুড়া শহরের বড়গোলা এলাকায়।
মামলার বিস্তারিত ও বাদী
বুধবার, বগুড়া শহরের নাটাইপাড়ার বাসিন্দা মিজানুর রহমানের পুত্র আরাফ এই মামলাটি বগুড়া সদর থানায় দায়ের করেন। মামলা দায়েরের পর বগুড়া সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাসান বাসির মামলার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন, যা ঘটনার গুরুত্ব আরও বাড়িয়ে তুলেছে।
গুরুত্বপূর্ণ অভিযুক্ত ব্যক্তিরা
এই মামলার এজাহারে যেসব গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা অভিযুক্ত হিসেবে উল্লিখিত হয়েছেন, তাদের মধ্যে রয়েছেন—সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি, সাবেক প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক, বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মজিবর রহমান মজনু, সাধারণ সম্পাদক রাগেবুল আহসান রিপু এবং সাবেক সংসদ সদস্য সুরাইয়া নিগার সুলতানা ডরথী প্রমুখ। দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনের এমন শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তিদের নাম মামলায় অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় তা ভিন্ন মাত্রা লাভ করেছে।
ঘটনার বিবরণ এজাহার অনুযায়ী
মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে যে, গত ৩ আগস্ট দুপুরে শহরের বড়গোলা এলাকায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একটি শান্তিপূর্ণ মিছিল অনুষ্ঠিত হচ্ছিল। অভিযোগ অনুযায়ী, সেই সময় শেখ হাসিনাসহ মামলার প্রধান ১০ জন আসামির নির্দেশে অন্যান্য অভিযুক্তরা লাঠি, রড, হকিস্টিক, চাপাতি, ককটেল এবং বিভিন্ন আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে মিছিলের ওপর অতর্কিত ও নির্মম হামলা চালায়। এজাহারে আরও দাবি করা হয়েছে, হামলাকারীদের কয়েকজন সরাসরি মিছিল লক্ষ্য করে গুলি বর্ষণ করে। এই গুলিবর্ষণে বাদীর শরীরে ৪৩টি গুলি বিদ্ধ হয় এবং তিনি ঘটনাস্থলেই জ্ঞান হারিয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন, যা ঘটনার ভয়াবহতা প্রমাণ করে।
পুলিশের অবস্থান
এদিকে, এই সংবেদনশীল মামলা প্রসঙ্গে বিস্তারিত জানতে বগুড়া সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হাসান বাসিরের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি শুধু মামলার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। তবে, তিনি এই মামলা-সংক্রান্ত অন্য কোনো তথ্য প্রকাশে সুস্পষ্টভাবে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন, যা পরিস্থিতি সম্পর্কে আরও কৌতূহল সৃষ্টি করেছে। এই উচ্চপর্যায়ের মামলাটির পরবর্তী ধাপগুলো রাজনৈতিক ও আইনি মহলে নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।
