More

    মনোনয়নপ্রত্যাশীদের যে বার্তা দিলেন তারেক রহমান

    আসন্ন ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে দেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) তাদের নির্বাচনী প্রস্তুতিকে শাণিত করতে শুরু করেছে। এরই অংশ হিসেবে, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ‘ধানের শীষ’ প্রতীকের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সঙ্গে এক গুরুত্বপূর্ণ মতবিনিময় সভা করেছেন। এই উদ্যোগ দলের অভ্যন্তরে ঐক্য ও শৃঙ্খলার বার্তা পৌঁছে দেওয়ার পাশাপাশি ভবিষ্যতের নির্বাচনী কৌশল নির্ধারণে বিশেষ ভূমিকা রাখবে বলে মনে করা হচ্ছে।

    মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সঙ্গে তারেক রহমানের গুরুত্বপূর্ণ মতবিনিময়

    গত রোববার, ২৬ অক্টোবর, দিনব্যাপী রাজধানীর গুলশানে অবস্থিত বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এই মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। বিকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলা এই বৈঠকে প্রায় সাড়ে তিন শতাধিক মনোনয়নপ্রত্যাশী অংশ নেন। দেশের পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ সাংগঠনিক বিভাগের ভবিষ্যৎ সম্ভাব্য প্রার্থীদের সঙ্গে সরাসরি কথা বলেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। এটি দলের পক্ষ থেকে একটি স্পষ্ট বার্তা যে, আসন্ন নির্বাচনের প্রাক্কালে সকল স্তরের নেতাকর্মীদের মধ্যে একটি সুসংহত বোঝাপড়া তৈরি করা অপরিহার্য।

    প্রথম দফায়, চট্টগ্রামরংপুর বিভাগের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সঙ্গে আলোচনা শুরু হয় বিকাল ৪টা থেকে। এরপর পর্যায়ক্রমে ময়মনসিংহ, ফরিদপুর এবং কুমিল্লা বিভাগের সম্ভাব্য প্রার্থীরা তারেক রহমানের সঙ্গে মতবিনিময়ের সুযোগ পান। এই আয়োজনে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মীর উপস্থিতি দলের তৃণমূলের সক্রিয়তা এবং আসন্ন নির্বাচনকে ঘিরে তাদের আগ্রহের বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছে।

    ঐক্য ও শৃঙ্খলার বার্তা: তারেক রহমানের নির্দেশনা

    মতবিনিময়কালে তারেক রহমান মনোনয়নপ্রত্যাশীদের উদ্দেশে অত্যন্ত দৃঢ় ও স্পষ্ট ভাষায় দিকনির্দেশনা প্রদান করেন। তিনি দলীয় ঐক্যের ওপর সর্বোচ্চ গুরুত্বারোপ করে বলেন, “আসন্ন নির্বাচনে দল যাকে মনোনয়ন দেবে, তার পক্ষেই সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে।” তিনি আরও যোগ করেন, “যারা প্রকৃত বিএনপি কর্মী, তারা কখনোই দলের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করবেন না বা দলকে ভাঙার চেষ্টা করবেন না।” ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের এই বার্তা দলীয় শৃঙ্খলা বজায় রাখা এবং মনোনয়নকে কেন্দ্র করে যেকোনো ধরনের অভ্যন্তরীণ কোন্দল বা বিদ্রোহ প্রতিরোধের ক্ষেত্রে একটি শক্তিশালী সতর্কবার্তা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। উপস্থিত মনোনয়নপ্রত্যাশীরা নীরব ও শ্রদ্ধাশীল ভঙ্গিতে তারেক রহমান এবং অন্যান্য জ্যেষ্ঠ নেতাদের বক্তব্য শোনেন। সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, এই বৈঠকে মনোনয়নপ্রত্যাশীদের নিজেদের বক্তব্য উপস্থাপনের কোনো সুযোগ ছিল না, যা কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তের প্রতি তাদের সম্পূর্ণ আনুগত্যের ইঙ্গিত দেয়।

    কেন্দ্রীয় নেতাদের উপস্থিতি ও হুঁশিয়ারি

    এই গুরুত্বপূর্ণ মতবিনিময় সভায় তারেক রহমান ছাড়াও বিএনপির শীর্ষস্থানীয় নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন—দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী এবং সালাহউদ্দিন আহমদ। এছাড়াও, সংশ্লিষ্ট সাংগঠনিক বিভাগের সাংগঠনিক ও সহ-সাংগঠনিক সম্পাদকগণ উপস্থিত থেকে সভাটিকে আরও সমৃদ্ধ করেন।

    সূত্রমতে, মতবিনিময়ের শুরুতেই বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এবং স্থায়ী কমিটির সদস্যরা নিজেদের বক্তব্য উপস্থাপন করেন। তারা অত্যন্ত কড়া ভাষায় হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে দলের সকল স্তরের নেতাকর্মীকে আসন্ন নির্বাচনকে সামনে রেখে দলীয় শৃঙ্খলা ও ঐক্য বজায় রাখার ওপর বিশেষ জোর দেন। এই হুঁশিয়ারি মনোনয়নপ্রত্যাশীদের মধ্যে একতাবদ্ধতার প্রয়োজনীয়তাকে আরও প্রকট করে তুলেছে।

    পরবর্তী দিনের কার্যক্রম

    বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান নিশ্চিত করেছেন যে, ধারাবাহিক এই মতবিনিময় প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকবে। আগামী সোমবার, ২৭ অক্টোবর, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান অবশিষ্ট গুরুত্বপূর্ণ পাঁচটি সাংগঠনিক বিভাগের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সঙ্গে বৈঠকে মিলিত হবেন। এদিন রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল, সিলেট এবং ঢাকা বিভাগের সম্ভাব্য প্রার্থীরা দলীয় প্রধানের সঙ্গে মতবিনিময়ের সুযোগ পাবেন। এই ধারাবাহিক আলোচনা বিএনপির নির্বাচনী প্রস্তুতির একটি অপরিহার্য অংশ, যা দলের সামগ্রিক কৌশল ও সাংগঠনিক দৃঢ়তাকে আরও সুসংহত করবে বলে আশা করা হচ্ছে।

    Recent Articles

    Related Stories

    Leave A Reply

    Please enter your comment!
    Please enter your name here