More

    ঐতিহ্যবাহী সবুজ ছেড়ে যে কারণে অন্য রঙের জার্সি পরতে চলেছে পাকিস্তান

    ক্রিকেট বিশ্বে পাকিস্তান দলের নাম উচ্চারিত হলেই যে চিত্রটি সর্বপ্রথম মানসপটে ভেসে ওঠে, তা হলো তাদের ঐতিহ্যবাহী গাঢ় সবুজ জার্সি। এই সবুজ রঙ শুধু একটি জার্সির রঙ নয়, এটি পাকিস্তানের ক্রিকেটীয় আবেগ, সংস্কৃতি ও পরিচয়ের এক সুদীর্ঘ প্রতীক। তবে আসন্ন দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজের প্রথম ম্যাচে সেই চিরাচরিত সবুজ জার্সি ছেড়ে এক ভিন্নধর্মী এবং অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ রঙে নিজেদের আবৃত করতে চলেছে পাকিস্তান দল। এই পরিবর্তন কেবল বাহ্যিক নয়, বরং এটি এক মহৎ সামাজিক বার্তা বহন করে আনছে, যা খেলার সীমানা ছাড়িয়ে সমাজের গভীরে প্রোথিত হবে।

    এক ভিন্নধর্মী উদ্যোগ: গোলাপী জার্সিতে পাকিস্তান

    দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজের প্রথম টি-টোয়েন্টিতে পাকিস্তান দল মাঠে নামবে গোলাপী রঙের জার্সিতে। এই সিদ্ধান্ত অনেকের কাছে অপ্রত্যাশিত মনে হলেও, এর পেছনে রয়েছে একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং মানবিক উদ্দেশ্য – স্তন ক্যান্সার সম্পর্কে জনসচেতনতা বৃদ্ধি। বিশ্বজুড়ে লক্ষ লক্ষ নারীর জীবন কেড়ে নেওয়া এই মরণব্যাধি সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করে তোলার লক্ষ্যেই পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড (পিসিবি) এই অভিনব পদক্ষেপ নিয়েছে। অতীতে দক্ষিণ আফ্রিকা ক্রিকেট দল এমন জার্সি পরে জনসচেতনতা বাড়ালেও, পাকিস্তানের ক্রিকেটে এমন উদ্যোগ এবারই প্রথম। এটি দেশের ক্রিকেট ইতিহাসে একটি নতুন অধ্যায় উন্মোচন করছে, যেখানে খেলাধুলা হয়ে উঠছে সামাজিক পরিবর্তনের এক শক্তিশালী মাধ্যম।

    বৃহত্তর সচেতনতার বার্তা: মাঠ থেকে জনপদ পর্যন্ত

    ২৮শে অক্টোবর রাওয়ালপিন্ডি ক্রিকেট স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিতব্য এই ঐতিহাসিক ম্যাচে শুধু খেলোয়াড়দের জার্সিতেই গোলাপী রঙ থাকবে না। পিসিবি ঘোষণা করেছে যে, সেদিন পুরো স্টেডিয়ামকেই ‘গোলাপী’ রঙে সজ্জিত করা হবে। দর্শকদের গ্যালারি থেকে শুরু করে মাঠের সাজসজ্জা পর্যন্ত, সবকিছুতেই গোলাপী রঙের ছোঁয়া থাকবে, যা স্তন ক্যান্সার সচেতনতার এক বিশাল প্রতীক হিসেবে কাজ করবে। বোর্ডের এক বিবৃতিতে পরিষ্কারভাবে উল্লেখ করা হয়েছে, “কর্পোরেট সামাজিক দায়িত্বের অংশ হিসেবে পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড, পিংক রিবন পাকিস্তানের সঙ্গে যৌথভাবে স্তন ক্যান্সার সম্পর্কে সচেতনতা ছড়ানোর এই মহৎ উদ্যোগ নিয়েছে।” এই পদক্ষেপ কেবল একটি ম্যাচের আয়োজন নয়, বরং এটি একটি জাতীয় পর্যায়ে সামাজিক দায়বদ্ধতার দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে।

    সকলের অংশগ্রহণ: এক সম্মিলিত প্রয়াস

    এই সচেতনতামূলক কার্যক্রমে শুধু পাকিস্তান দলের খেলোয়াড়রাই সীমাবদ্ধ থাকবেন না। পিসিবির ঘোষণায় জানা গেছে, পাকিস্তানের খেলোয়াড়রা বিশেষভাবে ডিজাইন করা গোলাপী রঙের জার্সি পরবেন। অন্যদিকে, সফরকারী দক্ষিণ আফ্রিকার খেলোয়াড়গণ এবং সকল ম্যাচ কর্মকর্তা – আম্পায়ার, রেফারি, এমনকি কোচিং স্টাফ, ধারাভাষ্যকার ও সম্প্রচার কর্মীরাও তাঁদের পোশাকে গোলাপী ফিতা ধারণ করে এই মহৎ উদ্যোগের অংশীদার হবেন। এটি একটি সম্মিলিত এবং সর্বাত্মক প্রচেষ্টা, যা প্রমাণ করে যে একটি গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যা মোকাবেলায় পুরো ক্রিকেট ভ্রাতৃত্ব একজোট হতে পারে।

    মাঠের বাইরেও সচেতনতা: বিনামূল্যে স্ক্রিনিংয়ের সুযোগ

    এই উদ্যোগ শুধু মাঠের খেলার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে না, বরং এর প্রভাব সমাজের গভীরে পৌঁছে দিতে পিসিবি বেশ কিছু বাস্তব পদক্ষেপ নিয়েছে। ম্যাচের দিন মাঠে ব্যবহৃত স্টাম্পগুলিও থাকবে গোলাপী ব্র্যান্ডিং-এর মোড়কে, যা দর্শকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করবে। পাশাপাশি, খেলাটির সরাসরি সম্প্রচারের সময় দর্শকদের উদ্দেশ্যে স্তন ক্যান্সার বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ বার্তা ও তথ্য প্রচার করা হবে, যা ঘরে বসে খেলা দেখা লক্ষ লক্ষ মানুষের কাছে পৌঁছে যাবে। এর চাইতেও গুরুত্বপূর্ণ হলো, পিসিবি এবং পিংক রিবন পাকিস্তানের যৌথ উদ্যোগে সেদিন লাহোরের কালমা চকে অবস্থিত পিংক রিবন ব্রেস্ট ক্যান্সার ট্রাস্ট হাসপাতালে বিনা মূল্যে স্তন ক্যান্সার পরীক্ষা ও স্ক্রিনিংয়ের ব্যবস্থা করা হবে। এই পদক্ষেপ সচেতনতার পাশাপাশি সাধারণ মানুষকে রোগ নির্ণয় ও প্রতিরোধের একটি বাস্তব সুযোগ করে দেবে, যা এই মহৎ উদ্যোগকে আরও ফলপ্রসূ করে তুলবে। এই ব্যতিক্রমী পদক্ষেপ কেবল পাকিস্তানের ক্রিকেটে এক নতুন অধ্যায় যুক্ত করবে না, বরং একটি গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যা মোকাবেলায় সমাজের প্রতি তাদের দায়বদ্ধতাকেও দৃঢ়ভাবে তুলে ধরবে।

    Recent Articles

    Related Stories

    Leave A Reply

    Please enter your comment!
    Please enter your name here