আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে দেশের সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সুসংহত রাখা এবং জননিরাপত্তা নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে, সার্বিক প্রস্তুতি, দেশব্যাপী আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থাপনা, বিভিন্ন অভিযান পরিচালনা এবং যেকোনো সহিংসতা সৃষ্টিকারীর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণসহ একাধিক জরুরি বিষয় নিয়ে একটি উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে মিলিত হয়েছে আইন-শৃঙ্খলা সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি।
রোববার (২৬ অক্টোবর) সকাল ১১টায় সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে এই গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা সভা শুরু হয়েছে। বৈঠকের সভাপতিত্ব করছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে প্রাপ্ত তথ্যানুসারে, এই বৈঠকে দেশের নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দিক পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পর্যালোচনা করা হচ্ছে।
এই বৈঠকে কেবল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারাই নন, বরং শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান এবং মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম-সহ সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয় ও দপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা অংশগ্রহণ করেছেন। তাঁদের সম্মিলিত অভিজ্ঞতা ও পরামর্শ জাতীয় নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে অত্যন্ত সহায়ক হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
জাতীয় নির্বাচন ও জননিরাপত্তা: বৈঠকের প্রধান আলোচ্যসূচি
আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দেশের নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির এই বৈঠকে বেশ কিছু স্পর্শকাতর ও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য বিষয়গুলো হলো:
১. অপরাধ দমন ও জননিরাপত্তা: দেশব্যাপী চুরি, ছিনতাই, চাঁদাবাজি, ভূমি দখল এবং সংঘবদ্ধ দুষ্কৃতিকারীদের সকল প্রকার বেআইনি কার্যকলাপ কঠোর হাতে দমনের জন্য কার্যকর কৌশল প্রণয়ন ও তা বাস্তবায়নে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। এর মাধ্যমে সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করাই মূল লক্ষ্য।
২. জুলাই হত্যাকাণ্ডের বিচার ও সাইবার প্রতিরোধ: আলোচিত জুলাই হত্যাকাণ্ডের শহীদদের মামলার রেকর্ড, তদন্তের অগ্রগতি এবং বিচার প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করার বিষয়ে পর্যালোচনা করা হয়েছে। একই সাথে, দেশে অস্থিরতা সৃষ্টিকারী এবং উসকানিমূলক সাইবার প্রচারণার বিরুদ্ধে প্রযুক্তিগত ও আইনগতভাবে ব্যবস্থা নেওয়ার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে, যাতে সামাজিক শান্তি বিঘ্নিত না হয়।
৩. নারী ও শিশুনির্যাতন প্রতিরোধ: নারী ও শিশুনির্যাতন এবং ধর্ষণের মতো জঘন্য অপরাধের বিরুদ্ধে আইনগত ও সামাজিক প্রতিরোধ ব্যবস্থা আরও জোরদার করার বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। এর মাধ্যমে সমাজের দুর্বল অংশের সুরক্ষা নিশ্চিত করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করা হয়েছে।
৪. মাদক নির্মূল অভিযান: মাদকের অপব্যবহার রোধে আরও কার্যকর ও সুদূরপ্রসারী পদক্ষেপ গ্রহণের বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে। যুব সমাজকে মাদকের করাল গ্রাস থেকে রক্ষা করতে বিশেষ অভিযান ও সচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালনার ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে।
৫. সন্ত্রাসবাদ ও নিষিদ্ধ সংগঠনের অপতৎপরতা: জামিনে মুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসীদের দ্বারা পুনরায় সন্ত্রাসী কার্যক্রম প্রতিরোধ, নির্মূল ও নিয়ন্ত্রণের কৌশল নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। একই সাথে, নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠনগুলোর সকল প্রকার অপতৎপরতা কঠোর হাতে দমনের জন্য গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো এবং প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে।
৬. শিল্প খাতে শ্রমিক কল্যাণ: গার্মেন্টস ও অন্যান্য শিল্পকারখানার শ্রমিকদের বেতন-ভাতা ও বোনাস যথাসময়ে পরিশোধ নিশ্চিত করার বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে, যা শিল্পাঞ্চলে শৃঙ্খলা ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখার জন্য অত্যাবশ্যক।
৭. শিল্প খাতে বিশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ: গার্মেন্টস কারখানা, ওষুধ শিল্পসহ বিভিন্ন শিল্পপ্রতিষ্ঠানে সম্ভাব্য বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির যেকোনো তৎপরতা মোকাবেলায় আগাম প্রস্তুতি ও প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে, যাতে দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতি ব্যাহত না হয়।
৮. অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার অভিযান: দেশে অবৈধ অস্ত্রের বিস্তার রোধে অস্ত্র জমা দেওয়া এবং ব্যাপকভিত্তিক অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার অভিযান পরিচালনার বিষয়ে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে, যা জননিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে অপরিহার্য।
৯. সীমান্ত ও পার্বত্য অঞ্চলের নিরাপত্তা: দেশের সীমান্ত এলাকা এবং পার্বত্য অঞ্চলের নিরাপত্তা পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে যেকোনো প্রকার অস্থিতিশীলতা রোধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ এবং সেখানে শান্তি ও শৃঙ্খলা বজায় রাখার ওপর বিশেষ গুরুত্বারোপ করা হয়েছে।
এই বৈঠক থেকে প্রাপ্ত সিদ্ধান্তগুলো দেশের আসন্ন নির্বাচনকালীন এবং পরবর্তী সময়ে জননিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।
