ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে) নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সম্প্রতি এক নাটকীয় পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। আগামী ১৫ নভেম্বর এই নির্বাচনের নির্ধারিত দিনক্ষণ থাকলেও, আকস্মিকভাবে তা স্থগিত ঘোষণা করা হয়েছে। এই সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ ও সংঘবদ্ধ প্রার্থীরা একযোগে কঠোর আন্দোলনের পাশাপাশি আইনি পদক্ষেপ গ্রহণের হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন, যদি শনিবার (২৫ অক্টোবর)-এর মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়ে স্পষ্ট ঘোষণা না আসে। এই পরিস্থিতি পেশাদার সাংবাদিকদের মধ্যে গভীর উদ্বেগ ও অসন্তোষের জন্ম দিয়েছে।
নির্বাচন স্থগিতের ঘোষণা ও তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া
গত বৃহস্পতিবার (২৩ অক্টোবর) রাতে ডিইউজের নোটিশ বোর্ডে টাঙানো এক বিজ্ঞপ্তিতে নির্বাচন কমিটির চেয়ারম্যান হাসান হাফিজ আকস্মিকভাবে নির্বাচন স্থগিতের ঘোষণা দেন। এই অপ্রত্যাশিত সংবাদ দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার সাথে সাথেই জাতীয় প্রেসক্লাব প্রাঙ্গণে এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন বিভিন্ন প্যানেলের প্রার্থীরা। সেখানে তারা এই সিদ্ধান্তকে অগণতান্ত্রিক ও অযৌক্তিক আখ্যা দিয়ে তীব্র প্রতিবাদ জানান এবং অনতিবিলম্বে নির্বাচন পূর্বঘোষিত তারিখেই আয়োজনের দাবি তোলেন।
সংবাদ সম্মেলনে সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী দিদারুল আলম বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, “নির্বাচনের ঘোষিত সময়সূচী অনুযায়ী ইতোমধ্যে মনোনয়ন ফরম বিক্রি ও জমা দেওয়ার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। শতাধিক প্রার্থী বিভিন্ন পদে তাদের মনোনয়ন ক্রয় ও জমা দিয়েছেন। প্রত্যেকেই অত্যন্ত উৎসবমুখর পরিবেশে তাদের প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন, যা ইউনিয়নের গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির এক সুন্দর প্রতিচ্ছবি। অথচ কোনো সুনির্দিষ্ট বা যৌক্তিক কারণ ছাড়াই হঠাৎ করে নির্বাচন স্থগিতের এমন ঘোষণা দেখে আমরা গভীরভাবে হতবাক ও ক্ষুব্ধ।” তিনি আরও যোগ করেন, ডিইউজের গঠনতন্ত্রে কেবল অনাকাঙ্ক্ষিত ও চরম প্রতিকূল পরিস্থিতি ব্যতীত এভাবে নির্বাচন স্থগিত বা বাতিলের কোনো বিধান নেই। অথচ নির্বাচন স্থগিতের কারণ হিসেবে ‘অনিবার্য কারণ’ দেখানো হয়েছে, যার কোনো ভিত্তি বা সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা নেই। আমরা এই একতরফা ও ভিত্তিহীন সিদ্ধান্তের তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি যে, অবশ্যই যথাসময়ে, অর্থাৎ ১৫ নভেম্বরেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে হবে।
প্রার্থীদের সম্মিলিত প্রতিবাদ ও হুঁশিয়ারি
সাংগঠনিক সম্পাদক পদপ্রার্থী ডিএম আমিরুল ইসলাম ওমর এই স্থগিতাদেশকে সরাসরি চ্যালেঞ্জ করে বলেন, “‘অনিবার্য কারণ’ বলে কোনো কারণ নেই, এটি একটি অমূলক অজুহাত মাত্র। কী কারণে, কার ইশারায় এই গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচন স্থগিত করা হয়েছে, সে বিষয়ে নির্বাচন কমিশনকে অবশ্যই স্বচ্ছতার সাথে স্পষ্ট ব্যাখ্যা দিতে হবে। যদি নির্বাচন কমিশন সুনির্দিষ্ট, গ্রহণযোগ্য ও যৌক্তিক কোনো কারণ দেখাতে পারে, তবে ভিন্ন কথা; নতুবা নির্ধারিত ১৫ নভেম্বরেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে হবে, এতে কোনো আপস সম্ভব নয়।” তার এই বক্তব্য কমিশনের কাছে জবাবদিহিতার দাবিকে জোরালো করে তুলেছে।
জনকল্যাণ সম্পাদক পদপ্রার্থী ইস্রাফিল ফরাজী এক কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, “শনিবার সন্ধ্যার মধ্যে নির্বাচন স্থগিতের এই অবৈধ ও অগণতান্ত্রিক সিদ্ধান্ত অবিলম্বে প্রত্যাহার করতে হবে। অন্যথায়, পেশাদার সাংবাদিকরা ঐক্যবদ্ধভাবে কঠোর আন্দোলনে নামতে বাধ্য হবেন এবং প্রয়োজনে এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আইনি প্রতিকার চেয়ে আদালতের দ্বারস্থ হতেও দ্বিধা করবেন না।” তার এই ঘোষণা স্পষ্টভাবে নির্দেশ করে যে, প্রার্থীরা তাদের দাবিতে অনড় এবং যেকোনো মূল্যে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে বদ্ধপরিকর।
সংঘবদ্ধ প্রার্থীদের এই কঠিন অবস্থান ডিইউজে নির্বাচনকে ঘিরে চলমান অস্থিরতাকে এক নতুন মাত্রা দিয়েছে। সবাই এখন অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন শনিবার (২৫ অক্টোবর) সন্ধ্যার মধ্যে নির্বাচন কমিশনের পরবর্তী পদক্ষেপের জন্য। এই সিদ্ধান্তের ওপরই নির্ভর করছে ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের ভবিষ্যত রাজনৈতিক গতিপথ এবং সাংবাদিকদের গণতান্ত্রিক অধিকারের প্রশ্ন।
