গাজীপুর-১ আসনের অন্তর্গত কালিয়াকৈর উপজেলা বর্তমানে এক গভীর আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। এই এলাকায় বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)-এর একজন শীর্ষ নেতার বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ উত্থাপিত হয়েছে, যা স্থানীয় রাজনীতি এবং জনজীবনে সুদূরপ্রসারী প্রভাব ফেলছে। অভিযোগের তীর সরাসরি জেলা বিএনপির সদস্য সচিব চৌধুরী ইশরাক আহমেদ সিদ্দিকীর দিকে। তার বিরুদ্ধে স্থানীয় অঞ্চলে একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার এবং বিভিন্ন অপকর্মের মাধ্যমে একটি শক্তিশালী সাম্রাজ্য গড়ে তোলার অভিযোগ উঠেছে।
সাম্প্রতিক সময়ে সরেজমিন অনুসন্ধানে এবং স্থানীয় নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের সঙ্গে নিবিড় আলাপচারিতার মাধ্যমে এসব তথ্য উঠে এসেছে। প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, চৌধুরী ইশরাক আহমেদ সিদ্দিকীর অনুসারীরা এলাকায় চাঁদাবাজি, দখলবাজি এবং সালিশের নামে ব্যাপক বাণিজ্যসহ নানা ধরনের অনৈতিক ও বেআইনি কর্মকাণ্ডে লিপ্ত। এই অনুসারীদের একটি বড় অংশকে বর্তমান ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের শাসনামলে সুবিধাভোগী হিসেবে আখ্যায়িত করা হচ্ছে এবং তাদেরকে ‘হাইব্রিড নেতা’ হিসেবে চিহ্নিত করা হচ্ছে। আরও আশ্চর্যজনক বিষয় হলো, এদের অনেকেই উপজেলা ও পৌর কমিটিতে গুরুত্বপূর্ণ পদ লাভ করেছেন, যা দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দল ও আদর্শচ্যুতির ইঙ্গিত বহন করে। স্থানীয় সূত্রমতে, এই সমস্ত অপকর্ম চলছে চৌধুরী ইশরাক আহমেদ সিদ্দিকীর প্রত্যক্ষ মদদে ও ছত্রছায়ায়।
এই প্রভাবশালী নেতার অদম্য দাপটে কেবল সাধারণ মানুষই নয়, স্থানীয় বিএনপির সাধারণ নেতাকর্মী এবং সমর্থকরাও চরম আতঙ্কে দিনাতিপাত করছেন। ভয়ে কেউ প্রকাশ্যে তার বিরুদ্ধে মুখ খুলতে কিংবা প্রতিবাদ করতে সাহস পাচ্ছেন না। ফলস্বরূপ, তার বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগগুলো এখন কালিয়াকৈরের মানুষের মুখে মুখে উচ্চারিত হচ্ছে, যা এক প্রকার ‘ওপেন সিক্রেট’ বা প্রকাশ্য গোপন বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই পরিস্থিতি স্থানীয় রাজনৈতিক পরিমণ্ডলকে গভীরভাবে অস্থির করে তুলেছে এবং ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় এক বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের সৃষ্টি করেছে।
পারিবারিক কোন্দল ও সম্পত্তি আত্মসাতের গুরুতর অভিযোগ
চৌধুরী ইশরাক আহমেদ সিদ্দিকীর বিরুদ্ধে কেবল স্থানীয় অপকর্মের অভিযোগই নয়, তার পারিবারিক জীবন থেকেও উঠেছে গুরুতর প্রশ্ন। গত বছরের ডিসেম্বরে জাতীয় প্রেস ক্লাব মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে তার বড় ভাই চৌধুরী ইরাদ আহমেদ সিদ্দিকী তার বিরুদ্ধে শারীরিক নির্যাতন ও সম্পত্তি আত্মসাতের ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদ করেন। এই সংবাদ সম্মেলনটি জাতীয় গণমাধ্যমে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করে এবং জনমনে নানা প্রশ্ন তৈরি করে।
সংবাদ সম্মেলনে ইরাদ আহমেদ সিদ্দিকী অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও সংবেদনশীল অভিযোগ উত্থাপন করেন। তিনি জানান যে, গত দীর্ঘ আট বছর ধরে তার ছোট ভাই ইশরাক আহমেদ চৌধুরী তাকে তাদের অসুস্থ পিতার সঙ্গে দেখা করতে দিচ্ছেন না। এই অভিযোগটি কেবল পারিবারিক সম্পর্কের চরম অবনতিই নয়, বরং একজন সন্তানের প্রতি মানবিক অধিকার লঙ্ঘনেরও ইঙ্গিত দেয়। ইরাদ আরও গভীর আশঙ্কা প্রকাশ করেন যে, তার অসুস্থ ও বৃদ্ধ পিতার মূল্যবান সম্পত্তি ভয়ভীতি দেখিয়ে এবং নানা কৌশলে ফুসলিয়ে নিজ নামে কুক্ষিগত করার অপচেষ্টায় লিপ্ত আছেন ইশরাক আহমেদ চৌধুরী। এটি একটি গুরুতর অভিযোগ যা একজন পরিবারের সদস্যের প্রতি অমানবিক আচরণের পাশাপাশি সম্পত্তির অবৈধ দখলের ইঙ্গিত বহন করে।
এছাড়াও, ইরাদ আহমেদ সিদ্দিকী অভিযোগ করেন যে, তার ছোট ভাই ইশরাক প্রতিনিয়ত তাকে প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে যাচ্ছেন। এমন পরিস্থিতিতে নিজের জীবন ও পিতার সম্পত্তির সুরক্ষায় তিনি সরকারের ঊর্ধ্বতন মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন এবং এ বিষয়ে দ্রুত আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জোর দাবি জানান। একই সঙ্গে, তিনি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)-এর একজন প্রভাবশালী নেতা হিসাবে ইশরাক আহমেদ চৌধুরী যাতে তার ক্ষমতার অপব্যবহার করতে না পারেন, সে জন্য দলের হাইকমান্ডেরও জরুরি হস্তক্ষেপ কামনা করেন। এই পারিবারিক বিবাদ এখন রাজনৈতিক অঙ্গনেও এক নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছে, যেখানে একজন শীর্ষ নেতার বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার এবং পারিবারিক নৈতিকতার মতো স্পর্শকাতর প্রশ্ন উঠেছে।
