দেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে আলোড়ন সৃষ্টিকারী একটি আইনি প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ)-এর সভাপতি হাসানুল হক ইনু এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ সহ মোট পাঁচজনের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠনের বিষয়ে আগামী ২ নভেম্বর গুরুত্বপূর্ণ আদেশ দেওয়া হবে। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত বিতর্কিত ঘটনাবলীতে তাঁদের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ উঠেছে, যা দেশের বিচারিক এবং রাজনৈতিক মহলে গভীর মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে।
গুরুত্বপূর্ণ বিচারিক কার্যক্রম ও ট্রাইব্যুনালের ভূমিকা
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২, যার নেতৃত্বে রয়েছেন বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরী এবং যার অন্য দুই সম্মানিত সদস্য হলেন বিচারক মো. মঞ্জুরুল বাছিদ ও বিচারক নূর মোহাম্মদ শাহরিয়ার কবীর, আজ মঙ্গলবার এই আদেশ ঘোষণা করেন। এই ট্রাইব্যুনাল মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার পরিচালনায় দেশের অন্যতম প্রধান বিচারিক সংস্থা হিসেবে পরিচিত। তাদের এই সিদ্ধান্ত একটি দীর্ঘ এবং জটিল আইনি প্রক্রিয়ার পরবর্তী ধাপকে নির্দেশ করে, যেখানে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগের সত্যতা যাচাই করা হবে এবং বিচারিক কার্যক্রমের গতিপথ নির্ধারণ করা হবে।
ইনুর বিরুদ্ধে মামলার বিস্তারিত
জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু একটি একক মামলার একমাত্র আসামি হিসেবে অভিযুক্ত হয়েছেন। তাঁর বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগগুলি জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের প্রেক্ষাপটে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের সঙ্গে জড়িত। আজকের ট্রাইব্যুনালের শুনানিতে, ইনুর পক্ষে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মনসুরুল হক চৌধুরী তাঁর মক্কেলকে এই মামলা থেকে অব্যাহতি প্রদানের জন্য আবেদন জানান। এর পূর্বে, গত ২৩ অক্টোবর, রাষ্ট্রপক্ষ (প্রসিকিউশন) ইনুর বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠনের জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেছিল। উভয় পক্ষের এই আবেদনগুলি পর্যালোচনা করে, ইনুর বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হবে কিনা, সেই বিষয়ে ২ নভেম্বর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত ঘোষণা করা হবে। এই শুনানিতে হাসানুল হক ইনু সশরীরে ট্রাইব্যুনালে উপস্থিত ছিলেন।
মাহবুব উল আলম হানিফ ও অন্যদের মামলা
একই দিন, অর্থাৎ ২ নভেম্বর, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ সহ আরও চারজনের বিরুদ্ধে জুলাই গণ-অভ্যুত্থান চলাকালীন সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের আরেকটি মামলায় আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠনের আদেশ দেওয়া হবে। এই মামলায় মাহবুব উল আলম হানিফ ছাড়াও অন্য অভিযুক্তরা হলেন: কুষ্টিয়া জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান সদর উদ্দিন খান, কুষ্টিয়া জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আসগর আলী এবং কুষ্টিয়া পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আতাউর রহমান। উল্লেখ্য, এই চারজন আসামি বর্তমানে পলাতক রয়েছেন।
পলাতক আসামিদের পক্ষে রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী মো. আমির হোসেন তাঁদেরকে এই মামলা থেকে অব্যাহতির জন্য আবেদন করেছেন। এর আগে গত সোমবার, রাষ্ট্রপক্ষ (প্রসিকিউশন) মাহবুব উল আলম হানিফ সহ এই চার আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের আবেদন করেছিল। এই মামলার গুরুত্বও অপরিসীম, কারণ এটি দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিমণ্ডলের প্রভাবশালী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে উত্থাপিত গুরুতর অভিযোগগুলির একটি।
বিচারিক প্রক্রিয়ার গুরুত্ব ও ভবিষ্যৎ
মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারিক প্রক্রিয়ায় অভিযোগ গঠন একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। এই ধাপে ট্রাইব্যুনাল সিদ্ধান্ত নেন যে, অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগগুলি প্রাথমিকভাবে কতটা শক্তিশালী এবং সেগুলোর ভিত্তিতে তাঁদের বিচারিক কার্যক্রম শুরু করা উচিত কিনা। যদি অভিযোগ গঠন করা হয়, তবে আসামিদের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিকভাবে বিচার শুরু হবে এবং সাক্ষ্য-প্রমাণ উপস্থাপনের মাধ্যমে অভিযোগগুলির সত্যতা যাচাই করা হবে। আর যদি অভিযোগ গঠন না করা হয়, তবে আসামিরা অভিযোগ থেকে মুক্তি পাবেন। ২ নভেম্বরের এই আদেশটি দেশের বিচারিক ইতিহাসে একটি তাৎপর্যপূর্ণ মুহূর্ত হিসেবে বিবেচিত হতে যাচ্ছে, যা দীর্ঘ প্রতীক্ষিত এই মামলাগুলির ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবে এবং ন্যায়বিচারের প্রত্যাশাকে আরও সুসংহত করবে বলে আশা করা হচ্ছে।
