More

    এসবই নির্বাচন পেছানোর ষড়যন্ত্র: মির্জা ফখরুল

    জাতীয় রাজনীতির বর্তমান প্রেক্ষাপটে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের আবশ্যকতাকে দেশের সমস্ত সংকটের মূল কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বৃহস্পতিবার দুপুরে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের প্রণীত সুপারিশমালার ওপর প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে তিনি দৃঢ়তার সঙ্গে উল্লেখ করেন যে, দেশের চলমান অস্থিরতা ও চ্যালেঞ্জগুলোর মূলে রয়েছে একটি প্রকৃত ও অর্থবহ নির্বাচনের অভাব। তাঁর মতে, এমন একটি নির্বাচনের মাধ্যমেই জনগণের সত্যিকারের প্রতিনিধিত্বশীল একটি সংসদ গঠিত হতে পারে, যা পরবর্তীতে দেশের প্রয়োজনীয় সংস্কারগুলোকে সাংবিধানিক কাঠামোর মধ্যে নিয়ে এসে একটি স্থিতিশীল ও জনমুখী শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করবে।

    গণতান্ত্রিক সংকট ও নির্বাচনের অপরিহার্যতা

    বিএনপি মহাসচিব তাঁর বক্তব্যে বারবার একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের গুরুত্বের ওপর জোর দিয়েছেন। তিনি বলেন, “আমরা একটি কথা খুব পরিষ্কারভাবে বলতে চাই, আমাদের মতে, সব সংকটগুলোর মূলেই যে বিষয়টি আছে, তা হলো একটি সত্যিকার অর্থে গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের অনুপস্থিতি।” এই বক্তব্য কেবল একটি রাজনৈতিক দাবি নয়, বরং দেশের সামগ্রিক অগ্রগতি ও স্থিতিশীলতার জন্য একটি পূর্বশর্ত হিসেবে উপস্থাপিত হয়েছে। তিনি বিশ্বাস করেন, একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের মধ্য দিয়ে যে জন-প্রতিনিধিত্বশীল পার্লামেন্ট গঠিত হবে, সেটিই দেশের সাংবিধানিক কাঠামোতে প্রয়োজনীয় সংস্কারগুলোকে অন্তর্ভুক্ত করার এখতিয়ার পাবে এবং এর মাধ্যমেই দেশ একটি সুনির্দিষ্ট ও জনকল্যাণমুখী পথে পরিচালিত হতে পারবে। এই প্রক্রিয়া, তাঁর মতে, দেশের দীর্ঘমেয়াদী গণতান্ত্রিক বিকাশ ও সুশাসনের জন্য অপরিহার্য।

    নির্বাচনী বিলম্বের ভয়াবহ পরিণতি

    মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর স্মরণ করিয়ে দেন যে, ৫ই আগস্টের রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের ঠিক পরেই বিএনপি একটি দ্রুত নির্বাচনের দাবি তুলেছিল। সে সময় অনেক মহল থেকে এই বলে সমালোচনা করা হয়েছিল যে, বিএনপি ক্ষমতার লোভে তড়িঘড়ি নির্বাচন চাইছে। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতি সেই অভিযোগকে অমূলক প্রমাণ করেছে বলে তিনি দাবি করেন। তিনি বলেন, “আজকে প্রমাণিত হচ্ছে যে, এই নির্বাচনটা যত দেরি হচ্ছে, তত বেশি সেই ফ্যাসিবাদী শক্তিগুলো শক্তিশালী হচ্ছে, যারা বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল দেখতে চায়, এখানে একটা নৈরাজ্য তৈরি করতে চায়, এখানে একটা গণতন্ত্র যেন সত্যিকার অর্থে প্রতিষ্ঠিত না হয় সেই ব্যবস্থাটা দেখতে চায়।” এই বক্তব্য থেকে স্পষ্ট বোঝা যায় যে, নির্বাচনী প্রক্রিয়া দীর্ঘায়িত হওয়াকে তিনি দেশের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য একটি গুরুতর হুমকি এবং অন্তর্ঘাতমূলক কার্যকলাপের জন্মদাতা হিসেবে দেখছেন। তাঁর ভাষায়, এই বিলম্ব কেবল ক্ষমতা কুক্ষিগত করার পথই প্রশস্ত করে না, বরং গণতন্ত্রের মূল কাঠামোকেই দুর্বল করে দেয় এবং চরম অস্থিতিশীলতার দিকে ঠেলে দেয়।

