More

    বিএনপি ক্ষমতায় এলে সুন্দরীরা রাস্তায় বের হতে পারবে না: ফয়জুল করিম

    ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের নায়েবে আমির মুফতি মুহাম্মদ ফয়জুল করিম সম্প্রতি বরিশালে আয়োজিত এক গণসমাবেশে বিএনপিকে ক্ষমতাচ্যুত করে দেশে অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টির আশঙ্কার কথা ব্যক্ত করে রাজনৈতিক অঙ্গনে তীব্র আলোচনার জন্ম দিয়েছেন। তিনি দৃঢ়তার সাথে মন্তব্য করেছেন যে, যদি বিএনপি ক্ষমতায় আসে, তবে দেশের সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা চরমভাবে ব্যাহত হবে এবং জনজীবনে নিরাপত্তা ও স্বস্তি বলে কিছু থাকবে না।

    অরাজকতার আশঙ্কা ও জনগণের প্রতি ইসলামী আন্দোলনের আহ্বান

    মুফতি মুহাম্মদ ফয়জুল করিম তার বক্তব্যে বিএনপির ক্ষমতা গ্রহণকে কেন্দ্র করে সম্ভাব্য অরাজকতার একটি ভয়াবহ চিত্র তুলে ধরেছেন। তিনি সতর্ক করে বলেন, “বিএনপি যদি ক্ষমতায় যায়, তবে মানুষ শান্তিতে ঘুমাতে পারবে না, ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালনা করা অসম্ভব হয়ে পড়বে এবং আমাদের মা-বোনেরা, এমনকি সুন্দরী নারীরাও রাস্তায় নির্ভয়ে বের হতে পারবে না।” জনগণের প্রতি সরাসরি প্রশ্ন ছুড়ে দিয়ে তিনি বলেন, “আর কতকাল আপনারা চাঁদাবাজ, জুলুমকারী ও অত্যাচারীদের এমন কার্যকলাপ সহ্য করবেন? এখন সময় এসেছে সচেতন হওয়ার এবং পরিবর্তনের সপক্ষে দৃঢ় অবস্থান নেওয়ার।” তার এই বক্তব্য সমাজে বিদ্যমান অপরাধপ্রবণতা ও রাজনৈতিক অস্থিরতা নিয়ে গভীর উদ্বেগের প্রতিফলন ঘটায়।

    গণসমাবেশের প্রেক্ষাপট ও মূল দাবি

    ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ কর্তৃক আয়োজিত এই গুরুত্বপূর্ণ গণসমাবেশটি গত রোববার (২৬ অক্টোবর) বরিশালের বাকেরগঞ্জ সরকারি কলেজ মাঠে অনুষ্ঠিত হয়। এই সমাবেশের মূল উদ্দেশ্য ছিল দেশের ভবিষ্যৎ শাসনতান্ত্রিক কাঠামো এবং নির্বাচনী পদ্ধতির উপর সুনির্দিষ্ট তিনটি দাবিতে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করা। দাবিগুলো হলো: ‘প্রয়োজনীয় রাষ্ট্র সংস্কার’, ‘জুলাই সনদ বাস্তবায়ন’ এবং ‘সংখ্যানুপাতিক (পিআর) পদ্ধতিতে জাতীয় নির্বাচন’। এই দাবিগুলো বর্তমান রাজনৈতিক ব্যবস্থায় জনগণের আকাঙ্ক্ষা এবং গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার প্রয়োজনীয়তাকে তুলে ধরে।

    প্রধান দুই রাজনৈতিক দলের কঠোর সমালোচনা

    মুফতি ফয়জুল করিম তার জ্বালাময়ী ভাষণে দেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক দল, বিএনপি ও আওয়ামী লীগ, উভয়েরই কঠোর সমালোচনা করেন। তিনি উল্লেখ করেন, “যে চাঁদাবাজির অভিযোগে একসময় মানুষ আওয়ামী লীগকে ক্ষমতা থেকে সরিয়েছিল, সেই চাঁদাবাজি আজও শুধু বিদ্যমানই নয়, বরং আরও ব্যাপক আকার ধারণ করেছে। একইভাবে, ধর্ষণ ও দখলদারির মতো জঘন্য অপরাধগুলো কমেনি, বরং পূর্বের চেয়ে বৃদ্ধি পেয়েছে, যা জাতির জন্য অত্যন্ত লজ্জাজনক।”

    তিনি আরও উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, “বর্তমান সরকারের (আওয়ামী লীগ) আমলে বিএনপির অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণে প্রকাশ্যে যত হত্যাকাণ্ড ঘটেছে, অতীতে আওয়ামী লীগের শাসনামলে এতটা হয়নি।” তার মতে, যারা এই ধরনের সহিংসতা ও অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের সাথে জড়িত, তারা যদি আবারো ক্ষমতায় আসে, তবে খুন, ধর্ষণ ও চাঁদাবাজির মতো অপরাধগুলো সমাজে আরও চরম আকার ধারণ করবে, যা দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উপর মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

    অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ও বৈষম্য দূরীকরণের আহ্বান

    ইসলামী আন্দোলনের এই শীর্ষ নেতা একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দেন এবং সরকারকে হুঁশিয়ারি দেন যে, যদি সংখ্যানুপাতিক (পিআর) পদ্ধতি গ্রহণ করা না হয় এবং মুক্তিযুদ্ধের সময়কার গণহত্যার বিচার নিশ্চিত করা না হয়, তাহলে সরকার কখনোই জনগণের পূর্ণ আস্থা অর্জন করতে পারবে না। তিনি বৈষম্য দূরীকরণের আশাবাদ ব্যক্ত করে দুঃখ প্রকাশ করেন, “আমরা ভেবেছিলাম সমাজে বিদ্যমান বৈষম্যের অবসান হবে, কিন্তু সংখ্যালঘু সম্প্রদায় এখনও তাদের ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত এবং অবিচারের শিকার।” তিনি আরও যোগ করেন যে, ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা লাভের পর থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত যত সরকার দেশ শাসন করেছে, তাদের কেউই সমাজে বিরাজমান এই গভীর বৈষম্যকে সম্পূর্ণভাবে ঘোচাতে পারেনি, যা একটি স্বাধীন ও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে আমাদের জন্য একটি বড় ব্যর্থতা

    ইসলামী আন্দোলন উপজেলা পশ্চিম শাখার সভাপতি আলহাজ মাওলানা নাছির উদ্দিন রোকন ডাকুয়ার সভাপতিত্বে এই গুরুত্বপূর্ণ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে দেশের বর্তমান রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিস্থিতি নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করা হয় এবং একটি ন্যায়ভিত্তিক, বৈষম্যহীন ও জনমুখী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য সুনির্দিষ্ট সংস্কারের দাবি জানানো হয়।

    Recent Articles

    Related Stories

    Leave A Reply

    Please enter your comment!
    Please enter your name here