More

    জুলাই সনদ যেন প্রতারণায় পরিণত না হয় : এনসিপি

    দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে বহুল প্রতীক্ষিত জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন একটি যুগান্তকারী আদেশ প্রণয়নের কাজ করছে। এই পদক্ষেপকে অনেকেই সনদটির বাস্তবায়ন এবং এর আইনি কাঠামো সুদৃঢ় করার পথে এক গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি হিসেবে দেখছেন। তবে, এই ইতিবাচক অগ্রগতির পাশাপাশি একটি বড় শঙ্কাও দানা বাঁধছে: শেষ পর্যন্ত যাতে কোনো নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দলের চাপ বা প্রভাবে প্রভাবিত হয়ে এই সনদটি কেবলই একটি প্রতারণার বস্তুতে পর্যবসিত না হয়, সেদিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখা অত্যাবশ্যক।

    জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সতর্কবার্তা ও উদ্বেগ

    শনিবার দুপুরে জাতীয় সংসদের এলডি হলে আয়োজিত এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্য সচিব আখতার হোসেন ঐকমত্য কমিশনের এই তৎপরতা এবং জুলাই জাতীয় সনদের ভবিষ্যৎ নিয়ে গভীরভাবে উদ্বেগ প্রকাশ করে এসব মন্তব্য করেন। তাঁর মতে, সনদ বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে কমিশনের সদিচ্ছা প্রশংসনীয় হলেও, এর স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি। তিনি জোর দিয়ে বলেন যে, কোনো প্রকার রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ সনদের মূল উদ্দেশ্যকে ব্যাহত করতে পারে, যা দেশ ও জাতির জন্য দুর্ভাগ্যজনক হবে।

    এর আগে একই স্থানে সকাল ১০টা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত টানা তিন ঘণ্টা জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে এনসিপি’র শীর্ষস্থানীয় নেতাদের এক ফলপ্রসূ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এই বৈঠকের সূত্র ধরেই আখতার হোসেন দেশের বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে জুলাই সনদের প্রাসঙ্গিকতা এবং এর বাস্তবায়নের চ্যালেঞ্জগুলো তুলে ধরেন।

    সনদ বাস্তবায়ন নিয়ে দ্বিধাবিভক্তি: এক জটিল পরিস্থিতি

    আখতার হোসেন তাঁর বক্তব্যে উল্লেখ করেন যে, অনেক রাজনৈতিক দল initially জুলাই সনদে স্বাক্ষর করলেও, বর্তমানে তাদের মধ্যে স্পষ্ট দ্বিধাবিভক্তি দেখা দিয়েছে। এই বিভাজন এতটাই প্রকট যে, স্বাক্ষরকারী দলগুলো কার্যত দুটি ভিন্ন শিবিরে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। একটি পক্ষ সনদ থেকে তাদের পূর্বের স্বাক্ষর প্রত্যাহার করে নিতে চাইছে, যা সনদের গ্রহণযোগ্যতাকে প্রশ্নের মুখে ফেলে দিচ্ছে। অন্যদিকে, আরেকটি পক্ষ সনদের সম্পূর্ণ বাস্তবায়ন প্রক্রিয়াকে ভেস্তে দেওয়ার জন্য নানা সুযোগ খুঁজছে। এই অভ্যন্তরীণ কোন্দল ও বিভেদ নিঃসন্দেহে সনদের ভবিষ্যৎকে আরও অনিশ্চিত করে তুলছে এবং এর সফল বাস্তবায়নকে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে ঠেলে দিচ্ছে।

    ঐকমত্য কমিশন ও এনসিপি’র প্রতিনিধিদের উপস্থিতি

    ঐকমত্য কমিশনের পক্ষে অনুষ্ঠিত বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন কমিশনের সহসভাপতি আলী রীয়াজ এবং সদস্যবৃন্দ— বদিউল আলম মজুমদার, ড. ইফতেখারুজ্জামানআইয়ুব মিয়া। তাদের উপস্থিতি কমিশনের পক্ষ থেকে এই ইস্যুতে গুরুত্বের ইঙ্গিত বহন করে।

    অন্যদিকে, জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) পক্ষে বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন দলের যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষার, জাবেদ রাসিন, খালেদ সাইফুল্লাহ এবং যুগ্ম সদস্য সচিব জহিরুল ইসলাম মুসা। উভয় পক্ষের প্রতিনিধিবর্গের উপস্থিতি বৈঠকের গুরুত্ব এবং আলোচনার গভীরতাকে তুলে ধরে। এনসিপি নেতারা এ পর্যায়ে স্পষ্ট করে জানিয়েছেন যে, তারা বর্তমানে কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে জোটবদ্ধ হওয়ার বিষয়ে কোনো আলোচনায় লিপ্ত হননি, যা তাদের স্বাধীন অবস্থানকে নির্দেশ করে।

    সনদ বাস্তবায়নের আদেশের স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন ও এনসিপি’র প্রত্যাশা

    আখতার হোসেন আরও বলেন, জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের প্রণীত আদেশের মাধ্যমে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন হওয়ার কথা থাকলেও, এই আদেশের মূল বক্তব্য বা খুঁটিনাটি বিষয়গুলো সম্পর্কে জানাতে কমিশন ‘অপারগতা’ প্রকাশ করেছে। এই অস্বচ্ছতা এনসিপিকে গভীরভাবে উদ্বিগ্ন করেছে এবং এর ফলে দলটি এখনো সনদ বাস্তবায়নের বিষয়ে সম্পূর্ণরূপে আশাবাদী হতে পারছে না। তিনি জোর দিয়ে বলেন যে, একটি গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় সনদের ক্ষেত্রে এমন গোপনীয়তা গ্রহণযোগ্য নয়।

    এনসিপি দৃঢ়ভাবে প্রত্যাশা করে যে, কমিশন যে খসড়া আদেশ প্রস্তুত করছে, সেটি অবিলম্বে তাদের এবং অন্যান্য সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর সঙ্গে শেয়ার করবে। এতে করে আদেশের প্রতিটি দিক পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পর্যালোচনা করে সনদ স্বাক্ষরের দিকে পরিপূর্ণভাবে নিশ্চিত হয়ে অগ্রসর হওয়া যাবে। আখতার হোসেন আরও প্রশ্ন তোলেন, “সনদ বাস্তবায়ন আদেশ, এর অন্তর্নিহিত টেক্সট, কনটেন্ট এবং এর কার্যকারিতার জায়গাগুলো আসলে কী হবে? এখন পর্যন্ত এই বিষয়গুলো আমাদের কাছে পরিষ্কার নয়।” তিনি উপসংহারে বলেন যে, এনসিপি তাদের সুনির্দিষ্ট দাবিগুলো ইতিমধ্যেই কমিশনের কাছে উপস্থাপন করেছে এবং স্বচ্ছতা ও অংশগ্রহণের মাধ্যমেই এই সনদ জাতীয় ঐক্যের প্রতীক হয়ে উঠতে পারে।

    Recent Articles

    Related Stories

    Leave A Reply

    Please enter your comment!
    Please enter your name here