    সংস্কার প্রসঙ্গে বিএনপির অবস্থান: একটি ভুল ধারণার অপনোদন

    সংস্কার প্রসঙ্গে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অত্যন্ত জোরালোভাবে একটি প্রচলিত ভুল ধারণার অবসান ঘটাতে চেয়েছেন। তিনি বলেন, “৩১ দফা দিয়ে আমরা সব রাজনৈতিক দলগুলো এই ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলনটা করেছি, সেখানে সংস্কারের কথাই রয়েছে।” তিনি আরও বলেন, “বিএনপির জন্মই সংস্কারের মধ্য দিয়ে। কিন্তু অত্যন্ত সচেতনভাবে একটা প্রচারণা চালানো হলো বিএনপি সংস্কার বিরোধী… এটা মিথ্যা প্রচারণা।” এই মন্তব্য বিএনপির মূল আদর্শিক ভিত্তি এবং বর্তমান রাজনৈতিক কর্মসূচির সঙ্গে সংস্কারের অবিচ্ছেদ্য সম্পর্ককে তুলে ধরে। মির্জা ফখরুল দৃঢ়ভাবে বলেন যে, যে দলটি নিজেই সংস্কারের মধ্য দিয়ে জন্মলাভ করেছে, সেটি কখনোই সংস্কার বিরোধী হতে পারে না। তাঁর এই যুক্তির সবচেয়ে বড় প্রমাণ হিসেবে তিনি উল্লেখ করেন জোনায়েদ সাকি সাহেবের বক্তব্য, যিনি বলেছেন যে, এসব সংস্কার নিয়ে বিএনপি অনেক আগেই কাজ শুরু করেছে। এটি প্রমাণ করে যে, সংস্কার কেবল একটি চলমান প্রক্রিয়া নয়, বরং বিএনপির রাজনৈতিক দর্শনের একটি মৌলিক অংশ।

    গণতান্ত্রিক যাত্রায় ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট ও ভবিষ্যৎ পথ

    মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বাংলাদেশের স্বাধীনতার পরবর্তী সময়ের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটকেও তাঁর বক্তব্যে প্রাসঙ্গিকভাবে টেনে এনেছেন। যদিও মূল সংবাদে তাঁর শেষ বাক্যটি অসম্পূর্ণ ছিল, তবে তাঁর সামগ্রিক বক্তব্যের সুর থেকে এটি স্পষ্ট যে, তিনি একাত্তর সালের মুক্তিযুদ্ধের পরের পাঁচ বছরের মতো একটি ভয়াবহ পরিস্থিতির পুনরাবৃত্তির আশঙ্কা করছেন, যেখানে গণতন্ত্রের স্বাভাবিক ধারা ব্যাহত হয়েছিল এবং জাতি নতুন চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়েছিল। তাঁর এই ইঙ্গিত বর্তমান সময়ের সাথে অতীতের গণতান্ত্রিক সংগ্রামের একটি সংযোগ স্থাপন করে এবং দেশের ভবিষ্যতের জন্য একটি সঠিক ও জনমুখী পথ বেছে নেওয়ার প্রয়োজনীয়তাকে আরও জোরালো করে তোলে। এই ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট স্মরণ করিয়ে দিয়ে তিনি মূলত দেশের গণতান্ত্রিক অভিযাত্রায় একটি স্থায়ী ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনী ব্যবস্থার গুরুত্ব এবং সংস্কারের মাধ্যমে একটি স্থিতিশীল ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছেন।

    Recent Articles

    Related Stories

    Leave A Reply

    Please enter your comment!
    Please enter your name here