দেশের সংবিধান সংস্কারের দীর্ঘ প্রতীক্ষিত প্রক্রিয়া বাস্তবায়নে একটি সুনির্দিষ্ট রূপরেখা নিয়ে হাজির হচ্ছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। সংশ্লিষ্ট সূত্রের খবর অনুযায়ী, ‘জুলাই জাতীয় সনদ (সংবিধান সংস্কার) বাস্তবায়ন আদেশ’ জারি করার মাধ্যমে এই গুরুত্বপূর্ণ সাংবিধানিক পরিবর্তনের সূচনা হবে। এর ধারাবাহিকতায়, প্রস্তাবিত সংস্কারগুলোর প্রতি জনগণের সরাসরি সম্মতি আদায়ের জন্য একটি দেশব্যাপী গণভোটের আয়োজন করা হবে।
সংসদের ভূমিকা ও সময়সীমা
প্রস্তাবনা অনুযায়ী, আসন্ন সংসদ তার নিয়মিত আইন প্রণয়ন ও অন্যান্য দাপ্তরিক কার্যক্রমের পাশাপাশি প্রথম ২৭০ দিন (প্রায় নয় মাস) একটি সংবিধান সংস্কার পরিষদ হিসেবে কাজ করবে। এই নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই গণভোটে অনুমোদিত সংবিধান সংশোধনী প্রস্তাবগুলো চূড়ান্তভাবে সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করার কাজটি সম্পন্ন করা হবে। জাতীয় ঐকমত্য কমিশন এই বিস্তারিত কর্মপদ্ধতি আজ, মঙ্গলবার দুপুরে আনুষ্ঠানিকভাবে অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে সুপারিশ হিসেবে জমা দিতে যাচ্ছে।
বিকল্প বাস্তবায়ন পদ্ধতির সুপারিশ
ঐকমত্য কমিশন তাদের সুপারিশমালায় একটি বিকল্প বাস্তবায়ন পদ্ধতিও অন্তর্ভুক্ত করছে। এই বিকল্পটি মূলত এমন একটি পরিস্থিতি মোকাবিলায় ডিজাইন করা হয়েছে, যেখানে সংসদ নির্ধারিত ২৭০ দিনের মধ্যে সংস্কার প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়নে ব্যর্থ হয়। গতকাল সোমবার পর্যন্ত এই বিকল্প পদ্ধতির সুনির্দিষ্ট রূপरेखा প্রকাশ্যে না এলেও, কমিশনের একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে যে আলোচনায় একটি সম্ভাব্য বিকল্প হিসেবে সরকারের পক্ষ থেকে সংবিধান-সংক্রান্ত প্রস্তাবগুলোকে খসড়া বিল (সংবিধান সংশোধনী আইনের খসড়া) আকারে তৈরি করার বিষয়টি বিবেচিত হয়েছে।
এই খসড়া বিলগুলো পরবর্তীতে সরাসরি গণভোটে উপস্থাপন করা হবে। যদি গণভোটে এসব বিল অনুমোদন লাভ করে, তবে সংবিধান সংস্কার পরিষদ মূল ভাব অক্ষুণ্ণ রেখে প্রস্তাবগুলো চূড়ান্তভাবে অনুমোদন করবে। তবে, যদি আগামী সংসদ সংবিধান সংস্কার পরিষদ হিসেবে নির্ধারিত ২৭০ দিনের মধ্যে এই প্রস্তাবগুলো অনুমোদন করতে ব্যর্থ হয়, তাহলে সেগুলো স্বয়ংক্রিয়ভাবে দেশের সংবিধানে সংযুক্ত হয়ে যাবে।
সুপারিশ জমা প্রদানে বিলম্বের কারণ
সংশ্লিষ্ট সূত্র আরও জানিয়েছে, প্রাথমিকভাবে গতকালই (সোমবার) সনদ বাস্তবায়নের উপায় নিয়ে সুপারিশের খসড়া সরকারের কাছে জমা দেওয়ার পরিকল্পনা ছিল কমিশনের। তবে, কমিশনের সদস্যরা মনে করেন যে চূড়ান্ত সুপারিশ জমা দেওয়ার আগে প্রধান উপদেষ্টা, যিনি কমিশনের প্রধান, তার সাথে একটি আনুষ্ঠানিক বৈঠক করা অত্যন্ত জরুরি। এই আলোচনা ও পরামর্শের পর কমিশন তাদের পূর্ণাঙ্গ সুপারিশমালা পেশ করবে বলে আশা করা হচ্ছে, যা দেশের ভবিষ্যৎ সাংবিধানিক কাঠামো নির্ধারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হিসেবে বিবেচিত হবে।
